ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

৩০ লাখে অবৈধ নিয়োগ, এমপিও পেতে আরও

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১৭:২২  
আপডেট :
 ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৩১

৩০ লাখে অবৈধ নিয়োগ, এমপিও পেতে আরও
ছবি নিজস্ব

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও ২০১৫ সালে যোগদান দেখিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর দীর্ঘ ৫ বছরে একদিনের জন্যও স্কুলেও আসেননি তিনি। ২০২০ সালের এমপিও শিটে তার নাম উঠেছে। সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষিকার নাম জান্নাতুল মাওয়া। অন্যদিকে একইভাবে সাইফুল ইসলামের নিয়োগ প্রক্রিয়াও আলাদিনের চেরাগের মতোই ঘটেছে। নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষক বনে গেলেও শিক্ষকতায় যুক্ত হতে দুর্নীতিতে যুক্ত করেছেন নতুন মাত্রা। মানবিক বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পরও তাকে যোগদান দেখানো হয়েছে বাণিজ্য বিভাগে। শেষমেষ এ বছর থেকে সরকারি টাকা (এমপিও) ভোগ করছেন তিনি।

এভাবে দিনকে রাত ও রাতকে দিন করে জান্নাতুল মাওয়া ও সাইফুল ইসলামকে নিয়োগ পেতেই গুণতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। শিক্ষক নিয়োগের এহেন অরাজকতা চলেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বাংলাদেশ জার্নালের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

অভিযোগ আছে, ঘুষের এই ৩০ লাখ টাকার ভাগ নিয়েছেন বিদ্যালয় সভাপতি বিল্লাল গণি, প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম সিদ্দিক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী। দুই শিক্ষককে এমপিও পেতে আরও টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯ জন প্রার্থী আবেদন করলেও এ পরীক্ষায় অংশ নেয় ১০ জন। পরীক্ষায় ফলাফলের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৩৮ নম্বর পেয়ে মো. আলিপনুর রহমান প্রথম নির্বাচিত হয়ে স্কুলে নিয়োগ পান। পরীক্ষায় ৩৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় হন জেসমিন খানম। তাকে বাদ দিয়ে জান্নাতুল মাওয়া ও সাইফুল ইসলামকে নিয়োগ দেয় স্কুল ব্যাবস্থাপনা কমিটি।

জান্নাতুল মাওয়াকে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যোগদান দেখায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই শিক্ষিকা এনটিআরসিএ থেকে যে সনদ দেখিয়েছেন তা ২০১৬ সালের। অথচ ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএর হাতে চলে যায়। ভুয়া নিয়োগপত্র ও এনটিআরসিএর সনদ দেখিয়ে এই শিক্ষক ২০২০ সাল থেকে এমপিও ভোগ করছেন।

এদিকে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত খাসকররা স্কুল কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মো. আরজান আলি। ২০১৫ সালে এ নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালকে তিনি বলেন, তার সময়ে স্কুলে এই দুই শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তারা কিভাবে নিয়োগ পেয়েছেন এ বিষয়টি তিনিও বুঝতে পারেননি বলে জানান।

জানতে চাইলে জান্নাতুল মাওয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন। তিনি কিভাবে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হয়েছেন এ প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

অন্যদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন না করেও মানবিক বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাইফুল ইসলামকে। ২০১৫ সালের ১০ জুলাই তাকে বাণিজ্য বিভাগে যোগদান দেখায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ২০২১ সাল থেকে এমপিও পেতে শুরু করেছেন তিনি। এ বিষয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

স্কুলের একাধিক শিক্ষক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, করোনায় স্কুল বন্ধ হওয়ার আগেও এই দুজন শিক্ষককে ক্লাসও নিতে দেখা যায়নি। এমনকি কিভাবে নিয়োগ পেয়েছেন ও এমপিও হয়েছেন সে বিষয়েও কেউ কিছু জানি না। সম্প্রতি তারা ক্লাস নেয়া শুরু করেছেন। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ ৫ বছর এ দুই শিক্ষককে দেখা যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু নিয়োগ বাণিজ্যে ছাড়াও এই দুই শিক্ষককে এমপিও পেতেও ম্যানেজ করতে হয়েছে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সবশেষে মাউশির খুলনা অঞ্চল। অবৈধ নিয়োগ থেকে এমপিওভুক্তি এসব কাজের মাস্টার মাইন্ড মাউশি খুলনা অঞ্চলের এক কর্মচারী।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আতাউর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এ ঘটনার সময় আমি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলাম না। তবে ঘটনাটি আমি শুনেছি। খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আমি অফিসে আসতে বলেছি কিন্তু তিনি যোগাযোগ করছেন না। আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ আমি শুনেছি তবে কোনো প্রমাণ পাইনি।

প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দেননি। তিনি পরদিন সকালে ফোন করার জন্য অনুরোধ জানান। অভিযোগের বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে মাউশি খুলনা অঞ্চলের উপ পরিচালক এ এস এম আব্দুল খালেক বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান প্রধান জানবে। আমরা যে কাগজ চেয়েছি স্কুল থেকে ওসব কাগজ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই এমপিও দেয়া হয়েছে। স্কুলের কোন শিক্ষকও আমাদেরকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। জানানো হলে এমন ঘটনা ঘটতো না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, শিক্ষকদের এমপিও এখন ঢাকার শিক্ষা ভবন থেকে দেয়া হয় না। এমপিও প্রদান করে বিভাগীয় আঞ্চলিক অফিস। তবে আমরা জেনেছি ইদানিং এ বিষয়ে অঞ্চলগুলোতে দুর্নীতি বেড়েছে। এর জন্য দায়ী উপজেলা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিসও। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে তদন্ত করে দুই শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা ছাড়াও জড়িতদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. বেলাল হোসাইন (বিদ্যালয়) বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমাদের যে বিধি-বিধান তাতে এভাবে শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নিঃসন্দেহে বোঝা যাচ্ছে এখানে দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত