ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘পুরস্কার পাওয়ার বয়স হয়নি এখনও, মরে গেলে তো পাবো-ই’

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:০৯

‘পুরস্কার পাওয়ার বয়স হয়নি এখনও, মরে গেলে তো পাবো-ই’

পর্দায় তার উপস্থিতি মানেই যেন ভিন্নমাত্রা, দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় নৈপুণ্যে দর্শক মন জয় করে আসছেন সবার প্রিয় মুখ মনিরা আক্তার মিঠু। ব্যক্তিজীবনে খুবই সাদামাটা থাকতে পছন্দ করা এই অভিনেত্রী পর্দায় হাজির হন নানামাত্রিক চরিত্রে। বিশ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি দুই হাজারেরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তাকে দেখা গিয়েছে ২৬টির মত সিনেমায়।

আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। জন্মদিনকে ঘিরে সহকর্মী, ভক্ত অনুরাগীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন। তবে বিশেষ এই দিনকে ঘিরে তেমন কোন আয়োজন রাখেন নি তিনি। শুটিংও বন্ধ রেখেছেন কয়েকদিন ধরে।

মনিরা মিঠু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমার ভাই গত কয়েকদিন ধরেই একটু অসুস্থ, যার কারণে কয়েকদিন কাজ বন্ধ রেখেছি। জন্মদিন নিয়ে আমি কখনোই তেমন কোন আয়োজন করি না। সবাই ফোনে, মেসেজের মাধ্যমে কিংবা ফেসবুকে পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন; সবার এত ভালোবাসায় আমি সিক্ত। আর গতকাল রাতেই আমার মেয়ে অর্থাৎ আমার ছেলের বউ আমার জন্মদিনকে আরও বিশেষ করে তুলেছে। কত সুন্দর আয়োজন করেছে সে তার মায়ের জন্য। আমি শুধু তার আনন্দগুলো দেখছি। পরিবারের এমন ভালোবাসায় মাঝেমধ্যে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ি!’

তিনি আরও বলেন, ‘সবাই আমাকে এত পছন্দ করেন, তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশটা দেখতে পাচ্ছি। একেকটা শুভেচ্ছা ও তাদের ভালোবাসা আমার মাথার তাজ! সেইসাথে আমার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। এই ভালোবাসাগুলোই আমাকে অভিনয়ের শক্তি যোগায়।’

ভক্তের সঙ্গে ঘটা একটি মুহূর্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গত মাসে আমি সিলেটের বিয়ানীবাজারে মোস্তফা কামাল রাজের ‘মায়ায় থেকো’ নাটকের শুটিং করতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি আছি জেনে এক ভক্ত দুই দিন শুধু বিভিন্ন জায়গায় আমাকে খুঁজেছে, আমার সঙ্গে একটু দেখা করার জন্য। ছোট্ট একটা ছেলে, নাম আহমেদ হোসেন; এত কষ্ট করে আমাকে খুঁজে বের করেছে। পুরো ইউনিট তার কান্না দেখে বিহবল! সে আমার জন্য একটি ক্রেস্ট আর একটি শাল নিয়ে এসেছে, আমাকে উপহার দেবে বলে। এই ভালোবাসাগুলোই আমার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।

জন্মদিনকে ঘিরে কোন বিশেষ স্মৃতির কথা মনে পড়ে কি? এমন প্রশ্নে মিঠু বলেন, ‘আমি জন্ম থেকেই মা হারা। ছোটবেলার তেমন কোনো স্মৃতি নেই আমার। তবে চ্যালেঞ্জার ভাই আমার জন্মদিন পালন করতেন বেশ আয়োজন করে। তাকে খুব মিস করছি। হুমায়ূন আহমেদ স্যার একবার আমার জন্মদিন পালন করেছিলেন, অনেক গান-বাজনার আয়োজন করেছিলেন। আমাকে একটি বই উপহার দিয়েছিলেন, যেখানে লিখা ছিলো- ‘জীবন আনন্দের হোক। যে মানুষের জীবনে আনন্দ নেই, সে মানুষ মৃত’। সারাজীবন স্মৃতিতে রাখার মত একটা জন্মদিন ছিলো সেটা, আমি সবসময় মনে রাখবো।’

২০ বছরের ক্যারিয়ারে দর্শকের অনেক ভালোবাসা-ই পেয়েছেন। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে আপনার প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি কি? এমন প্রশ্নে মনিরা মিঠুর সহজাত উত্তর, ‘আমি যেই অবস্থানে আছি এবং এখনও যে দর্শকের ভালোবাসা পাচ্ছি; এটাই আমার প্রাপ্তি। যে ধরণের চরিত্র পাই কাজ করার জন্য, সেই চরিত্রগুলো দর্শক সাদরে গ্রহণ করছেন, ভালোবাসা দিচ্ছেন। এটাই আমার জন্য অনেক কিছু।

অপ্রাপ্তি নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাই না। তবে একটা বিষয় বলতে খুব ইচ্ছে করে, সেটা হলো- আমি বিভিন্ন সময়েই শুনি বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডে আমার নাম যায় কিন্তু পরে কোন এক কারণে সে নামটা কাটা পরে যায়। কেন কাটা পরে আমি সেটা জানি না। হয়তো আমি সবার সাথে যোগাযোগটা রাখতে পারি না সেজন্য। এমনিতেই আমি কাজ করে কূল পাই না, যার কারণে সবার সাথেই আমার ওভাবে যোগাযোগটা কম।

তবে আমি মনে করি, আমার পুরস্কার পাওয়ার বয়স হয়নি এখনও। আর ৫ বছর পর হয়তো অনেক অনেক পুরস্কার পাবো, আর মরে গেলে তো পাবোই। আমি তো নায়িকা ক্যাটাগরিতেও পরি না আবার আজীবন সম্মাননা পাওয়ার ক্যাটাগরিতেও না। আমাদের দেশে প্রধান চরিত্রে পুরস্কার দেওয়ার প্রচলনটা খুব কম, নেই বললেই চলে। সবার আকর্ষণ থাকে নায়ক কিংবা নায়িকা ক্যাটাগরির পুরস্কার নিয়ে কিন্তু চরিত্রাভিনেতা কিংবা চরিত্রাভিনেত্রী কতটুকু ভালো অভিনয় করলেন, তাদেরকে পুরস্কার দেওয়া কিংবা সম্মানীত করার প্রচলন নেই, এই দিকে কারো নজরই নেই। নায়ক-নায়িকার বাইরেও কিন্তু চরিত্রাভিনেতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্পীদেরকে সম্মানীত করার সংস্কৃতিটা চালু হয়নি আমাদের দেশে। আমি মনে করি, এটা চালু হওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত