ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢাবি ‌অ্যালামনাই-এর মিলনমেলায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২২, ১৮:৪২  
আপডেট :
 ১২ মার্চ ২০২২, ১৯:০৩

ঢাবি ‌অ্যালামনাই-এর মিলনমেলায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ
ছবি: নিজস্ব

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে একাধিকবার সময় পরিবর্তন করে অবশেষে ১২ মার্চ শনিবার অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহ-উৎকণ্ঠার ‌অন্ত নেই। ‌অ্যালামনাইদের পদচারণায় মুখরিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। তবে এখানেই শেষ নয়। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উঠেছে নানা সমালোচনা। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও সময়জ্ঞান না থাকার অভিযোগ তোলেন একাধিক অ্যালামনাই।

অনুষ্ঠানপূর্ব অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ‌‌

‌শতবর্ষের মিলনমেলাকে ঘিরে অ্যালামনাইয়ের ফেসবুক গ্রুপ বিগত কয়দিন ছিল সরব। সম্ভাবনার পাশাপাশি সমালোচনাও দেখা গেছে অনুষ্ঠানপূর্ব আয়োজন নিয়ে। উপহার সামগ্রীর নিম্নমান, বিভিন্ন সামগ্রীর অপ্রতুলতা ও ঠিক সময়ে টোকেন না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন অনেকেই।

শফিকুল আলম রাসেল নামের একজন অ্যালামনাই গ্রুপে পোস্ট করেন, ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’ উপলক্ষে আজ আমার সিরিয়াল অনুযায়ী উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়ে একইসঙ্গে হতাশ ও লজ্জিত হয়েছি। দুপুর ৩টার পর বুথের সামনে গিয়ে দেখি, উপহার সামগ্রীর সংকটের কারণে তা ঠিকমতো বিতরণ করা হচ্ছে না। আমার মতো আরও অনেককেই অপেক্ষা করতে বলা হয়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেগুলো পেলেও এর মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ছিল না।’

আনোয়ার আজিম নামের আরেকজন অ্যালামনাই লিখেছেন, ‘আজ উপহার সামগ্রী গ্রহণ করলাম। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির এই অনুষ্ঠানের উপহার সামগ্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস। কালো রঙের চটের ব্যাগে পানি লাগলেই রঙ উঠে নষ্ট হবে এবং ব্যবহারকারীর পোশাক নষ্ট করবে। সর্বোপরি দুই দিনের পরিবর্তে অনুষ্ঠান একদিন করায় বাকি একদিনের উদ্বৃত্ত অর্থ থেকেও ভালো কিছু উপহার দেয়া যেত। হতে পারত টি-শার্ট, ক্যাপ বা মগ, যা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যেত। এ বিষয়ে অ্যালামনাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এছাড়াও দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও ‌অনুষ্ঠান করা হয়েছে একদিন। অ্যালামনাইগনের অভিযোগ, একদিন হিসেবে অনুষ্ঠানের আয়োজন আরও জাঁকজমকপূর্ণ করা যেত।

অনুষ্ঠান চলাকালীন অব্যবস্থাপনা

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মেলায় অতিথিবৃন্দ ও অ্যালামনাইদের জন্য অনুষ্ঠানপ্রাঙ্গণ খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেকেই আসতে শুরু করেন এবং ‌অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী তাদেরকে সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়। কিন্তু এই নাস্তা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। নাস্তার আইটেম ও মান নিয়ে অভিযোগ তোলেন অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ‌অ্যালামনাই বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এত আয়োজনের কথা শুনে এসে সকালের খাবার দেখে হতাশ হতে হলো। এত নিন্মমানের খাবার আমরা আশা করিনি। এরকম একটা অনুষ্ঠানে পরোটা-ভাজির মতো খাবার মোটেও শোভনীয় নয়। খাবারের প্যাকেট খুলে যা বুঝতে পারলাম এটি বোধহয় ভোররাতে প্যাকেট করা হয়েছে। পরোটা এতই শক্ত ছিল যে টেনে ছেঁড়া যাচ্ছিলো না। পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ প্যাকেট করে রাখার কারণে সবজি থেকে অস্বাভাবিক গন্ধ উঠে। হালুয়াটা ঝোল হয়ে গিয়েছে। আমার পাশের টেবিলে বসা এক ভাই বললো তার প্যাকেটের ডিমটি থেকে পানি পড়ছিলো। এত টাকা দিয়ে করা এত বড় একটি অনুষ্ঠানের সকালের নাস্তাই অনুষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করেছে।

মধ্যাহ্নভোজ নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। অনুষ্ঠানে খাবারের জন্য বসানো হয়েছে প্রায় ২০০টি টেবিল। কিন্তু সে ‌অনুযায়ী খাবার পরিবেশকের সংখ্যা ছিল অতি নগন্য। এ বিষয়ে একজন অ্যালামনাই বলেন, অনেক্ষণ অপরিষ্কার টেবিলে বসে থাকার পরও দেখি খাবারের কোনো খবর নেই। কোনো ওয়েটার বোধহয় নিজ নিজ টেবিলে কাজ করেনি। এরপর একজন এসে কোনোমতে খাবারটা দিয়ে সরে যায়। আবার তাকে ডাকাডাকি করে আনতে হয়। এত বড় একটা অনুষ্ঠানে এরকম অসুন্দর খাবারের স্মৃতি রাখতে নিশ্চয়ই এতজন অ্যালামনাই এখানে আসেননি।’

‌অস্বাস্থ্যকর ও অসুন্দর পরিবেশ

অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে বিশেষ করে খাবার পরিবেশনের স্থানে পরিবেশ ছিল নাজুক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, যেখানে খুশি খাবারের উচ্ছিষ্ট ও ময়লা ফেলে গেছেন। কিন্তু পরিষ্কার করার কেউ নেই। পাশাপাশি হাত পরিষ্কার করার জন্য স্থাপিত বেসিনগুলোতে হ্যান্ডওয়াশের অপ্রুতুলতা ও পানি জমে থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি ওই স্থানের আশপাশে চলাচলের স্থানে পানি জমে একাকার হয়ে রয়েছে। এছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপিত বিভিন্ন ছবি তোলার প্লাটফর্ম ও আসবাব ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়। যা দেখতে দৃষ্টিকটু ছিল।

অনুষ্ঠানসূচির হেরফের

উদ্যোগ, ব্যবস্থাপনা ও খাবারের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের সময়সূচিও একরকম ধ্বসে গিয়েছে বলা চলে। পরিকল্পিত প্রকাশিত সময়সূচির সাথে অনুষ্ঠানের সময়সূচির কোনো মিল নেই।

পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুষ্ঠানের মূল আলোচনা অনুষ্ঠান 'বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই' শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শুরু হয় দেড়টার দিকে।

এদিকে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে মধ্যাহ্নভোজ পর্ব শুরু হওয়ায় আলোচনা অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন উপস্থিত অনেকেই। ফলস্বরূপ অনুষ্ঠানস্থলের প্রায় অর্ধেকই খালি হয়ে যায়।

আলোচনা অনুষ্ঠান দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে ১টা ২০ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বক্তব্যই শুরু করতে পারেন দুপুর ২টা ৩ মিনিটে। তার ২০ মিনিটের বক্তব্য শেষ হতে প্রায় আড়াইটা বেজে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের আগে উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শেষ করতে ১টা পার হয়ে যায়। তার পরবর্তী মূল আলোচনা অনুষ্ঠান ‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ ১২টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে ১টা ২০ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠান শুরু করতে দেড়টা বেজে যায়।

সূচি অনুযায়ী আলোচনা পর্বের পরেই দুপুর ১টা ২০ মিনিটে মধ্যাহ্নভোজ পর্ব শুরু হওয়ায় কথা। কিন্তু আলোচনা অনুষ্ঠান অনেক বিলম্বিত হওয়ায় অনুষ্ঠান চলাকালীন মধ্যাহ্নভোজ চালু হয়ে যায়। খাবারের পর্ব শুরু হলে অধিকাংশ মানুষই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে খাবার গ্রহণ করতে চলে যায়। ফলে পুরো ‌অনুষ্ঠানস্থল একরকম খালি ছিলোই বলা চলে।

এই আলোচনা অনুষ্ঠান শেষ হতে বাজে আড়াইটা। ফলে অনুষ্ঠানের বাকি পর্বগুলোও ঠিক সময়ে শেষ করা যাবে না বলে ভীতি প্রকাশ করেন উপস্থিত ‌অ্যালামনাইদের অনেকেই।

পাশাপাশি মিডিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত বসার জায়গায় বার বার অন্যান্যদের বসে পড়ার দৃশ্যও ছিল চোখে পড়ার মতো।

অ্যালামনাইগণ জানান, তাদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১৫০০ টাকা করে নেয়া হয়। সস্ত্রীক আসতে করতে হয় স্ত্রীর রেজিস্ট্রেশনও। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে স্পন্সরও নেয়া হয় অনেক। তাদের অভিযোগ অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণজুড়ে স্পন্সরের লোগো ঝুলছে ঠিকই কিন্তু ব্যবস্থাপনার পরিস্থিতি একেবারেই বেহাল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত