ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ প্রসঙ্গে ফারিণ

‘রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাটাচ্ছিলো, খুব বিরক্ত লাগছিলো তখন’

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২১, ১৬:৪৬

‘রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাটাচ্ছিলো, খুব বিরক্ত লাগছিলো তখন’
‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ সিনেমার দৃশ্যে তাসনিয়া ফারিণ

ওটিটি প্লাটফর্ম যেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো। একের পর এক কন্টেন্টে বাজিমাত করে যাচ্ছেন সময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। ‘ট্রল’ ওয়েব ফিল্ম দিয়ে এই মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা ফারিণ অভিষেকেই পান দারুণ সাড়া, এরপর ‘লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান’এও হন প্রশংসিত। সবশেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’-তে হাজির হয়ে দু হাত ভরে কুড়াচ্ছেন প্রশংসা। সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই দর্শক থেকে শুরু করে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। সিনেমা এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...

  • ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

আমি তো আগে দেখিনি। ১৯ আগস্ট রাত ৮ টায় রিলিজ হয়েছে। সেদিন আমার শুটিং ছিলো, বাসায় ফিরতে রাত হয়েছে এরপর রাত ১ টার সময় বসে দেখেছি। আমি তো আগে থেকেই পুরো স্ক্রিপ্ট জানি তারপরও পুরো ছবিতে এক মুহূর্তের জন্যও বোরিং লাগেনি। এখানে যারা যারাই অভিনয় করেছেন, প্রত্যেকটা চরিত্রই একটা আলাদা ডাইমেনশন ক্রিয়েট করেছে। বলতে পারেন, অল্প সময়ের মধ্যে আমরা অনেক কিছু দেখেছি এখানে। সত্যি বলতে আমি এতোটাও প্রত্যশা করিনি যে এটার এক্সিকিউশনটা এত বেশি সুন্দর হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি যেন একটা ট্রিপ দিয়ে আসলাম আমার বন্ধুদের সাথে। শেষের দিকে গিয়ে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। বিশেষ করে আমার অনেক বেশি খারাপ লেগেছে আমার বন্ধুদের কথা ভেবে।

আমার পরিবার অনেক রেস্ট্রিক্টেড। আমাকে কোথাও বের হতে দিতো না। আমার মনে নাই শেষ কবে বন্ধুদের সাথে এমন ট্রিপ দিয়েছি। ওই জীবনটা আমি অনেক বেশি মিস করি। আমি শুধু সেই বিষয়টাই ভাবছিলাম। ছবিটা দেখার পর এখন অনেকেই তাদের বন্ধুদের সাথে একটা ট্রিপ প্ল্যান করবে। এমনকি আমি আমার বন্ধুদেরকেও মেসেজ পাঠিয়েছি যে চল আমরা একটা ট্রিপ দেই!

এটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে যে একটা নিট এন্ড ক্লিন সিনেমা একটা। আরিয়ান ভাই অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক সুন্দর করে কাজটা বানিয়েছেন। গল্প ,নির্মাণ, সিনেমাটোগ্রাফি, সাউন্ড, গান সবকিছু মিলিয়ে একটা চমৎকার প্রোডাকশন হয়েছে। আমার মনে হয়, এই ছবিটা দর্শকরা অনেকদিন মনে রাখবে। এত বেশি সাড়া পাবো কখনো ভাবিনি। যত মানুষ দেখেছে সবাই কান্না করেছে শেষ দিকে এসে।

  • শুটিং করার সময় কি কখনো মনে হয়েছিলো যে এটা এতো বেশি সাড়া পাবে?

সত্যি কথা বলতে কি, তখন কিছুই বুঝতেছিলাম না যে আসলে আমরা কি করতেছি! এটা শুনার পর আরিয়ান ভাই আবার মাইর দেয় কিনা ভাবছি! রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাটাচ্ছিলো আমাদেরকে, খুব বিরক্ত লাগছিলো তখন। ফ্লাইট মিস হচ্ছে, কি করছি না করছি কিছুই বুঝতেছিলাম না তখন। কে কোথায় আছি তার কোনো ঠিক নেই। বলতেছে, এই শট দাও, ওই শট দাও। বুঝতেছিলাম না যে করতেছি টা কি আসলে? পুরা হযবরল লাগতেছিলো। আরিয়ান ভাই তখন বলল যে, তোমাদেরকে যেটা করতে বলেছি তোমরা শুধু সেটা করো, বাকিটা আমি দেখবো।

আর আমি ডিরেক্টরের আর্টিস্ট, সবসময় ডিরেক্টরের অর্ডার ফলো করি। তখনও তাই করেছি। আল্টিমেটলি রেজাল্টটা খুব ভালো হয়েছে আর কি। এত বেশি সাড়া পাবে, সেটা ভাবিনি। ফেসবুকে ঢুকলেই দেখি যেন ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ চলে আসছি। এত এত বেশি পোস্ট, সব পজেটিভ মন্তব্য। আরও বেশি অবাক হয়েছি যখন দেখি ফুডব্যাংক গ্রুপেও ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ র পোস্ট। তার মানে দর্শকরা কাজটি দেখছে, পছন্দ করছে।

  • এখন পর্যন্ত কাজ করা ওটিটি প্লাটফর্মের তিনটি কাজেই দারুণ সাড়া পেয়েছেন। ওটিটি প্লাটফর্ম কি আপনার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো নাকি?

সত্যি বলতে আমি অনেক ভাগ্যবতী। আমার ‘ট্রল’ ও ‘লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান’ থেকে অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি এরপর ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, এখানেও দুর্দান্ত সাড়া। এই জায়গাটাতে কাজ করে সত্যি অনেক বেশি আরাম পাচ্ছি আমি। খুব বুঝে শুনে সিলেক্টিভ কাজ করছি। আমিও খুব ভাগ্যবতী যে ভালো কাজগুলো আমি পেয়েছি। সামনেও কিছু ভালো ভালো প্রজেক্টের বিষয়ে কথা হচ্ছে, দেখা যাক কি হয়!

এই যে কত মানুষ কাজ দেখার পর আমাকে মেসেজ করে। প্রশংসা করে, আমার জন্য দোয়া করে। এটাই তো আমার জন্য অনেক। আমি অনেক মানুষের দোয়া পাচ্ছি, এটাই কয়জনে পায়! তাদের কোনো স্বার্থ নেই, চাওয়া নেই। এমনও না যে আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়, ছবি তুলতে চায়! তারা কোনো কাজ দেখার পর যখন যখন আমার জন্য দোয়া করে, এই পাওয়াটা সত্যি অনেক বেশি ভাগ্যের। সেদিক থেকে আমি অনেক বেশি ভাগ্যবতী। আমার তো তাদেরকে দেওয়ারও কিছু নেই, আমি তো শুধু কাজটাই করি। এটাতেই তারা অনেক বেশি খুশি। আমি শুধু ভালো কাজ করে যেতে চাই তাদের জন্য।

  • ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ দেখার পর আপনার বন্ধুদের সঙ্গে কোনো স্মৃতি মনে পড়েছে কি?

আমি আমার বন্ধুদেরকে ভীষণ মিস করছি। আমি রীতিমতো কান্না করে দিয়েছি। আমি ছবিটা দেখার পরপরই আমার বন্ধুদেরকে মেসেজ করি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড জ্যোতি এটা দেখার পর কান্না করে দিয়েছে। খুব মনে পড়তেছিলো তার। কারণ, স্কুল কলেজ লাইফে আমি কোথাও বের হতে পারিনি। বাসা থেকে কোথাও যেতে দেয়নি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে আমাদের ভার্সিটির একটা ট্রিপে আমরা কক্সবাজার গিয়েছিলাম। দুইটা শুটিংয়ের মাঝখানে খুব কষ্ট করে এই ট্রিপের জন্য আমি আমার সময় ম্যানেজ করেছিলাম।

এটাই আমার জীবনের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত শেষ কোনো ট্রিপ। আমি সেই ছবিগুলো খুঁজে বের করে দেখছিলাম। সেখানে কত মজা করেছি, রাত ৩/৪টা পর্যন্ত গান বাজনা করেছি। এত বেশি মিস করছিলাম সময়গুলোকে যা বলার মত না। সেখানে আমরা তিনদিন ছিলাম। এই তিনদিন আমার জীবনের সেরা একটা মুহূর্ত হয়ে থাকবে সবসময়। সিনেমাটা দেখার পর ওই সময়গুলোই আমার চোখে ভাসছিলো। আর এখন তো কাজের ব্যস্ততায় কোনো বন্ধুকে সময় দিতে পারি না। আর করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে তো খুবই বাজে অবস্থা। সবকিছু মিলিয়ে সময় হয়ে উঠছিলো না। তবে সবাই মিলে এখন প্ল্যান করছি দ্রুত একটা ট্যুর দিবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত