ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

সিনিয়র হোক কিংবা জুনিয়র, প্রত্যেকের কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করি: সিয়াম

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৭:৩২

সিনিয়র হোক কিংবা জুনিয়র, প্রত্যেকের কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করি: সিয়াম

এবারের ঈদটা যেন ছিল সিনেমার। বহু বছর পর সিনেমা নিয়ে এমন জোয়ার বইতে দেখা গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। হলমুখী হয়েছেন দর্শক। এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ভাল সিনেমার বিকল্প নেই। এমনটাই মনে করছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে তিন সিনেমা সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের, রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। সেগুলো হলো- ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘দামাল’ ও ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’। সিনেমা মুক্তি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ নায়কের সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

দর্শককে হলমুখী করার জন্য শিল্পী থেকে শুরু করে নির্মাতা; সবারই নানারকম প্রচেষ্টা ছিল। অনেকবছর পর ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমার নতুন একটা জোয়ার বইলো। বিষয়টি কেমন লাগছে?

এটা খুবই আশা জাগানিয়া আমাদের সবার জন্য যে দর্শকরা আবারও হলে আসতে শুরু করেছেন। আমি সবসময় পজেটিভ ভাবতে পছন্দ করি। ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে, সঠিক প্রচারণা হচ্ছে; দর্শক সেগুলো গ্রহণ করছেন, হলে আসছেন। সিনেমা দেখে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছেন। এই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখা জরুরি। ইন্ডাস্ট্রির সবার এপ্রিসিয়েশনটা জরুরি। সবাই সবার পাশে থাকবে, কাজকে সাপোর্ট করবে। নিজেদের মধ্যকার ঝামেলাগুলো সামনে না এনে প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে দাঁড়ালে সিনেমাতে সুবাতাস বইবেই।

দর্শককে হলে আনার ক্ষেত্রে প্রচারণার বিকল্প নেই। বলা হয়ে থাকে প্রচারেই প্রসার। কিন্তু এখন দেখা যায়, সিনেমা মুক্তির আগে প্রযোজক/পরিচালক আর নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে নানারকম অভিযোগ নিয়ে হাজির হন। এতে করে সিনেমার কিংবা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হচ্ছে না?

প্রত্যেক শিল্পীই চায় যে, সে তার সিনেমাটার প্রচারণা সুন্দরভাবে করবে এবং তার দর্শক কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষীদের আমন্ত্রণ জানাবে সিনেমাটি দেখার জন্য। একজন শিল্পী যখন কাজ করে তখন কাজটা কিন্তু তার নিজের, এখানে তার অনেক কষ্ট, পরিশ্রম থাকে। এখন কেউ যদি শেষদিকে এসে কোন একটা অভিযোগ তুলে তাহলে বুঝতে হবে কোন জায়গায় গেলে কেউ অভিযোগ করতে বাধ্য হয়! এটা করতে গিয়ে দিনশেষে সিনেমাটিরই ক্ষতি হচ্ছে বা হয়। ইন্ডাস্ট্রির তো হচ্ছেই। আমরা সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছি নতুন নতুন উপায়ে কিংবা দৃষ্টিনন্দন কিছুর মাধ্যমে কাজগুলোর প্রচারণা করতে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা তো করে যাচ্ছি।

নাটক হোক কিংবা সিনেমা; অন্যের কাজকে এপ্রিসিয়েশন করতে সমস্যাটা কোথায় বলে আপনার মনে হয়...

এটা একদিনে তো আর হয় না, এরজন্য সময় লাগবে। এখন কিন্তু মেজরিটি সংখ্যাই অন্যের কাজকে এপ্রিসিয়েট করছে, যেটা খুবই ভালো দিক। এবার ঈদের সিনেমার কথাই ধরা যাক, সবাই কিন্তু যার যার জায়গা থেকে সাপোর্ট করছেন, সিনেমা দেখার আহবান জানাচ্ছেন। এভাবে যখন সবাই সবার কাজের পাশে দাঁড়াবে, ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকবে তখন অটোমেটিক্যালি এই সিস্টেমটা সচল হয়ে যাবে। এরজন্য সময় দিতে হবে।

বড় পর্দায় পাঁচ বছরের ক্যারিয়ার আপনার। অনেকেই বলে থাকেন সিনিয়ররা নাকি জুনিয়রদের সাপোর্ট করেন না। এই কথাটার সঙ্গে আপনি কতটুকু একমত?

একমত নাকি দ্বিমত, সে বিষয়ে যেতে চাচ্ছি না আমি। আমি বলবো, আমার জায়গা থেকে অনেকেরই অনেক সাপোর্ট পেয়েছি আমি। আমি অনেক লাকি, গ্রেটফুল। এমনও হয়েছে সেন্সরে হোক কিংবা হলে হোক; আমার সিনেমা দেখে কেউ যখন আমাকে ফোন করে বলে, 'তোমার সিনেমাটা দেখেছি, তুমি অনেক ভালো করেছো', তখন নিজের মধ্যেই একটা আত্মবিশ্বাস জন্মায়, একটু সাহস পাই। সিনিয়রদের কাছ থেকে আমি যথেষ্ট স্নেহ পেয়েছি, পাচ্ছি।

তাছাড়া যখন নতুন নতুন ইউনিটে কাজ করি তখন সেটে সিনিয়র, জুনিয়র অনেক শিল্পী-ই থাকেন। এসব জায়গাগুলোতে অনেকেই হয়তো ক্যাপ্টেন্সি নিতে চান বা একটু অধিকার দেখাতে চান! আমি বিশ্বাস করি, একটা প্রজেক্টের ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ হচ্ছে পরিচালক। পরিচালকের ব্রিফ অনুসারে সেটে আমি আমার চরিত্রটাকে কিভাবে বেস্ট দেওয়া যায়, সবসময় সেটাই ভাবি। অনেক সময় আমার মাথায় যদি কোন প্ল্যান আসে যে, এটা এভাবে না করে ওভাবে করলে ভালো হবে; তখন আমি সেটা পরিচালকের সঙ্গে শেয়ার করি। একটা কমফোর্ট জোন তৈরি করার চেষ্টা করি যেন সিনিয়র হোক কিংবা জুনিয়র কেউই যেন অসম্মানিত না হোন বা সবার মধ্যে বোঝাপড়াটা যেন ভালো হয়। এতে করে কাজটা সুন্দরভাবে করা যায়। প্রত্যেকের কাছ থেকেই আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে, আমি শেখার চেষ্টা করি সবার থেকে।

সিনেমার নতুন এই জোয়ারে একসঙ্গে তিনটি সিনেমা সেন্সর পেয়েছে সম্প্রতি। দুটি ছবি মুক্তির ঘোষণাও এসেছে। এ বিষয়ে কিছু জানতে চাই...

আলহামদুলিল্লাহ। অপারেশন সুন্দরবন, দামাল ও অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন; এখান তিনটি সিনেমা তিন ধরণের। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে আগামী মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে। এই সিনেমাটাতে দর্শকরা যে শুধু র‍্যাবের একটা অভিযান দেখবেন; বিষয়টা তেমন নয়। একটা সুন্দরবনের গভীর থেকে গভীরতর অনেক কিছুই দেখতে পাবেন এখানে, মোটকথা সুন্দরবনকে কেউ যতটা না উপভোগ করতে পেরেছেন বা দেখতে পেরেছেন এখানে একসঙ্গে অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। আমরা যারা সুন্দরবন ঘুরতে গিয়েছি, তারা হয়তো সেখানকার অনেক কিছুই দেখতে পারিনি বা সম্ভব হয়নি। এই সিনেমার মাধ্যমে সুন্দরবনকে উপভোগ করতে পারবেন। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে র‍্যাবের অভিযানের বাইরেও সেখানকার প্রত্যেকের আলাদা করে একটা জীবন দেখতে পাবেন।

আর ‘দামাল’ নিয়ে যদি বলি, ফুটবল খেলে অর্থ উপার্জনের মধ্য দিয়েও যে একটা দেশের যুদ্ধে অবদান রাখা যায়, এমন নজির পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। এটা একদম আমাদের গল্প, একান্তই আমাদের নিজেদের ইতিহাস, গল্প। সেই গল্পই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আমি ছাড়াও শরিফুল রাজ, বিদ্যা সিনহা মিম, সুমিসহ অনেক ব্রিলিয়ান্ট শিল্পি রয়েছেন। অক্টোবরেই দামাল মুক্তি পেতে যাচ্ছে। আর ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ যেহেতু শিশুতোষ সিনেমা তাই স্কুলগুলো বন্ধ হওয়ার সময়ে ছবিটা মুক্তি দিলেই ভালো হয়। তাহলে তারা সেসময়টাতে তারা সিনেমাটি দেখতে পারবে। আমার একটা স্বপ্ন ছিলো শিশুতোষ সিনেমা করার, রাতুলের দিন রাতুলের রাত গল্পের রাতুল হওয়ার। আমি চেয়েছিলাম সেই গল্পের সবগুলো বাচ্চার রাতুল ভাইয়া হতে। আমার সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে।

কিছুদিন আগেই কলকাতা থেকে ঘুরে আসলেন। ‘লন্ডন’ সিনেমাটির সর্বশেষ আপডেট কি?

সবার একসঙ্গে কাজটি নিয়ে নানারকম আলোচনার প্রয়োজনেই কলকাতায় যাই। বুম্বা দার ওখানে যাই। সেখানেই কাজটি নিয়ে আমরা নানারকম পরামর্শ করি, ফাইনাল ড্রাফট রেডি করি। বুম্বা দা অসম্ভব ভালো একজন মানুষ যিনি জুনিয়রদেরকে নানারকম উৎসাহ দেন। উনি আমাদের দেশের প্রায় কাজই দেখেন, সবকিছুর খোঁজ খবর রাখেন। আমাদের কাজগুলোর প্রশংসা করেন। সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে অক্টোবরে, লন্ডনে।

উল্লেখ্য, এই সিনেমার বাইরেও সিয়ামের হাতে রয়েছে রাস্তা ও ইন দ্য রিং সিনেমা। রায়হান রাফির পরিচালনায় রাস্তাতে সিয়ামের বিপরীতে অভিনয় করবেন স্নিগ্ধা। এ বছরের শেষান্তে ছবিটির শুটিং শুরু হতে পারে। অন্যদিকে ইন দ্য রিং, আন্তর্জাতিক এই সিনেমাটি পরিচালনা করবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র নির্মাতা অলকা রঘুরাম। এখানে সিয়ামের বিপরীতে অভিনয় করবেন বলিউড তারকা মিথিলা পালকার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুর দিকে এর শুটিং শুরু হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত