ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

যে ধরণের টুইস্ট রয়েছে সেটা ধরা খুবই মুশকিল: মেহ্জাবীন

  ইমরুল নুর

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪:৫৯  
আপডেট :
 ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:৩২

‘কতটুকু সন্তুষ্ট করতে পারবো জানিনা, তবে হতাশ করবো না’
‘রেডরাম’ সিনেমার দৃশ্যে মেহ্জাবীন চৌধুরী

টেলিভিশনের প্রথম সারির অভিনয়শিল্পীদের অনেকেই যখন ওয়েবে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন তখনও এ মাধ্যমে অনুপস্থিত ছিলেন তারকা অভিনেত্রী মেহ্জাবীন চৌধুরী। অনেকটা সময় নিলেও অবশেষে নাম লেখালেন। আজ ওটিটি প্লাটফর্ম চরকিতে রাত ৮টায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম ‘রেডরাম’। আর এরমধ্য দিয়েই ওয়েব ফিল্মে অভিষেক হতে যাচ্ছে তার। তার প্রথম ওয়েব, অভিজ্ঞতা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রথম সিনেমা মুক্তি পেতে যাচ্ছে। কোন চিন্তা বা নার্ভাসনেস কাজ করছে কি?

কাজ যেটা করার সেটা তো করেই ফেলেছি। তবে এখন দেখার বিষয়, দর্শকের মন রাখতে পারি কিনা। আমি আমার জায়গা থেকে শতভাগ চেষ্টা করেছি। আর আমি যে রকম শান্তিপ্রিয় মানুষ, সে জায়গা থেকে সবকিছু নিয়েই আমার খুব চিন্তা হয়। এটা শুধু সিনেমা বলে যে তা নয়, আমার নাটকের কাজ নিয়েও আমি অনেকসময় চিন্তায় থাকি। সবমিলিয়ে একটু বাড়তি চিন্তা তো হচ্ছে, সঙ্গে নার্ভাসনেস তো আছেই। কারণ, যে কাজটার জন্য মাঝে দুই মাস অন্য কোন কাজ (নাটক) করি নি, ভালোবাসা দিবসের কোন কাজ করি নি; এটাকে স্যাক্রিফাইস করেছি। এখন সিনেমাটি যদি সবার কাছে ভালো লাগে এবং দর্শক যদি সেটি গ্রহণ করে তাহলে আমার কাছে ভালো লাগবে, মনে হবে আমাদের টিমটা এবং সবার পরিশ্রম সফল। আর যদি ভালো না হয় তাহলে ধরে নেবো, আমাদের আরও ভালো করতে হবে।

আপনার সহশিল্পীদের অনেকেই ওয়েবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই মাধ্যমে যাত্রা শুরু করতে এত সময় নিলেন কেন?

আমি সবসময়ই বলে এসেছি যে, আমি প্রতিটা মুহূর্তই ভালো কাজের অপেক্ষায় থাকি। নিজেকে নিজেক চ্যালেঞ্জ করতে ভালোবাসি। চ্যালেঞ্জ না থাকলে কিন্তু কাজের প্রতি বাড়তি ভালোবাসাটুকু তৈরি হয় না। যেহেতু নাটকে বিভিন্ন সময়ে অনেক গল্প এবং চরিত্রে কাজ করা হয়েছে তাই একটু অন্যরকম কিছুর অপেক্ষায় ছিলাম, যেখানে আমাকে একদমই নতুনভাবে দর্শকরা দেখতে পাবে। তার জন্যই আসলে সময় নেওয়া। কথায় আছে, সবুরে মেওয়া ফলে। এরমধ্যে অনেক কাজের প্রস্তাব তো পেয়েছি কিন্তু সেগুলো আমার মনের মত হয়নি। কিন্তু ‘রেডরাম’ এর গল্পটা পড়ার পর আমার মনে হলো, এটা আমার প্রথম সিনেমা হতে পারে। এরপরই কাজে নেমে পড়ি।

কেন মনে হলো যে, এই গল্পটাই আপনার জন্য পারফেক্ট এবং এটাই আপনাকে করতে হবে...

আমি থ্রিলার জনরা খুব পছন্দ করি। ব্যক্তিগতভাবে আমি থ্রিলার সিনেমাও দেখি অনেক বেশি। এই গল্পটাও ঠিক সেরকম। আমি যে চরিত্রটা করেছি তার নাম নীলা, এই নীলাকে ঘিরেই পুরো গল্পটা। তাছাড়া নীলা চরিত্রটা সম্পর্কে জানলাম তখন দেখলাম এখানে অভিনয়ের অনেক সুযোগ রয়েছে, চরিত্রটির অনেকগুলো লেয়ার আছে। এটা একটা বড় কারণ।

আর একটা কথা যদি বলি, এই সিনেমার মূল শক্তি-ই হচ্ছে এর গল্প। অনেকসময় একটা সাধারণ গল্পও ভালো অভিনয়ের কারণে উৎরে যায় কিন্তু এখানে গল্পটাই হচ্ছে সবকিছু। অভিনয়, নির্দেশনা বা সিনেমাটগ্রাফি সব বাদ দিয়ে যদি স্ট্রং কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেটা এই সিনেমার গল্প। এখানে যে ধরণের টুইস্ট রয়েছে সেটা ধরা খুবই মুশকিল।

চরিত্রটি সম্পর্কে একটু জানতে চাই...

নীলা খুবই কমপ্লেক্স একটা চরিত্র। এর বেশি কিছু না বলি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, এই গল্পটাতে রোমান্স, থ্রিলার, সাসপেন্স, অ্যাডভেঞ্চার-সবকিছুই আছে, আর সঙ্গে টুইস্ট তো আছেই।

ওয়েবে কাজের জন্য দুই মাস অন্যান্য কাজ থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। চরিত্রের জন্য প্রস্ততি কেমন ছিলো এবং নিজেকে কিভাবে প্রস্তত করেছেন?

আমরা প্রায় ২০ দিনের মত শুটিং করেছি। এর আগে, গল্পে নীলা চরিত্রের যে লুক, গেটাপ সেসব সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। এরপর সে অনুযায়ী যা যা করা প্রয়োজন ছিলো সেটা করার চেষ্টা করেছি। ইতিমধ্যে ট্রেলারে দেখেছেন নিশ্চয় যে, এখানে একটা অংশে আমাকে গর্ভবতী দেখানো হয়েছে। এই লুক এবং নিজেকে ঠিক ওইরকমভাবে প্রস্তত করাটা আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিলো। কারণ, এমনিতেও আমার যে ওজন, সে ওজনের সঙ্গে ওই লুকটা ঠিক যায় না। একটা মেয়ে যখন মা হয় তখন মধ্যে কিন্তু অনেক শারীরিক পরিবর্তন আসে। একটু একটু করে ওজন বাড়তে থাকে, তার শরীরের অবয়ব, মুখের গড়ন; সবকিছুতেই পরিবর্তন আসে। ওই পরিবর্তন আনাটা কিন্তু খুবই কঠিন কিন্তু তারপরেও লুকে বিষয়টিকে একদম রিয়েলস্টিক মনে হওয়ার মত যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। আর এখানে একটু ঝামেলাও ছিলো। কারণ, এই গর্ভবতী লুকের দৃশ্যায়ন শেষ করা পর আবার ফ্ল্যাশব্যাক অর্থাৎ ৭ বছর আগের সময়ের অংশটুকু শুটিং করতে হয়, যেখানে আমার কলেজের সময়কার টিনেজ লুকের দৃশ্য করতে হয়েছে। এই জায়গাটা খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিলো আমার জন্য। গর্ভবতী লুকের পরে আবার পুরোপুরি নিজেকে পরিবর্তন করে টিনেজ অংশের কাজ করাটা বেশ কঠিন ছিলো।

লুকের বিষয় নিয়ে আমি বেশ সচেতন ছিলাম। লুকের বিষয়ে এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম যে, আমার মুখটা দেখার পর সবার যেন রেডরাম সিনেমার কথা মনে পড়ে যায়। পুনর্জন্ম কিংবা চিরকাল আজ গল্পগুলোতে আমার যে লুক ছিলো ওই ছবি দেখলে যেমন সবাই বলতে পারে যে এটা পুনর্জন্ম বা চিরকাল আজ এর লুক, তেমনি রেডরামেও এমন কিছু করতে চেয়েছি যেটা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই যেন দর্শক বলতে পারে যে, এটা রেডরামের লুক। এরজন্যই মূলত আমার দুই চোখের আই ভ্রু কেটেছি। চুল ছোট করতে হয়েছে। একটা অংশে চুল অনেক লম্বা এবং আরেকটা অংশে একদম ছোট, ঘাড় পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। চুলের বিষয়টা মেকাপের মাধ্যমে করলেও ভ্রু এর অংশটুকু সত্যি সত্যি কাটতে হয়েছে, যেটা নিয়ে আমি বেশ ভয়ও পেয়েছিলাম। এই কাজটা করতে হয়েছে শুটিংয়ের আগের দিন। ভয় লাগছিল এ কারণে যে, যদি কোন কারণে কোন ভুল হয়ে যায় বা ভুল কাটা হয় তাহলে সেটা ঠিক করার আর কোন অপশন থাকবে না।

একজন শিল্পী তো আসলে সবার। আপনার যারা ভক্ত অনুরাগী আছেন তারা তো আপনার কাজ দেখবেই কিন্ত আপনার ভক্তদের বাইরে আরও যারা দর্শক আছে, তারা এই সিনেমাটি কেন দেখবে বলে আপনি মনে করেন?

আমাকে যারা ফলো করে থাকেন তারা নিশ্চয় জেনে থাকবেন যে, আমি সবার জন্যই কাজ করি। বিভিন্ন দিবস কিংবা উৎসব ঘিরে অনেক কাজ করা হয়। যারা একটু লাউড কমেডি কাজ পছন্দ করেন তাদের জন্য সেটা করি আবার যারা একটু শিক্ষামূলক কাজ পছন্দ করেন, সেসব দর্শকদের জন্য শিক্ষামূলক কাজ করি। আবার দর্শকদের কাছে কোন মেসেজ দেওয়ার থাকলে তাদের মত হয়েই ঠিক সেরকম কাজ করি। আবার সিরিয়াস গল্পের কাজও করি। সব দর্শকের টেস্ট তো একরকম না, আর সেটা সম্ভবও না। সব রকম দর্শকের কথা চিন্তা করেই কিন্তু সব জনরার কাজ করি। দর্শক যার যার পছন্দমতো সে সে কাজগুলো দেখবে।

আর ‘রেডরাম’ হচ্ছে থ্রিলার গল্পের। যারা থ্রিলার পছন্দ করেন, তারা দেখতে পারেন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছি। দর্শকরা দেখার পর হয়তো সেটা বুঝবেন। সিনেমাটি দিয়ে দর্শকদের কতটুকু সন্তুষ্ট করতে পারবো জানিনা, তবে হতাশ করবো না।

সবমিলিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো আপনার কাছে?

অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। ভিকি ভাইয়ার সঙ্গে অনেকগুলো কাজ করেছি, বরাবরই ভালো অভিজ্ঞতা। উনার টিমটা ছোট হলেও খুবই গোছানো এবং প্রত্যেকে খুবই পরিশ্রমী। তাদের সবার কাজের প্রতি এফোর্ট দেখলে এটা অনুভব হয় যে, তারা আসলেই ফিল্ম বিষয়টাকে ভালোবাসে। কাজের সময়ে তাদের সাপোর্ট এবং এফোর্ট দেখে আমি নিজে অনেক বেশি উৎসাহিত হই, আরও বেশি পরিশ্রম করতে ইচ্ছে করে। এই টিমের সবার প্রতি আস্থা, ভরসা, সম্মানের জায়গাটা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত