ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

দুই শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, হল ভাঙচুর-সংঘর্ষে আহত ১৩

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২২, ২২:০৭

দুই শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, হল ভাঙচুর-সংঘর্ষে আহত ১৩
ছবি: প্রতিনিধি

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে দুই আবাসিক হলের ছাত্রের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনায় অন্তত ১৩ জন ছাত্র আহত হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যার দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ছাত্ররা চিকিৎসা নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, তাজউদ্দিন আহমদ হল ও ডরমেটরী-২ হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন ১৩ শিক্ষার্থী।

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিবিএ ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম, ১৮তম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোরশেদ এবং ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনজারুল ইসলাম। অন্যান্যরা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে চলে গেছে।

হাসপাতালে চিকিতসা গ্রহণ করতে আসা আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জেরে ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আনজারুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকায় শেখ রাসেল হলের ৮-১০ জন শিক্ষার্থী মারধর করে। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহত আনজারুল ইসলাম ডরমেটরী-২ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তাকে মারধরের কথা হলে পৌঁছলে পরবর্তীতে ডরমেটরী-২ হলের শিক্ষার্থীরা শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীদের ওপরে চড়াও হয়। উভয় হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে ফিরলেও আচমকা শেখ রাসেল হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা ডরমেটরি-২ হলের ভেতরে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়।

পরে রাত ১২টায় ডরমেটরি-২ ও তাজউদ্দিন হলের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের ওপরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের গন্ডগোল থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় হল কর্তৃপক্ষ। তালা ভেঙে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু হলে প্রবেশ করে নিচতলায় রাখা মোটরবাইক, বিভিন্ন জাতীয় নেতার ছবি, কক্ষের জানালা, টেলিভিশন কক্ষের থাই গ্লাসসহ ব্যাপক ভাঙচুর করেন। পরে রাত ৩টায় পুলিশের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর মামুনুর রশিদ বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে ‍ঠুনকো বিষয় নিয়ে মারপিটের ঘটনা ঘটিয়েছে। উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীরা হলের দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে। ১৩ জন আহত হয়েছে। তবে তিনজনের আঘাত একটু বেশি। অন্যান্যরা সুস্থ আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্ত আছে।

তিনি জানান, বেশ কিছুদিন আগে আনজারুল শেখ রাসেল হলের একজনকে আঘাত করেছিলো। তারই সূত্র ধরে শেখ রাসেল হলের কয়েকজন আনজারুলের উপরে চড়াও হয়েছেন। সেসময় ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর মাহবুবকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। গতকালকের ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজারার বিধান চন্দ্র হালদারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১২ বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কমিটি না থাকায় ওই ছাত্র সংগঠনের অনুসারীরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। হলের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় দুই সংসদ সদস্যের অনুসারী। তাছাড়া প্রায় এক বছর হয়ে যাচ্ছে ছাত্র সংগঠনের কমিটির জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন শতাধিক ছাত্র। ইতিমধ্যে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সাক্ষাতও করেছেন তারা। অল্প কিছুদিনের মধ্যে কমিটি ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে। কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মতো আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ক্যাম্পাসে গত তিন মাসে অন্তত ৩ বার মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

হাবিপ্রবির ছাত্র উপদেষ্টা ইমরান পারভেজ বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনা কোন দলীয় কোন্দল নয়। ব্যক্তি থেকে হলের গোষ্ঠীবদ্ধতার কারণে এ ধরণের সংঘাতে হয়েছে।

এ ঘটনার আগের ছোটখাটো সংঘাতের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঠামোগত ছাত্র রাজনীতি নেই। কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। ফলে নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং এবং কোন্দলের সৃষ্টি হচ্ছে। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজও শুরু করেছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত