ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩০ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢাবি শিক্ষার্থীকে স্বামীর নির্যাতনের ঘটনায় বিচারের দাবিতে সমাবেশ

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:৫৬

ঢাবি শিক্ষার্থীকে স্বামীর নির্যাতনের ঘটনায় বিচারের দাবিতে সমাবেশ
ছবি- প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা স্বামী নজরুল ইসলাম কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় পুলিশের অসহযোগিতার প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচারের দাবি জানান সহপাঠীরা।

বুধবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

সমাবেশে ভুক্তভোগী কানিজ ফাতেমাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চারটি পৃথক ব্যানারে একত্রিত হয়ে অংশ নেন। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. ময়না তালুকদার, সহকারী অধ্যাপক কালিদাস, সহযোগী অধ্যাপক ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. চন্দনা রাণী বিশ্বাস ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীরা জানান, কানিজ ফাতেমাকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী নজরুল ইসলাম একজন সহকারী জজ হিসেবে কাজ করেন। তাদের অভিযোগ পদবল ব্যবহার করে নজরুল আইনি ব্যবস্থায় পার পেয়ে যাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘একজন বিচারকের অন্যায়ের প্রতিবাদে আজকে আমাকে এখানে এসে আন্দোলন করতে হচ্ছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে এ ধরণের ঘটনা দেশের জন্য খুবই দুঃখজনক ও লজ্জার। নজরুলের সাথে আমার বিয়ে হয় ২০১৯ সালে। আমার অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও পারিবারিকভাবে জোর করে আমাকে বিয়ে দেয়া হয়। শুরু থেকেই সে আমার উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিয়ের দুইমাসের মাথায় আমি আত্মহত্যার চেষ্টাও করি।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘২০২০ সালে জুডিশিয়ারি আবাসন প্রকল্পের নাম করে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চায় নজরুল। তার চক্রান্ত ছিলো আবাসন প্রকল্প দেখিয়ে বেতন বাড়ানো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সে আমার পরিবারের কাছ থেকে টাকা চায়। টাকা দিতে না পারলে সে আমার উপর আবারো জঘন্যরকমের নির্যাতন শুরু করে।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৬ ডিসেম্বর আমার বাবা-মায়ের সামনে সে আমার গলা টিপে ধরে। পরে আবার জমি কেনার নাম করে আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা চেয়ে খুব বাজে আচরণ করে। তার আগে সে বাবা মায়ের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা নেয়। এরপর আমার উপর নির্যাতন হতে দেখে বাবা-মা তাকে আর টাকা দেয়নি।

তারপর থেকে আমার উপর আরও পাশবিক ও অমানুষিক নির্যাতন শুরু হলো। আমার অবস্থা দেখে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার একটি জমি আমার নামে লিখে দেন। গত ২৯ আগস্ট সে আমার কাছে জমির দলিল চেয়ে বসে। পরদিন সকালে সে আমাকে ১০ লাখ টাকা ওইদিনের মধ্যে আদায় করতে বলে। অন্যথায় সে আমাকে তালাক দেয়ার ভয় দেখায়। অসম্মতি জানালে সে আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। তারপর সে নিজেই তার পরিচিত একজনকে ফোন দিয়ে জানায় আমি নাকি তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘পরে বিচারক খায়রুল্লা পলাশের পরামর্শে আমি আমার বাবার বাড়িতে চলে যাই। তারপর শাহবাগ থানায় মামলা করতে গেলে তারা জানায় তারা মামলা নেবে না। তারা আমাকে আপোস করার পরামর্শ দেন। এত নির্যাতনের শিকার হয়ে কীভাবে আপোস করা যায় আপনারা বলুন।’

বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী বলেন, ‘ আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চাই একজন বিচারক যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পেরে আমার উপর এই অমানুষিক নির্যাতন করেছে। আমি আপনার কাছে তার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’ সমাবেশে সংস্কৃত বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা ও সহযোগী অধ্যাপক ড. চন্দনা রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘নির্যাতনের দুই দিন পর ফাতেমা আমাদের কাছে এলে আমরা তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পাই। তাকে জুতা দিয়ে পেটানো হয়েছে৷ এরপর নির্যাতনকারী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা হলে পুলিশ সে মামলায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফাতেমার স্বামী একজন জজ। কিন্তু জজ বলেই তার বিচার হবে না এমনটা হতে পারে না। আমরা তার সুষ্টু বিচার দাবি করছি।’

শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম শিহাব বলেন, ‘বিচার বিভাগের কর্মকর্তারদের নিজেদের কথার মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। থানার দায়িত্বরত অফিসার বলেন-আমাদের হাতে সব কিছু নেই, ডিসি স্যারের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ নিতে হবে৷’

বাংলাদেশ জার্নাল/পিএল

  • সর্বশেষ
  • পঠিত