ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

জাবিতে অবৈধ ‘উইকেন্ড কোর্স’ ও এর আদ্যোপান্ত

  ফরিদুর রেজা খান, জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২২, ২১:০৬  
আপডেট :
 ০৬ আগস্ট ২০২২, ২১:০৯

জাবিতে অবৈধ ‘উইকেন্ড কোর্স’ ও এর আদ্যোপান্ত

২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) তৎকালীন উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবির ইসস্টিটিউট অফ বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনকে (আইবিএ-জেইইউ) সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে (শুক্রবার) একটি কোর্স চালুর অনুমতি দেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে চালু হয় এসবি। বর্তমানে জাবি’র ৩৪টি বিভাগ ও ৩টি ইন্সটিটিউটের মধ্যে ১৩টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউট সপ্তাহের দুই ছুটির দিনে (শুক্র ও শনিবার) ‘উইকেন্ড কোর্স’ নামে বিভিন্ন মেয়াদে এসব সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করছে। স্রেফ ‘বাণিজ্যিক’ উদ্দেশ্যে পরিচালিত এসব কোর্সের শতভাগ শিক্ষার্থীই বহিরাগত। মূলত বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং জাতীয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা বেকার শিক্ষার্থীরাই এসব কোর্সে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভর্তি যোগ্যতা শিথিল করে ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার বাইরে গিয়ে মোটা অঙ্কের টিউশন ফি নিয়ে চালানো এসব ‘উইকেন্ড’ কোর্সের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জাবি’র নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ওপর, দাবি খোদ শিক্ষার্থীদের। রাষ্ট্রপতির আদেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দাবির তোয়াক্কা না করে এসব কোর্স চালিয়ে নিয়ে আসছে জাবি’র সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইন্সটিটিউটগুলো। এই কোর্সগুলো চালানোর ‘পক্ষে’ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের একাধিক বক্তব্য পাওয়া গেলেও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মেলেনি কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা। এদিকে প্রতিবেদনটি করার সময় এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ব্যাচগুলোর প্রায় সকল শিক্ষার্থী জানান, অবৈধ এসব 'উইকেন্ড কোর্স' এর দাপটে গৃহীত হচ্ছেন তারা।

সবকিছু ছাপিয়ে প্রশ্ন, বেআইনি ও অবৈধ হওয়ার পরও কেনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ, ইন্সটিটিউটগুলোর বিরুদ্ধে?

আইনগত ভিত্তি নেই উইকেন্ড কোর্সের:

২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নিজ ভাষণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্য কোর্সের নামে চলা সকল ধরণের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে নিজের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দুই দিনের মাথায় (১১ ডিসেম্বর) সকল সান্ধ্যকালীন ও অনুরুপ কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ নির্দেশনার পর নতুন মোড়কে ‘উইকেন্ড কোর্স’ নামে এসব কোর্স চালিয়ে যাচ্ছে জাবি’র ১৩টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউট। জাবি'র একাডেমিক কাউন্সিলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য এই প্রতিবেদককে বলেন, রাষ্ট্রপতির আদেশ বা ইউজিসির নির্দেশনাই শুধু নয়, এসব কোর্স চালাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলেরও অস্বীকৃতি রয়েছে। এসব কিছুর পরও এসব কোর্স চালিয়ে যাচ্ছে কিছু বিভাগ ও ইন্সটিটিউট।

প্রসঙ্গত, অর্থ কমিটির এক সভায় উইকেন্ড কোর্সগুলোর আয় থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্মানী নির্ধারণ করে এবং পরে সিন্ডিকেট সভার বিবিধ আলোচনায় রেখে এসব কোর্সের অনুমোদন দেয় ফারজানা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান আইনানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষা কার্যক্রম ও এ সংক্রান্ত নীতিমালা একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া বাধ্যতামূলক। তবে ‘উইকেন্ড প্রোগ্রাম অর্ডিন্যান্স-২০১৬’ একাডেমিক কাউন্সিলে অস্বীকৃত হওয়ার পরও উইকেন্ড কোর্সগুলো চালানো হচ্ছে। একাডেমিক কাউন্সিলে গৃহীত না হওয়ায় এসব কোর্সের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য। তারা আরও বলেন, এসব কোর্স পরিচালনা এবং কোর্সগুলো থেকে আয় করা বিপুল পরিমাণ অর্থ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা করা অবৈধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।

আর্থিক প্রণোদনার লোভে' উইকেন্ড কোর্স বন্ধে নেই কারও আগ্রহ:

বেআইনি হওয়ার পরও উইকেন্ড কোর্সগুলো চালাতে শিক্ষকদের উৎসাহ-আগ্রহের পেছনে বাড়তি ও বিপুল অংকের আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগকেই প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে অনুসন্ধানেও। বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৩০০ জন শিক্ষক এসব উইকেন্ড কোর্সের ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। প্রতি কোর্সের জন্য শিক্ষকেরা পদভেদে ভিন্ন অঙ্কের সম্মানী নিয়ে থাকেন। অনেক শিক্ষক আবার প্রতি সেমিস্টারে একাধিক কোর্সও পড়ান। শুধু শিক্ষকরাই নন, অবৈধ এসব কোর্স থেকে আয়ের অংশীদার ও সুবিধাভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে সকল স্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের ১০ মাস থেকে ২ বছর মেয়াদী উইকেন্ড কোর্সগুলোর প্রতিটির ফি ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি বছর এসব কোর্স থেকে আয় হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের ভাগ-বাটোয়ারা হয় উপাচার্য থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের মাঝে পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা তো সম্মানী নেনই, এর বাইরে প্রতি মাসে কোর্স সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের ব্যাংক একাউন্টে নির্দিষ্ট অংকের ভাগার টাকা জমা পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৪৫টি বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে সান্ধ্যকোর্স চালু থাকলেও সেখান থেকে শিক্ষকগণ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা কোনো আর্থিক প্রণোদনা বা পারিশ্রমিক পায় না। বরং, কোর্সগুলো থেকে আয় করা অর্থ ব্যবহৃত হয় প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কল্যাণে। ভিন্ন চিত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। অননুমোদিত ও বেআইনি এসব কোর্স থেকে আয় করা অর্থ ভাগ-বাটোয়ারাকে রীতিমতো উৎসবের পর্যায়ে নিয়ে গেছে সংশ্লিষ্টরা। এই ভাগ-বাটোয়ারার আইনি ভিত্তি নিশ্চিতের চেষ্টা হিসেবে কে কত টাকা পাবেন তার সিন্ডিকেট অনুমোদনও নেয়া হয়েছে।

সিন্ডিকেটের অনুমোদন মোতাবেক, এসব কোর্স থেকে প্রতি মাসে উপাচার্য ৫০ হাজার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা ও প্রশাসন) ৪০ হাজার করে ৮০ হাজার, কোষাধ্যক্ষ ৩৫ হাজার ও রেজিস্ট্রার ২৫ হাজার টাকা করে সম্মানী পান। উইকেন্ড কোর্সগুলোতে ক্লাস নেয়া অধ্যাপকরা প্রতিটি ব্যাচের (চার মাসব্যাপী কোর্স) জন্য ৯৫ হাজার টাকা সম্মানী পান, সহযোগী অধ্যাপকরা পান প্রায় ৮৫ হাজার টাকা।

এছাড়া এসব কোর্সের ভর্তি, ফলাফল প্রকাশ, সার্টিফিকেট তৈরি ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজের সাথে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এসব কোর্স থেকে আয়ের ভাগ পেয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রতি মাসে সম্মানী নেন যথাক্রমে ৫ হাজার ৬০০ টাকা ও ৩ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া, সহকারি নিয়ন্ত্রক ও অন্যরা ১ হাজার ৭০০ টাকা করে সম্মানী নেন। দাপ্তরিক কাজে সহায়তার জন্য তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও পিয়নরা মাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত সম্মানী পান। ভাগ-বাটোয়ারার বিশাল এই তালিকায় বাদ পড়েননি উপাচার্যের একান্ত সচিবও, মাস প্রতি সম্মানী হিসেবে ১ হাজার টাকা পান তিনি।

বার্ষিক বাজেটে উইকেন্ড কোর্সগুলো থেকে কয়েক শতকোটি টাকা আয়-ব্যয়ের হিসাব গোপন, তথ্য চেয়েও তথ্য পায়নি শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর অননুমোদিত উইকেন্ড কোর্সগুলোর কয়েক শতকোটি টাকা আয়-ব্যয়ের হিসাব লুকানো হয়েছে জাবি’র বিগত পাঁচ অর্থবছরের বার্ষিক বাজেটে। এমনকি অডিটে আসা শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের অডিট দল এসব কোর্সের আয়-ব্যয়ের তথ্য চাইলেও তথ্য সরবরাহ না করার অভিযোগ রয়েছে জাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের ওই অডিট দলের দুই পৃষ্ঠার একটি গোপনীয় প্রতিবেদন এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “জাবির সান্ধ্যকালীন কোর্সসমূহ যেমন MBA, MAPW, MGDS, WMBA, WMHRDIR X MSSDS ইত্যাদির দায় যথাক্রমে ৭৫.০০ লক্ষ টাকা, ৯৬.০০ লক্ষ টাকা, ৩৪.০০ লক্ষ টাকা, ৮৬.০০ লক্ষ টাকা, ৪৯.০০ লক্ষ টাকা ও ৩০.০০ লক্ষ টাকা জুন-২০২০ মাসের বার্ষিক হিসাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু উহার আয়-ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে প্রদর্শন করা হয়নি।”

সিএজি’র (মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক) এডিশনাল ফাংশনস অ্যাক্ট-১৯৭৪ এর ৫ (১) ধারা বলছে, সিএজি বা তার যে কোনো প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারের যে কোনো ব্যক্তি বা তার জিম্মায় থাকা যে কোনো রেকর্ডপত্র, নগদ টাকা ইত্যাদি যাচাই করতে পারবেন। কিন্তু চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ পৃথক চাহিদাপত্রে সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলোর আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলেও শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের ওই দলকে তা দেয়নি জাবি প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও অডিট দল থেকে তথ্য গোপনের কারণ ও ব্যাখ্যা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, জাবি’র সান্ধ্য কোর্সসমূহের আয়-ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব বাজেটভুক্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজসহ বিভিন্ন অনুল্লেখযোগ্য খাতে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ঐ অর্থ ব্যয় হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে এর উল্লেখ থাকে না। তাছাড়া রেকারিং বাজেটে এই আয়ের উল্লেখ থাকলে কমে যেতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান মঞ্জুরী। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের দিকটি ভেবে বাজেটে এর উল্লেখ থাকে না।

তবে এসব ব্যাখ্যা নাকচ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থ বিভাগের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আবু তাহের মজুমদার বলেন, জাবির স্কুল এন্ড কলেজের কোনো অনুমোদন আছে কি? আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছরে তার স্কুল এন্ড কলেজের অনুমোদন না থাকার দায় কার সেটাও দেখতে হবে। অনুমোদন না থাকলে সরকার কেনো অর্থ দেবে? মূল কথা হলো, আপনি টাকা খরচ করেন কিন্তু রেভিনিউতে দেখিয়ে খরচ করেন।

এ সময় বাজেট ঘাটতি নিয়ে জাবি প্রশাসনের ব্যাখ্যাকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভার ড্রাইভারের স্কেলেই বেতন পান, সেখানে ড্রাইভারকে টেকনিক্যাল অফিসার বানিয়ে লেকচারের সমান বেতন দিলে তো বাজেট ঘাটতি থাকবেই। ড্রাইভারের স্কেল তো সারাদেশেই এক। আর নিয়মানুযায়ী বাড়ি ভাড়া না দিয়ে বর্গফুটের হিসাবে দেয়া হয়। এসব হলে কি বাজেট ঘাটতি হবে না?

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জাবি’র কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে, ‘আর্থিক ও বাজেট সংক্রান্ত বিষয় হওয়ায়’ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম।

প্রসঙ্গত, ২৪ জুন চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) ২৭৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার বাজেট উত্থাপনসহ আরও দশটি এজেন্ডা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় জাবি’র ৩৯তম সিনেট অধিবেশন। এবারের বাজেটেও অনূহ্য থেকে গেছে সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো থেকে আয়-ব্যয়ের খতিয়ান।

উইকেন্ড কোর্সের দাপটে 'নিগৃহীত' হচ্ছেন নিয়মিত শিক্ষার্থীরা:

উইকেন্ড কোর্সগুলোর শ্রেণি কার্যক্রমে কোনো সেশনজট না থাকলেও নিয়মতান্ত্রিক ক্লাস-পরীক্ষায় শিক্ষকদের অনাগ্রহ ও অমনোযোগিতায় সেশনজটে ভুগছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারির অচলাবস্থার ফলে সৃষ্ট সংকটকে ছাপিয়ে প্রকট হয়ে উঠেছে শিক্ষকদের উইকেন্ড কোর্সে আগ্রহ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ব্যাচগুলোর শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রমে নিগ্রহ। উইকেন্ড কোর্সের প্রতি শিক্ষকদের অতি উৎসাহ ও ঝোঁক শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের আন্তসম্পর্ক নষ্ট করে দূরত্ব বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষার্থী। এমনকি, উইকেন্ড কোর্সের ব্যস্ততায় গবেষণায় অমনোযোগিতা বেড়েছে শিক্ষকদের মাঝে-এমন অভিযোগও রয়েছে।

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চালু হওয়া এসব কোর্সের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবশ্য একাডেমিক কর্তব্য স্বাভাবিক শিক্ষা ও গবেষণার কাজে তীব্র ব্যাঘাত ঘটছে। তাদের অভিযোগ, উইকেন্ড কোর্সগুলোর শ্রেণি কার্যক্রমে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ ও পরিচালনা করলেও ওই একই শিক্ষকরা নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। এতে মারাত্মক বৈষম্য তৈরি হওয়ার পাশাপাশি তাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীরা বলছেন, দ্রুততম সময়ে কোর্স শেষ করাটাই থাকে শিক্ষকদের মূল লক্ষ্য।

একাধিক বিভাগ-ইনস্টিটিউটের অফিসে কথা বলে জানা যায়, উইকেন্ড কোর্সগুলোর কাজের ব্যস্ততা নিয়েই অধিকাংশ সময় পার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব কোর্সের শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকায় তাদের নিয়ে ঝামেলাও কম পোহাতেও হয় না। ফলে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন নিয়মিত শিক্ষার্থীরা।

হুমকির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কম্যুনিটির স্বকীয়তা ও নিরাপত্তা, ছুটির দিনে ভিন্ন ক্যাম্পাস:

সপ্তাহ ঘুরলেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০০ একরের স্বতন্ত্র ক্যাম্পাসে আনাগোনা শুরু হয় বহিরাগত শিক্ষার্থীদের। প্রতিবেদনটির করার সময় প্রতিবেদকের সাথে কথা বলা প্রায় সকল শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সপ্তাহব্যাপী ক্লাস-পরীক্ষার পর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে নিজেদের আঙিনায় বহিরাগতদের আনাগোনায় বিরক্ত নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ও স্বকীয় সংস্কৃতির একটি ক্যাম্পাসে এভাবে বহিরাগতদের আনাগোনাকে ক্যাম্পাস কম্যুনিটির অংশীজনরা নিজেদের স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র সত্ত্বায় হুমকি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতি শুক্রবার ও শনিবার প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার বহিরাগত শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তাদের আনা নেয়ায় ব্যবহৃত হয় রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলা বিভিন্ন পরিবহনের লোকাল বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নাম ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীরা। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা, এমনকি কখনও রাত পর্যন্ত চলে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা। ক্যাম্পাসে বহিরাগত ও অনিয়মিত পেশাজীবী শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় সপ্তাহান্তরে অন্য রূপ নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত