ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

অভিনয়শিল্পীদের করোনা ঝুঁকি সাধারণের চেয়েও ৮০ শতাংশ বেশি

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪৩  
আপডেট :
 ১০ এপ্রিল ২০২১, ১৫:১৩

অভিনয়শিল্পীদের করোনা ঝুঁকি সাধারণের চেয়েও ৮০ শতাংশ বেশি
ছবিতে নাটকের তারকাশিল্পীরা; ছবি কোলাজ: ফাহমি মাহমুদ

মহামারি করোনা যেন ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। সর্বত্রই এখন আতঙ্কের ছোঁয়া। সেই ছোঁয়া থেকে বিনোদন অঙ্গনও বাদ যায়নি। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন এ মহামারি ভাইরাসে। শুটিং চলা নিয়ে সরাসরি সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় অনেকেই রুটি-রুজির প্রশ্নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। টেলিভিশনের আন্তঃসংগঠনও সরাসরি শুটিং বন্ধে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি আবার উৎসাহিতও করেনি। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যারা কাজ করতে চান তারা কাজ করতে পারেন- এমন নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে সংগঠনগুলো থেকে।

গেল বছরে করোনার প্রথম ঢেউয়ে আক্রান্তের সংখ্যা যখন দশকের ঘরে ছিলো তখন নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সব ধরণের সংগঠন শুটিং বন্ধ করে দেয়। এমনকি অভিনয়শিল্পীরাও নিজেদের লকডাউনে গৃহবন্দী করে রাখেন। ক্রমান্বয়ে সেই সংখ্যা একটু একটু বাড়তে শুরু করে। এরপর সেই ধাক্কায় মাস কয়েক কাজ বন্ধ রেখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মেনে আবারও শুটিং শুরু করেন নির্মাতা-অভিনয়শিল্পীরা। কারণ একটাই, অনেকের জন্যই কাজটা রুটি-রুজির প্রশ্ন! দশক ছাড়িয়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৭ হাজারেরও বেশি। স্বভাবতই এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে করোনা।

যার কারণে চলতি মাস থেকে শুরু হওয়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে আবারও চলছে লকডাউন। সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় অনেকেই শুটিং করছেন আবার অনেকেই নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে ফের গৃহবন্দী হয়েছেন।

যেখানে অনেক চাকরিজীবী বা অন্যান্য কর্মজীবীরা চাইলেই মাস্ক পরে অফিস করতে পারছেন, কাজ করতে পারছেন। অভিনয়শিল্পীদের ক্ষেত্রে সে চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। কারণ, তাদের ফেইস ব্যবহার করে কাজটা করতে হয় অর্থাৎ অভিনয় করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজনেই মুখ থেকে মাস্কটা খুলতে হয়। চাইলেও সবসময় মাস্ক পরে থাকতে পারেন না।

আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগ বা সিডিসি’র এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, মাস্ক পরলে যেকোনো মানুষের করোনা ঝুঁকি ৯০ থেকে ৯২.৫ (ডাবল মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে) শতাংশ কমে যায়। কিন্তু অভিনয়শিল্পীদের সে ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি। কারণ, শিল্পীদেরকে মাস্ক খুলেই অভিনয় করতে হয়। শুটিং ইউনিটের সবাই সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে পারলেও অভিনয়শিল্পীরা চাইলেও অনেক সময় তা পারে না। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ফাঁকে হয়তো কিছু সময়ের জন্য সেটা করতে পারে। তারপরও ঝুঁকি থেকেই যায়। সেক্ষেত্রে তাদের ঝুঁকি মাত্র ১০ থেকে ১২.৫ শতাংশ কমে বলে ধারণা।

নাটকের মধ্যমণিরা এই লকডাউনটিকে কীভাবে দেখছেন? তারা কী কাজ করছেন? নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন? কিংবা এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবছেন তারা? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, অনেকে শুটিং করলেও এই মুহূর্তে শুটিং করছেন না জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, আফরান নিশো, মেহজাবীন চৌধুরী, সাবিলা নূর, তানজিন তিশা, তাসনিয়া ফারিণ প্রমুখরা।

যেহেতু প্রথমদিকে অনেকেই করোনার ধাক্কাটা ঠিক সামলে উঠতে পারেননি সেখানে আবারও নতুন ঢেউ! নিজেদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে নারাজ সবাই। কারণ সবার পরিবারেই বয়স্ক কিংবা শিশু রয়েছেন। তাই কাজটা করতে হবে বলেই শুটিংয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে নারাজ তারা। তাই নিজেরা সহশিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজকদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করেন কাজ করা নিয়ে; করলেও সেটা কীভাবে, কতটুকু নিরাপত্তার সহিত- সবকিছু মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ‘আপাতত কিছুদিন শুটিং বন্ধ রাখা হোক’।

এ বিষয়ে আফরান নিশোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘গত বছরের করোনার ধাক্কাটাই অনেকে এখনো সামলে উঠতে পারিনি। এখন অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে, যেটা খুবই চিন্তার বিষয়। কারণ, দিনশেষে নিজের ও পরিবারের কথা চিন্তা করতে হয়। আমার পরিবারে আমার স্ত্রী-ছেলে আছে। গত মাসের ২৫/২৬ তারিখের দিকে আমার চিকিৎসক ভাইয়ের মাধ্যমে করোনার কিছু ডাটা জানতে পারি। এনালাইসিস করে জানতে পারলাম যে, সামনে এটার রূপ ভয়াবহ হতে চলেছে। তখন আমি আমাদের সহকর্মী, পরিচালক, প্রযোজক যারা আছেন তাদের সঙ্গে বিষয়টা আলোচনা করি। তার দুয়েকদিনের মধ্যেই আমরা দেখতে পাই করোনায় আক্রান্তের পরিমাণ যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এরপর আমরা নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে কয়েক দফায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই যে এখন কাজ বন্ধ রাখাটাই নিরাপদ বা কাজ করলেও সেক্ষেত্রে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সেগুলো নিয়ে কথাবার্তা বলি। তারপর ৩ এপ্রিল থেকে আমরা কয়েকজন সহকর্মীরা সবার সঙ্গে কথা বলে কাজ বন্ধ রাখি।’

‘যখন সবার জন্য একটা নির্দেশনা থাকবে সেটা মানা সহজ। যেমন অনেকে কাজ করছেন। আমরা করতে পারছি না ইচ্ছে থাকলেও। কাজ করাটাই সব না, দায়িত্বেরও একটা ব্যাপার থাকে এখানে। যেহেতু অভিনয়ই আমাদের পেশা, সেটা তো করতেই হবে। কারণ আমাদের ফেইসটা ব্যবহার করেই কাজটা অর্থাৎ অভিনয় করতে হয়। অন্যান্য সবার ক্ষেত্রে যদি বলি, সবাই কিন্তু মাস্ক পরে অফিস আদালতে তাদের কাজ করতে পারছেন কিন্তু আমরা যেহেতু অভিনয়শিল্পী তাই আমাদের মাস্কটা খুলতেই হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য ঝুঁকিটা কিন্তু অন্যান্য সাধারণের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি। আজকে আমাদের কারও কিছু হলে কিন্তু অন্য কেউ এটার দায় নেবে না। আমাকেই সাফার করতে হবে, এর দায়ও আমার নিজেকেই নিতে হবে।’- যোগ করেন নিশো।

নতুন করে করোনার এ ঢেউয়ে কাজ করা নিয়ে সন্দিহান অবস্থায় রয়েছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টিকেই এগিয়ে রাখছেন এ শিল্পী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুটিং করাটাই সব না, আবার সবও। যেহেতু অভিনয়ই শিখেছি সেটাই করছি এবং করতে হবে। কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তাটা আগে। প্রতিদিনই কারও না কারও আক্রান্ত হবার খবর শুনছি। প্রতি মুহূর্তেই আতঙ্কে আছি। তারমধ্যে আমি একবার আক্রান্ত হয়েছি। অনেক কষ্টে সেই ধকল কাটিয়ে উঠেছি। কাজ তো অবশ্যই করতে হবে। কিছুদিন যাক, তারপর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবো।’

আবদুন নূর সজল বলেন, ‘করোনার যে বিষয়টা সেটা কিন্তু সহসায় সমাধান হওয়ার মত অবস্থা দেখছি না। এখন যে হারে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে করে নিজেদেরকে নিয়েই ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। কারণ, আমার পরিবারে বয়স্ক বাবা-মা আছেন। সরকার যেহেতু লকডাউন দিয়েছে আমাদের সবার উচিত সেটা সঠিকভাবে মেনে চলা। নাহলে হয়তো আরও অনেক খারাপ অবস্থা দেখতে হবে। আর সাবধানতা অবলম্বন ও নিরাপত্তার জন্য তো অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। তারপরও কিন্তু আমাদের জন্য বিষয়টা অনেক বেশি ঝুঁকির হয়ে দাঁড়ায়। আমি এখন কোনো শুটিং করছি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফেরার ভরসা পাচ্ছি না এখন।’

মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘এই লকডাউনের আগে থেকেই কাজ বন্ধ রেখেছি। নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে দেখছি, তারপর কাজ। প্রতিদিনই খারাপ খবর শুনতে পাচ্ছি। আতঙ্কের মধ্যে আছি এখন। এই মুহূর্তে লকডাউনটা মেনে চলা খুব জরুরি। যতদিন লকডাউনের নিয়ম অমান্য বা লঙ্ঘন করা হবে ততদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এভাবে লকডাউনের সময়সীমাও বাড়তে থাকবে। আমাদের আরো অনেক বেশি সচেতন হওয়া উচিত। এই সময় লকডাউন মেনে চলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর শুটিংয়ে কবে অংশ নেবো সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে, সময়ই বলে দেবে।’

এমন পরিস্থিতিতে অনেক অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক সুরক্ষার কথা ভেবেই কিছুটা সময়ের জন্য কাজ বন্ধ রেখেছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে আবারও শুটিংয়ে ফিরবেন তারা। আর এর মধ্যে যদিও কাজ করেন সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি যেন জোর দেয়া হয়- এমনটাই চাইছেন সবাই। শুধু শিল্পী-ই নয় সবারই উচিত নিজেরা সাবধানতা অবলম্বন করে আশেপাশের সবার নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন চলছে। এই লকডাউনের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই তা বাড়িয়েছে সরকার। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে আবারও ৭ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জরুরি সেবা বাদে এই ৭ দিন সকল অফিস ও গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে। এছাড়াও বন্ধ থাকবে গণপরিবহন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত