ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

কংগ্রেসে এতো নারী প্রার্থী কেনো, জানালেন প্রিয়াঙ্কা

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:০২

কংগ্রেসে এতো নারী প্রার্থী কেনো, জানালেন প্রিয়াঙ্কা
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

এক সাধারণ ভারতীয়ের প্রশ্ন, উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে এতো নারী প্রার্থী কেনো দিয়েছে দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস? অনলাইনে এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীই।

প্রিয়াঙ্কা বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে এমনিতে কংগ্রেসের অবস্থা বেহাল। কিন্তু তার মধ্যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবার নতুন পথে হেঁটেছেন।

বুধবার ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কংগ্রেস প্রথম যে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেছে, তাতে ৪০ শতাংশ নারী ও ৪০ শতাংশ যুব প্রার্থী। সাধারণত, এতোজন নারী ও যুবককে কখনো প্রার্থী করেনি কংগ্রেস বা অন্য বড় দল।

শুধু নারীদেরই নয়, প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী করেছেন উন্নাওয়ে ধর্ষিতার মাকে, প্রার্থী করেছেন এক আশা কর্মীকে। আশা কর্মী মানে যিনি সামান্য অর্থের বিনিময়ে গ্রামেগঞ্জে মেয়ে ও শিশুদের টিকা দেন, গর্ভবতী নারীদের সাহায্য করেন। শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রিয়াঙ্কা জবাব দিয়েছেন কেন এই ধরনের নারীদের তিনি প্রার্থী করেছেন।

শশাঙ্ক সিংয়ের প্রশ্ন ছিল, এখন রাজনীতি হয় অর্থ ও বাহুবলের ভিত্তিতে। সেখানে কেন উন্নাওতে ধর্ষিতার মা বা আশা কর্মীকে প্রার্থী করা হলো? প্রিয়াঙ্কার জবাব, ‘তারা যে লড়াই করেছেন, যে অত্যাচার সহ্য করেছেন, তারপর আমার ও পুরো দলের মনে হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক শক্তি দেয়া উচিত। অন্তত সেই সুযোগটুকু যেন তারা পান। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক লড়াই লড়ুন। আর কংগ্রেস তাদের সঙ্গে আছে। আমরা তাদের সমর্থন করব, প্রচারে যাব।’

প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমরা চাই, ওরা পুরো দেশকে নিজেদের কথা বলুন। কীভাবে তারা অত্যাচারিত হয়েছেন, তা তুলে ধরুন। প্রশাসন ও পুলিশের ব্যবহারের কথা সবাইকে জানান। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, আমরা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে এ অত্যাচারিত মানুষদের হাতে তুলে দিতে চাই।’

কংগ্রেস নেত্রীর বক্তব্য, ‘আমি বোনেদের কাছে, বাকি নারীদের কাছে বলতে চাই, যাদের প্রার্থী করা হয়েছে, সকলে লড়াই করেছেন। কেউ কম, কেউ বেশি। উন্নাওয়ের মা-র কথা ভাবুন। মেয়েকে ধর্ষণ করা হলো। বাবা পুলিশের কাছে গেলে তাকে মারা হলো। মামলার শুনানির জন্য পুরো পরিবার যাচ্ছিল, অ্যাক্সিডেন্ট করানো হলো। চাচাকে জেলে ভরা হলো। বৌদিসহ পাঁচজন মারা গেলেন। এই অত্যাচার সহ্য করেছে ওই পরিবার। তার অধিকার নেই ভোটে লড়ার?’

প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘তাই আমি আবেদন করছি, নারীদের সমর্থন করুন। রাজনীতিতে আসতে গেলে অনেক লড়াই লড়তে হয়। রিতু সিং পঞ্চায়েতে লড়তে গিয়েছিলেন। তার পোশাক ছিঁড়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি তখন সমাজবাদী পার্টিতে ছিলেন। তাকে আমরা সুযোগ দিয়েছি বিধানসভায় লড়ার।’

প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমি চাই, পরের ভোটে শুধু ইতিবাচক কথা হোক। সমাজকে বিভাজন করার কথা, দেশের বিভাজনের কথা যেন বলা না হয়। এমন রাজনীতি হোক, যা আমজনতার কাছে দায়বদ্ধ, যা মানুষের সমস্যা সমাধানের কথা বলে, উন্নয়নের কথা বলে। এখন যেন শুধু ইতিবাচক প্রচার করা হয়।’

প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য, ‘জনসংখ্যার নিরিখে মেয়েরা দেশের ৫০ শতাংশ। কিন্তু রাজনীতিতে তাদের উপস্থিতি কম। তাদের রাজনীতিতে আসতে দেয়া হয় না। আমরা এ পরিস্থিতিটা বদলাতে চাই। আমরা চাই, মেয়েদের বিষয়ে যেন আর অবহেলা করা না হয়। একইরকমভাবে আমরা যুবকদের কথা বলছি। তারা ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে। নেতিবাচক কথা বলে রাজনীতিতে লাভ পাওয়া যায়, কিন্তু দেশ দুর্বল হয়। আমরা চাই, ইতিবাচক রাজনীতি করা হোক।’

প্রিয়াঙ্কার এবারের অন্যতম স্লোগান, ‘লড়কি হুঁ, লড় সাকতি হুঁ’ (আমি মেয়ে, আমি লড়াই করতে পারি)। প্রশ্ন ছিল, এরকম কোনো সময় কি তার জীবনে সম্প্রতি এসেছে?

প্রিয়াঙ্কার জবাব, ‘কিছুদিন আগে লখিমপুর খেরি যেতে চাইছিলাম, সেখানে পীড়িতদের সঙ্গে দেখা করতে। গভীর রাতে লখনউ থেকে বের হলাম। চারপাশ ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। আমি জানতে চাই, কোন আইনে আমাদের আটকাচ্ছেন? পুলিশ কিছু বলতে পারে না। আমি গাড়ি নিয়ে বের হই। একটু দূরে টোল ছিল। সেখানে পুলিশ সব জ্যাম করে রেখেছিল। আমরা পাশ কাটিয়ে বের হয়ে যাই।’

প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘পেছনে পুলিশ আসতে থাকে। আমি তখন চালককে বলি, হাইওয়ে দিয়ে যাব না। তাহলে পুলিশ যেতে দেবে না। গ্রামের ভিতর দিয়ে যাব। নিচে নেমে যাও। খেতের মধ্যে আলো ও ইঞ্জিন বন্ধ করে চুপচাপ থাকো। আমার পুরুষ সঙ্গীরা ভয় পাচ্ছিলেন। রাত দেড়টার সময় এই ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু পুলিশ আমাদের দেখতে না পেয়ে হাইওয়ে দিয়ে এগিয়ে যায়। আমরা গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করি। তখন মনে হচ্ছিল, এটা লড়কি হুঁ, লড় সকতি হুঁ মুহূর্ত।’

প্রিয়াঙ্কার মতে, ‘উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, বিজেপি- সবারই শাসন মানুষ দেখেছেন। তাদের পরীক্ষা করতে পেরেছেন তারা। তাই তারা একবার কংগ্রেসকে সুযোগ দিন। আমাদের রাজনীতির সঙ্গে অন্যদের রাজনীতির ফারাক হলো- আমরা মনে করি, জনতাকে জবাব দেয়ার দায়বদ্ধতা আমাদের আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এটা ভাবি না, জাতি বা ধর্মের কারণে পাঁচ বছর পরপর আমরা ভোট পেয়ে যাব। জনতার প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে কাজ করতেই হবে। না থাকলে কেউ কাজ করবে না। সেজন্য সমস্যার সমাধান হয় না। কংগ্রেসের সরকার থাকলে বিজেপি প্রশ্ন করে, আমরা কী করেছি? দেশ যে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে, তার জন্য কংগ্রেস দায়ী।’

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে কিছু করেনি, একমাস আগে কিছু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে মাত্র।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ টিটি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত