ইবিতে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪৬
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী কর্তৃক এক নবীন ছাত্রীকে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ. এম. আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।
কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক ও একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মো. আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম।
অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করবো।
এদিকে সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। একইসঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান সুইট বলেন, আবাসিক হলের অভ্যন্তরে প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রীকে যেভাবে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘৃণ্য নির্যাতনের ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে এ ঘটনার অভিযুক্ত মূল হোতা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ সহযোগীদের উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আমরা বিস্মিত যে, ক্যাম্পাস যেখানে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো পরিবেশ হওয়ার কথা ছিলো সেখানে ছাত্রলীগ নেত্রীসহ কর্মীদের হাতে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার এমন দৈন্যদশায় আমরা উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে নারী নিপীড়নের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না হওয়ার ফল এই নারী নির্যাতনের ঘটনা। বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেমন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে তেমনি আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও চরম ব্যর্থ।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, নবীন ছাত্রীকে র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত ও যারা এসব নেত্রী ও কর্মীদের মদদদাতা তাদেরকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রমাণ করুক যে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপোষহীন। আর নয়তো এটাই প্রমাণিত হবে যে, নিপীড়নকারী ও নির্যাতনকারীরা প্রশাসনের চাদরের নিচেই আশ্রয় পায়। ক্ষমতার বলয়ে নিরাপত্তা লাভ করে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের গণরুমে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে ভুক্তভোগীর সিনিয়র তাবাসসুমসহ ৬ থেকে ৭ জন ওই ছাত্রীর ওপর রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নির্যাতন চালায়। এ সময় ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, এলোপাথাড়ি চড়থাপ্পড় ও ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করানোসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। এদিকে ভুক্তভোগীর বিচার চেয়ে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি