ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

চিকিৎসক সাবিরা হত্যাকাণ্ড, রহস্যের সূত্র মিলছে না

  ফরহাদ উজজামান

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২১, ২১:১৬

চিকিৎসক সাবিরা হত্যাকাণ্ড, রহস্যের সূত্র মিলছে না
নিহত চিকিৎসক সাবিরা। ফাইল ফটো

রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় নিজ বাসায় চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধারের ১৩ দিন পরও অন্ধকারেই থেকে গেছে হত্যার রহস্য। এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ। নানা প্রশ্ন সামনে এলেও মেলেনি কোনো উত্তর।

হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয় ৩৬ ঘণ্টা পর। মামলা হলেও এখনও শনাক্ত হয়নি কোনো আসামি।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মামলাটি তদন্ত করতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাউকে আসামি না করাতে আরো জটিল হয়ে পড়েছে মামলাটি। তাই তদন্তে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

চিকিৎসক সাবিরার ভাই রেজাউল মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ৩০ মে রাত আনুমানিক ১০টা থেকে পরদিন ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যবর্তী সময়ে অজ্ঞাতনামা আসামিরা তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করে ছুরিকাঘাত ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আলামত নষ্ট করতে শরীরে ও বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এ খুনের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে সাবলেটে থাকা কানিজ সুবর্ণা অথবা অন্য কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম রব্বানী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্তে এখনো কিছু পায়নি। কিছু পেলেই আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে।’

এ ঘটনায় ওই ফ্ল্যাটে (সাবলেট) থাকা এক নারী ও তার বন্ধু, বাসার দারোয়ান ও চিকিৎসক সাবিরার গৃহপরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

তবে হত্যার ব্যাপারে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য না পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার প্রয়োজনে অন্য কাউকে ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে রমনা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার এইচএম আজিমুল হক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘মামলাটি সংশ্লিষ্ট থানায় তদন্ত কর্মকর্তার হাতে আছে। এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’

পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, চিকিৎসক সাবিরার বাসায় অপরিচিত কারো যাতায়াত ছিল কি না এসব বিষয়ে তদন্তে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে সাবিরার বাসা ও আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় তদন্তে সময় লাগছে।

চিকিৎসক সাবিরার আত্মীয়-স্বজনরা বলছেন, প্রথম স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন সাবিরা। তবে সেই স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেই আলাদা ছিলেন সাবিরা। পুলিশ বলেছে, স্বামীর অবর্তমানে নিহতের বাসায় কারো যাতায়াত ছিল কিনা সেগুলো তদন্ত করছে।

সাবিরার ভাই রেজাউল যাকে সন্দেহ করছেন সেই কানিজ সুবর্ণা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। এখন তিনি মডেলিংয়ের পাশাপাশি দারাজ অনলাইনে কাজ করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কানিজ সাবিরার ভাড়া বাসায় সাবলেটে উঠেন।

এদিকে চিকিৎসক সাবিরা হত্যার ঘটনায় পুলিশকে আগামী ৮ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম রব্বানীকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

এর আগে গত ৩১ মে দুপুরে কলাবাগানের ৫০/১, ফাস্ট লেনের বাসা থেকে সাবিরার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি ধানমন্ডির গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন।

সে সময় সিআইডি জানায়, হত্যাকাণ্ডটি রোববার (৩০ মে) মধ্যরাতের কোনো এক সময় হয়েছে। তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানার তোশকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি। তবে, সাবিরার শরীরের কিছু অংশ দগ্ধ হয়।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর শেখ রাসেল কবির বলেন, অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে রক্ত ও পোড়ার ক্ষত আছে। তবে আমরা নিশ্চিত এটি হত্যাকাণ্ড।

আরো পড়ুন

কলাবাগানে নিজ বাসায় নারী চিকিৎসকের লাশ

চিকিৎসকের শরীরে জখম, প্রাথমিক ধারণা হত্যা

অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু, নাকি ঠান্ডা মাথার খুন!

অবশেষে চিকিৎসক সাবিরা হত্যাকাণ্ডে মামলা

বাংলাদেশ জার্নাল/এফজেড/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত