ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

হত‌্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসা‌মি গ্রেপ্তার

  নিজস্ব প্রতি‌বেদক

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৪৬

হত‌্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসা‌মি গ্রেপ্তার
আসামি মিলন সিকদার ওর‌ফে চাপা মিলন। ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব শক্রতার জেরে রাজধানীর কোতোয়ালির নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিনের পলাতক আসামি মিলন সিকদার ওর‌ফে চাপা মিলনকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থে‌কে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩।

শ‌নিবার গভীর রাতে অ‌ভিযান চা‌লি‌য়ে তা‌কে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-৩ এক সংবাদ বিজ্ঞ‌প্তি‌তে জা‌নি‌য়ে‌ছে, ‌জিজ্ঞাসাবা‌দে মিলন জা‌নি‌য়ে‌ছেন, ভিকটিম রজব আলী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ভিকটিমদের বাসা ছিল লালচাঁন মোকাল্লেম পাড়ায় এবং মিলনের বাসা ছিল যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায়।

তারা পরস্পর বন্ধু হলেও এলাকা ভিত্তিক উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে গ্রুপিং ছিল। ভিকটিম এবং ধৃত মিলন দুজনেই মাদকাসক্ত ছি‌লেন। তারা পাড়ার বন্ধুদের সাথে দল বেধে মাদক সেবন করতেন।

একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন ভিকটিম রজব আলী তাদের মাদক সেবনের সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে। জামানতের টাকা পরিশোধ না করেই তারা ভিকটিমের কা‌ছে জামানত দেয়া মোবাইলটি দাবি করে।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে রায় সাহেব পাড়া এলাকার ছেলেরা হদ‌্যা মামলার মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি ও র‌্যাব-৩ এর হা‌তে আ‌গে গ্রেপ্তার জিকুর নেতৃত্বে মিলনসহ রহিম ওরফে আরিফ, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করেন।

২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে মোবাইলের দোকানে ভিকটিম রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও ৪/৫ জন ভিকটিম রজব আলীকে ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে ১৬/এ কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা গ্রেপ্তার মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে ভিকটিম রজব আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ওই সময় রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়।

রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা প্রথমে নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঐ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০১২ সালে ৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়। বিজ্ঞ আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর ২০১৯ সা‌লের ১ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদণ্ড এবং মিলনসহ ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার মিলন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গাজীপুরে আত্মগোপনে চলে যায়। সেখানে ১ মাস অবস্থান করে স্থান পরিবর্তন করে রাঙামাটিতে ১৫ দিন, বরিশালে ১ মাস এবং প‌রে ঢাকায় আসলে সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হা‌তে গ্রেপ্তার হয়ে ৪ বছর জেল খেটে ২০১৫ সালে জামিনে বের হন। জামিনে বের হয়ে সে বেশভ‚ষা পরিবর্তন করে আবার পলাতক জীবনযাপন শুরু করে। পলাতক থাকা অবস্থায় সে রাজধানীর বিভিন্ন বাসে হেলপারি করে জীবিকা নির্বাহ করত।

২০১৬ সালে নিজে গাড়ী চালনা শিখে বাসচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। ব্যক্তিগত জীবনে সে বিবাহিত এবং তার একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ঢাকা হতে কুয়াকাটার আন্তঃজেলা বাস চালানোর সুবাদে সে তার পরিবার নিয়ে বর্তমানে কুয়াকাটার মহীপুরে একটি ভাড়া বাসায় নকল নাম পরিচয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গ্রেপ্তার আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত