ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাপ্পী লাহিড়ী থেকে ডিস্কো কিং

  ওমর ফারুক

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:২৪

বাপ্পী লাহিড়ী থেকে ডিস্কো কিং
বাপ্পী লাহিড়ী

বাপ্পী লাহিড়ী, পুরো নাম আলোকেশ বাপ্পী লাহিড়ী। হিন্দী চলচ্চিত্র শিল্প-সহ বাংলা গানের গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও, সঙ্গীত জগতে তিনি বাপ্পী-দা নামেও সমধিক পরিচিত।

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সমৃদ্ধ এক পরিবারে ১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পী লাহিড়ী। তাঁর বাবা অপরেশ লাহিড়ী ছিলেন একজন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়ীও ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও গায়িকা, যিনি শাস্ত্রীয় ঘরানার সঙ্গীত এবং শ্যামা সঙ্গীতে বিশেষ পারঙ্গমতা দেখিয়েছিলেন। তাদের পরিবারের একমাত্র সন্তান বাপ্পী লাহিড়ী।

বছর তিনেকের ছোট্ট আলোকেশ হাতে একটা তবলা পেয়েছিল। তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল তার তবলার তালিম। বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার এবং এস. মুখার্জী ছিলেন সম্পর্কে তার মামা। পিতা-মাতার সান্নিধ্যে থেকেই তিনি সঙ্গীতকলায় হাতে খড়ি ও প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি ১৯ বছর বয়সে ‘দাদু’ (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন।

তখনই তিনি পাড়ি দেন মুম্বাই নগরীতে। শাস্ত্রীয় সংগীত এবং তবলা থেকে শুরু হয় তার যাত্রা। মুম্বাইতে গিয়েই বাপ্পী লাহিড়ী নাম লেখান বলিউডের খাতায়।

১৯৭৩ সালে হিন্দী ভাষায় নির্মিত ‘নানহা শিকারী’ ছবিতে তিনি প্রথম গীত রচনা করেন। এরপর তাহির হুসেনের ‘জখমী’ (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এতে তিনি গীত রচনাসহ গায়কের দ্বৈত ভূমিকায় অংশ নেন। মোহাম্মদ রফি এবং কিশোর কুমারের সঙ্গেও দ্বৈত সঙ্গীতে অংশ নেন। তার পরের চলচ্চিত্র হিসেবে ‘চালতে চালতে’ ছবিটির গানও দর্শক-শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। রবিকান্ত নাগাইচের ‘সুরক্ষা’ ছবিতে গান গেয়ে সঙ্গীতকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পান।

ডিস্কো কিং’-এর স্বরচিত গানগুলি হলো, এক বার কহো (১৯৮০); সুরক্ষা; ওয়ারদাত; আরমান; চলতে চলতে; কমাণ্ডো; ইলজাম; পিয়ারা দুশমন; ডিস্কো ড্যান্সার; ড্যান্স ড্যান্স; ফিল্ম হি ফিল্ম; সাহেব; টারজান; কসম পয়দা করনে ওয়ালে কি; ওয়ান্টেড: ডেড অর এলাইভ; গুরু; জ্যোতি; নমক হালাল; শরাবী (১৯৮৫: ফিল্মফেয়ার সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার); এইতবার; জিন্দাগী এক জুয়া; হিম্মতওয়ালা; জাস্টিস চৌধুরী; নিপ্পু রাব্বা; রোদী ইন্সপেক্টর; সিমহাসনম; গ্যাং লিডার; রৌদী অল্লাদু; ব্রহ্মা; হাম তুমহারে হ্যায় সনম এবং জখমী।এছাড়াও তিনি মালায়ালম চলচ্চিত্র (কেরালা) দ্য গুড বয়েজ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

দুর্গাপূজাসহ যে কোন অনুষ্ঠানে ‘আই এম এ ডিস্কো ড্যান্সার…’ গানটা এখনো বাজে। আর তার সাথে মিঠুন চক্রবর্তীর নাচের স্টেপ। আর এই কালজয়ী গানটার স্রষ্টা হলেন বাপ্পী লাহিড়ী। দুই বাঙালি কিভাবে বলিউড কাঁপাতে পারে, এই গানটা ছিল তারই নজির। ১৯৮০’র দশকে মিঠুন চক্রবর্তী এবং বাপ্পী লাহিড়ী একসাথে আরও কিছু ভারতীয় ডিস্কো চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এছাড়াও, তিনি দক্ষিণ ভারত থেকে পরিচালিত অনেক হিন্দী চলচ্চিত্রের গানে অংশ নিয়েছেন। তাই কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতের ‘ডিস্কো কিং’।

‘চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখনা…’ এই গানটি রিমিক্স গান নতুন মোড়কে এখন ইউটিউবে ছড়াছড়ি। এই গানটির স্রষ্টা কিন্তু সেই বাপ্পী লাহিড়ী। এটি ছাড়াও অন্য ঘরানার গানের মধ্যে রয়েছে : দিল সে মিলে দিল, দিল সে মিলে দিল (দিল সে মিলে দিল); মুসকুরাতা হুয়া (লাহো কে দো রং); চার দিন কি জিন্দেগী হ্যায় (এক বার কাহো); ধীরে ধীরে সুবহ হুয়ে (হৈসিয়াত); মান হো তুম (তুতে খিলোনে); তেরী ছোটি সি ভুল (শিক্ষা); ইয়ে নায়না ইয়ে কাজল (দিল সে মিলে দিল); গাও মেরে মন (আপনে পরায়ে); পিয়া হি জিনে কি (আরমান); পিয়ার মাঙ্গা হ্যায় তুমহি সে; ‘কে পাগ ঘুঙ্গরাও বান্ধ মিরা নাচি থি’ প্রভৃতি।

বাপ্পী লাহিড়ী ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ থেকে ১৯৯০’র দশক থেকে দূরে সরে যান। যদিও প্রকাশ মেহরা’র ‘দালাল’ ছবিতে স্বল্প সময়ের জন্য ফিরে আসেন তিনি।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ, মিউজিক.এভারগ্রীণবাংলা.কম, বাপ্পী লাহিড়ী

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত