ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

নিম্নমানের কন্টেন্ট ভিউ হওয়াটা খুবই দুঃখজনক, সাথে চাপও: আরিয়ান

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২২, ১৭:৩৫  
আপডেট :
 ০৫ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৪

নিম্নমানের কন্টেন্ট ভিউ হওয়াটা খুবই দুঃখজনক, সাথে চাপও: আরিয়ান

দীর্ঘ এক দশকের ক্যারিয়ার তার, নির্মাণ করেছেন অসংখ্য নাটক ও টেলিছবি। তার নির্মাণে প্রেমের গল্পে অন্যরকম এক ভালো লাগা খুঁজে পায় দর্শক। যার কারণে তাকে দর্শকরা আখ্যায়িত করেন ‘ভালোবাসার গল্পকথক’ হিসেবে। তিনি মিজানুর রহমান আরিয়ান, সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা। আসছে ঈদেও দর্শকদের জন্য নিয়ে আসছেন নানা চমক, উপহার হিসেবে থাকছে ৫টি নাটক। ঈদের কাজ ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

প্রতিবারই ঈদে দর্শকদের নির্মাণ মুন্সিয়ানায় চমকে দেন। সে ধারাবাহিকতায় এবার ঈদের কাজগুলো প্রসঙ্গে জানতে চাই...

আমি সবসময় যে ধরণের কন্টেন্ট বানাই, এবারও তাই করেছি। যেহেতু ঈদ একটা বড় উৎসব, তাই উৎসবমুখর কিছু কন্টেন্টই তৈরি করার চেষ্টা করেছি। এটাও বলতে চাই যে, যখন যেসময়েই কন্টেন্ট নির্মাণ করেছি বা করি, আমি মাথায় রাখি গল্পটা। এরকম কিছু কাজ করতে চাই যেগুলো দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়, তাদের ভালো লাগে। মানুষ যেন কাজটাকে সবসময় মনে রাখে, এই বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করি; সেটা ঈদ হোক কিংবা ভালোবাসা দিবস।

এবার ঈদের জন্য ৫টি নাটক নির্মাণ করেছি, প্রত্যেকটাই ভালোবাসার গল্প। একেকটা গল্পে দর্শক একেকরকম স্বাদ পাবেন এবং আশা করি সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সবারই ভালো লাগবে।

এই মুহূর্তে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

এই মুহূর্তে শুধু টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি-ই না, পুরো পৃথিবীতেই একটা ভালো-খারাপ সময় বিরাজ করছে। কাজের প্রসঙ্গে সংক্ষেপে যদি বলি, ভালো কাজ যেমন হচ্ছে তেমনি মানহীন কাজও হচ্ছে এখানে।

ওটিটি প্লাটফর্মের কারণে নতুন এই মাধ্যমে শিল্পী-নির্মাতাদের ব্যস্ততা বাড়ছে। এতে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে নেগেটিভ প্রভাব পড়ছে না?

নতুন এই মাধ্যমের কারণে এখানে যেমন ভালো ভালো কাজ হচ্ছে তেমনি নির্মাতারা স্বাধীনতাও পাচ্ছে। এটা কিন্তু একটা পজেটিভ দিক। এখানে কাজের পরিসর বড় হচ্ছে, ভালো বাজেট থাকছে; যার কারণে ওটিটিতে শিল্পীদের কাজ বাড়ছে। স্বভাবতই টেলিভিশনে একটা শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। তবে, এই শূন্যতা বেশিদিন থাকবে না, কেউ না কেউ এই জায়গায় আসবেই। একটা মাধ্যম থেকে যখন আরেকটা মাধ্যমে মানুষ ঝুঁকবে তখন একটা মাধ্যমে একটু চাপ পড়বে; এটা খুবই স্বাভাবিক।

তবে এটা ঠিক, এতে করে টেলিভিশনে কিছু মানহীন কাজ হচ্ছে। এরজন্য যেটা করা উচিত সেটা হলো, কন্টেন্টের সংখ্যা কমাতে হবে এবং কোয়ালিটি বাড়াতে হবে।

প্রায়সময়ই নির্মাতাদের বলতে শোনা যায়, দেশে শিল্পী সংকট। জানামতে, এনালিস্টেড শিল্পী রয়েছেন প্রায় হাজারের মত, তারপরও কেন শিল্পী সংকট আর বাকিদের কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না?

শিল্পী সংকট হয়তো আছে কিছুটা কিন্তু যেভাবে বলা হচ্ছে ঠিক ততটা বলে আমার মনে হয় না। আর আমার গল্পে যদি প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে সিনিয়র শিল্পী কিংবা অনেক পুরনো আবার খুব জনপ্রিয় তাদের নিয়েই আমি কাজ করি। আবার একদম নতুনদের নিয়েও কিন্তু কাজ করছি।

যাদের মার্কেট ভ্যালু বেশি তাদেরই কাজ বেশি হয়, সেটা হোক শিল্পী কিংবা নির্মাতা। এতে করে অন্যান্য যারা শিল্পী কিংবা নতুনরা ভালো কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর দায়ভার আসলে কার?

এখানে আসলে দায়ভারের কিছুই নেই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পী কিংবা নির্মাতা যারা জনপ্রিয় তারা হয়তো বিশভাগের মত কাজ করছেন। তাহলে বাকি আশি ভাগ কাজ কারা করছে? একটা উৎসবে যদি পাঁচ শতাধিক নাটক নির্মিত হয়, সেখানে যারা জনপ্রিয় তাদের নাহয় ৪০/৫০টা কাজ থাকে। তাহলে বাকি কাজ কারা করছে? সেগুলো তো অন্যান্য শিল্পী কিংবা নির্মাতারা করছেন। এটা হতে পারে, অন্যান্যদের কাজ হয়তো সেভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না বা সঠিক মানের হচ্ছে না। শুধু জনপ্রিয়রাই বা জনপ্রিয় বলে কাজ বেশি করছেন, এটা আসলে ভুল।

নতুনদের নানান সময়েই অভিযোগ থাকে যে, তারা ভালো কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। তাদের সুযোগ না পাওয়ার কারণটা কি?

আমার কাছে কখনও এমনটা মনে হয়নি। কারও যদি মেধা থাকে তাহলে অবশ্যই সে ভালো কাজের সুযোগ পাবে বা পাচ্ছে। যারা বলছেন তাদের জন্য হয়তো এখনও সঠিক সময়টা আসেনি। মান, গুণ, পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে একটা সঠিক সময় দরকার। তাদের সততা, পারফর্মেন্স, ডেডিকেশন সবকিছু যখন একসঙ্গে মিলে যাবে তখন তারাও সে সুযোগটা পাবে বলেই আমি মনে করি। কারণ, আজকে যারা জনপ্রিয় তারাও কিন্তু একসময় নতুন ছিল। নতুনরাই কিন্তু আসবে, শুধু সঠিক সময়টার অপেক্ষা করতে হবে।

গেল কয়েকবছরে বাজেটও বেড়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী ভালো কাজের সংখ্যা কতটুকু বেড়েছে বলে আপনার মনে হয়?

বাজেট বেড়েছে কিছুটা তবে সেটা এক দাগে, কিন্তু সন্তোষজনক হারে নয়। বাজেটের তুলনায় এখন খরচও অনেক বেড়েছে, প্রত্যেকটা বিভাগেই খরচ অনেক বেড়েছে। ওভারঅল কন্টেন্টের জন্য যে সন্তোষজনক বাজেট দরকার সেটা কিছুটা বেড়েছে যার কারণে এখন ভালো ভালো কাজ হচ্ছে কিন্তু সেটা আরও বাড়া উচিত। তাহলেই আরও অনেক ভালো এবং বেশি কন্টেন্ট তৈরি হবে।

এখন তো সবাই ভিউয়ের দিকেই ঝুঁকছে বেশি। যার কারণে ভিউ পেতে অনেকে নিম্নমানের কন্টেন্ট কিংবা সুরসুরিতে ভরপুর কন্টেন্ট নির্মাণ করছে। এতে সংস্কৃতি ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে না?

ভিউয়ের কারণে এরকম একটা নেগেটিভ প্রভাব তো পড়ছেই। যখন একটা ভালো কাজের চেয়ে অন্যান্য (নিম্নমানের কনটেন্ট) কাজের ভিউ বেশি হয় তখন প্রযোজকরা এই ধরণের কন্টেন্ট বানাতে আগ্রহী হয়। এখানে তাদেরকেও দোষ দিয়েই লাভ নেই। কারণ, ভিউ এখন লগ্নিকৃত টাকা উঠে আসার একটা মাধ্যম। আমি এই দায়ভারটা দর্শকদেরকেই দেবো। তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বলছি, তারা (দর্শকরা) যেন এই দায়ভারটা নেয়। ভালো কন্টেন্ট যেন বেশি ভিউ পায়, জনপ্রিয় হয়; এই দায়িত্বটা দর্শকদের নিতে হবে। ভালো কন্টেন্ট যত বেশি ভিউ পাবে, জনপ্রিয় হবে ততই পরিচালক এবং প্রযোজকরারা এই ধরনের কন্টেন্ট বানাতে বেশি আগ্রহী হবে।

দর্শকদেরকে ভালো কাজের পাশে থাকতে হবে, ভালো কাজ দেখতে অন্যকে উৎসাহী করতে হবে। দর্শকরা চাইলেই সেটা সম্ভব। আমি যদি ২০১৭ কিংবা ১৮/১৯ সালের কথা বলি, সেসময় পারিবারিক গল্প জনপ্রিয়তা পেয়েছে, প্রেমের গল্প জনপ্রিয়তা পেয়েছে যার কারণে নির্মাতারা সেসব গল্পের নির্মাণে ঝুঁকেছে বেশি। এখন যদি ভালো গল্প রেখে নিম্নমানের কন্টেন্ট জনপ্রিয়তা পায় তখন তো সে ধরণের কন্টেন্টই বেশি নির্মিত হবে; এটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত