ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

চট্টগ্রামেও বাড়ছে ডেঙ্গু, মে মাসেই আক্রান্ত ৫৩

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ১০:৪৬

চট্টগ্রামেও বাড়ছে ডেঙ্গু, মে মাসেই আক্রান্ত ৫৩
ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় জুলাই থেকে ডিসেম্বরে। কিন্তু এবছর অনেকটা আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকায়। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

রাজধানী ঢাকা ও কক্সবাজার নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করলেও পিছিয়ে নেই চট্টগ্রামও। তুলনামূলক কম হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে এ অঞ্চলে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে আক্রান্ত হওয়া ১৬৭ জনের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ৭৭ জনের। পরে তিন মাস ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং এপ্রিল মাসে শনাক্ত হার কমে আসে।

এ তিন মাসে যথাক্রমে আক্রান্ত হয় ২২, ১২ এবং ১৮ জন। তবে সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে আবার উর্ধ্বমুখী ডেঙ্গু আক্রান্তের হার। গত মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ জন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। তিনজনই মৃত্যু বরণ করেছেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, গত ৫ মাসে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার চেয়ে নগরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। শুধু নগরেই আক্রান্ত হয়েছে ১১৯ জন। বিপরীতে ১৫ উপজেলা আক্রন্ত হয়েছেন ৬৩ জন।

উপজেলাগুলোর মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলায় ৫ জন, বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় ৪ জন করে, কর্ণফুলি ও রাউজান উপজেলায় ৩ জন, মীরসরাই, সন্দ্বীপ, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, পটিয়া, লোহাগড়া উপজেলায় ২ জন করে এবং চন্দনাইশ, বোয়ালখালীতে ১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত পাওয়া গেছে। তবে ফটিকছড়ি উপজেলায় এ রোগে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।

সিভিল সার্জন অফিসের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিবছরই চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালে চট্টগ্রামে রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭ জন, ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭১ জনে, ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ৫,৪৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। কিন্তু এবার পুরোদমে বর্ষা না নামতেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগও।

থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেন, কিছুদিন বেশ গরম পড়লেও ঘুর্ণিঝড়ের পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। আর থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন পাত্রে (জায়গায়) পানি জমে মশার লার্ভার সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে এডিশ মশার প্রজনন (বংশ বিস্তার) ঘটছে। মূলত এ কারণেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে মশার লার্ভা ধ্বংস করা, এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। মোটকথা মশক নিধন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। আর মশা নিধনের এ কাজ স্বাস্থ্য বিভাগের নয়। সিটি করপোরেশনের বিষয়টি দেখবে। স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী বলেন, বর্তমানে মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত আছে। নগরীর অলি-গলি ও আবাসিক এলাকায় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বর্তমানে মশা নিধনের ওষুধ হিসেবে ৪০ লিটার মাসকুবার এবং দুই হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড মজুত আছে। আরও ১৮ হাজার লিটার ওষুধ কেনার জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার লিটার মশা ধ্বংসকারী অ্যাডাল্টিসাইড এবং লার্ভা ধ্বংসকারী তিন হাজার লিটার লার্ভিসাইড থাকবে।

মে মাসে সবমিলিয়ে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও ডেঙ্গুর চিকিৎসায় সার্বিক ভাবে প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।

তিনি বলেন, আক্রান্ত রোগীদের মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে এবং শিশুদের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হয়। রোগী বাড়লে মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্ণার স্থাপন করা হবে। আমাদের চিকিৎসক–নার্সরা আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। রোগী বাড়লেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত