ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইউক্রেন সঙ্কট: মধ্যস্থতা করতে চান এরদোয়ান

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:১৯  
আপডেট :
 ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:১৪

ইউক্রেন সঙ্কট: মধ্যস্থতা করতে চান এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইউক্রেন সঙ্কট সমাধানে মধ্যস্থের ভূমিকা পালনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তুরস্ক এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব তুরস্ক সমর্থন করে। খবর বিবিসির।

এর আগে এরদোয়ান একথাও বলেছেন যে, রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত।

এরদোয়ান বৃহস্পতিবার কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির যেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে এই সফরের সময় ইউক্রেনে তুর্কি ড্রোন তৈরির একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হবে বলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানাচ্ছেন।

তুরস্কের সাথে রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশেরই ভাল সম্পর্ক রয়েছে। যদিও তুরস্ক গত বছর ইউক্রেনকে ড্রোন বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়ায় রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়েছিল।

ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার বিপুল সেনা সমাবেশ নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তা নিরসনে বিশ্ব নেতাদের উদ্যোগে যোগ হয়েছে এরদোয়ানের আজকের সফর।

ইউরোপে ন্যাটো জোটের দেশগুলোকে সহযোগিতা করতে তিন হাজার সৈন্য মোতায়েনের যে ঘোষণা বুধবার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া তার নিন্দা জানিয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা ‘ধ্বংসাত্মক’ পদক্ষেপ। এতে সামরিক উত্তেজনা আরও বাড়াবে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পথ সংকুচিত করবে।

এরদোয়ান ন্যাটো নেতাদের থেকে ভিন্ন কূটনৈতিক পথ নিতে চাইছেন এবং তুরস্কের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এরদোয়ান এই সঙ্কটে কোন এক পক্ষের হয়ে কাজ করবেন না।

কিয়েভের উদ্দেশ্যে রওনা হবার আগে আঙ্কারায় এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক ওই অঞ্চলে শান্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করবে এবং তিনি আশা করছেন, তিনি একজন মধ্যস্থের ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

এরদোয়ান বলেন, ‘ইউক্রেন যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে এবং এলাকায় যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে আমরা তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সব প্ল্যাটফর্মেই বলেছি, আমাদের কৌশলগত পার্টনার এবং প্রতিবেশি দেশ ইউক্রেনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বকে আমরা সমর্থন করি।’

তিনি দুই পক্ষকেই সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংলাপের মাধ্যমে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এই দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ‘আমি আবার জোর দিয়ে বলছি, এলাকায় শান্তি ও আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তুরস্ক তার ভূমিকা পালনে প্রস্তুত।’

বিবিসি মনিটরিং জানাচ্ছে, এরদোয়ানের এই বক্তব্য বেসরকারি টিভি সংবাদ চ্যানেল এনটিভিসহ তুরস্কের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে প্রচারতি হয়েছে।

এরদোয়ান আরও বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন চীন সফর শেষ করে তুরস্কে যাবেন বলে কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই দুটি সফর শেষ হবার আগে এবং তাদের সাথে কথাবার্তা হওয়ার আগে (ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সাথে) এ নিয়ে (আঙ্কারা এ বিষয়ে কী করবে) আঁচ অনুমান করা ঠিক হবে না।’

লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্র বলছে, তুরস্কের রুশ এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার সিদ্ধান্তে দেশটিকে ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে প্রায়শই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। ফলে একদিকে ইউক্রেনের প্রতি জোরালো কূটনৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে জটিল দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক অক্ষত রাখা- এ দুইয়ের মধ্যে কঠিন ভারসাম্য বজায় রাখার বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে তুরস্ককে।

অন্যদিকে, রাশিয়া এখন এরদোয়ানের প্রস্তাবে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে পুতিনের সাথে আলাদাভাবে আলোচনাকারীর সংখ্যা যতটা সম্ভব কম হোক। রুশ নেতাও আপাতদৃষ্টিতে চাইছেন হোয়াইট হাউসের সাথে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন সঙ্কটের সমাধান করতে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এরদোগানের ব্যাপারে তিনি এখনও পর্যন্ত কোন আগ্রহ দেখাননি।

তাই এরদোয়ানের মধ্যস্থতার প্রস্তাব কোনদিকে মোড় নেয় সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।

বিবিসি মনিটরিং জানাচ্ছে তুরস্কের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এরদোয়ানের ইউক্রেন সফর ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে।

এরদোয়ানের ইউক্রেন সফরের একদিন আগে এই সঙ্কট নিয়ে আলোচনায় অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা জানিয়েছে, নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে দুই হাজার মার্কিন সেনা পাঠানো হবে পোল্যান্ড এবং জার্মানিতে। এছাড়া আরও এক হাজার সেনা যারা ইতোমধ্যেই জার্মানিতে মোতায়েন রয়েছে, তাদের জার্মানি থেকে রুমানিয়ায় পাঠানো হবে।

রাশিয়া এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, এটা অবিবেচক ও অযৌক্তিক পদক্ষেপ।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, তুরস্কের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আলোচনা চালানোর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অলেক্সি রেজনিকভ বৃহস্পতিবার বলেন, ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে শান্তি আলোচনা ইস্তানবুল বা তুরস্কের অন্য কোন শহরে হলে ইউক্রেনের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু রাশিয়াকে এ ব্যাপারে রাজি হতে হবে।

সংঘাত এড়ানো নিয়ে এ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে মূলত বেলারুসের রাজধানী মিনস্কে। কিন্তু ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা সাম্প্রতিক কয়েক মাসে বাড়ার পটভূমিতে রাশিয়ার সঙ্গে বেলারুসের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

সরকারপন্থী হেবারটার্ক এবং সিএনএন টার্ক সংবাদ চ্যানেল রুশ-ইউক্রেন উত্তেজনা নিয়ে এটাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বৈঠক বলে জানাচ্ছে।

সরকারপন্থী সংবাদপত্র ইয়েনি সাফাক জানিয়েছে ‘ডনবাসের ক্রামাটোরস্ক-এর বাসিন্দারা রুশ-ইউক্রেন সঙ্কট সমাধানে তুরস্কের সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের প্রস্তাবে সন্তুষ্ট।’

এই পত্রিকা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উদ্ধৃত করে আরও লিখেছে, ‘আমেরিকা রাশিয়াকে যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যেতে আগ্রহী’ এবং ‘ইউক্রেন শুধুমাত্র এর একটা হাতিয়ার’।

সরকারি আরেকটি পত্রিকা মিলিয়েত শিরোনাম করেছে, ‘আমেরিকা সঙ্কটে উসকানি দিচ্ছে!’

পত্রিকাটি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হাসান কোনির উদ্ধৃতি দিয়েছে, যিনি বলেছেন, ‘আমেরিকা বোঝাতে চাইছে যে, এই সঙ্কট একটা উত্তপ্ত সংঘাতে রূপ নিতে যাচ্ছে এবং সে কারণে ন্যাটোকে আরও সুসংহত করা প্রয়োজন এবং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ ও ইউরেশিয়া অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি শক্ত করতে চাইছে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ টিটি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত