ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের ৭০ শতাংশ রুশ বাহিনীর দখলে

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২২, ১২:৫১  
আপডেট :
 ১৪ জুন ২০২২, ১২:৫৭

সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের ৭০ শতাংশ রুশ বাহিনীর দখলে
প্রতীকী ছবি

পূর্ব ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখলের জন্য তীব্র যুদ্ধ চলছে। শহরটির ৭০ শতাংশ এলাকাই এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তারা ইতোমধ্যেই শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। শহরটির চারদিকেই খণ্ডযুদ্ধ চলছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে দোনেতস্কের একজন রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সামরিক নেতা এদুয়ার্ড বাসুরিন বলেছেন, সেভেরোদোনেৎস্কে যে ইউক্রেনীয় সেনারা আছে- তাদের সামনে বিকল্প হচ্ছে ‘হয় আত্মসমর্পণ নয় মৃত্যু।’ খবর বিবিসির।

গত রোববার রুশরা সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক শহরের মধ্যে সংযোগকারী তিনটি সেতুর দুটিই উড়িয়ে দেয়। এখন তৃতীয় সেতুটি ধ্বংস করার জন্য রুশরা প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। সেটা করতে পারলে সেভেরোদোনেৎস্ক ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে রুশপন্থী মিলিশিয়া নেতা বাসুরিন দাবি করেছেন যে তৃতীয় সেতুটিও এর মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিবিসি তা নিশ্চিত করতে পারেনি। ইউক্রেনের সরকারও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি।

সেভেরোদোনেৎস্কের গভর্নর বলেন, সম্ভবত আজ বা আগামীকালের মধ্যেই রুশরা পুরো শহরটি দখল করার চেষ্টা করবে। শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে ইউক্রেনের সেনাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তাদের অবস্থানগুলোর ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হয়। লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, সেভেরোদোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ এলাকাই এখন রুশ নিয়ন্ত্রণে। তিনি জানান, বিশেষ করে শহরের আজোট নামের একটি রাসায়নিক শিল্প কারখানার ওপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে, যেখানে প্রায় ৫০০ বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি শিশু রয়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের কারণে তাদের উদ্ধারের কোন চেষ্টা করা যাচ্ছে না।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, তার বাহিনী প্রতি মিটার মাটির জন্য লড়াই করে যাবে। তিনি আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দেবার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্বঘোষিত দোনেতস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের একজন সামরিক প্রতিনিধি এদুয়ার্ড বাসুরিন বলেছেন, সেভেরোডোনেতস্কে যে ইউক্রেনীয় সেনারা আছে তাদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়তো মরতে হবে। মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ইউক্রেনের সেনারা এ শহর থেকে বেরুতে পারবে না। কারণ, সবশেষ সেতুটিও এর মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় সেতুটি ধ্বংসের এ দাবি বিবিসি নিশ্চিত করতে পারেনি। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এই শহরকে দখল করার ওপর রাশিয়া খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে কারণ সেভেরোদোনেদস্ক এবং এর সংলগ্ন আরেকটি শহর লিসিচানস্ক মিলে পুরো জায়গাটি হচ্ছে শিল্পকারখানাসমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র। এই দুই জোড়া শহর দখল করতে পারলে রাশিয়ার হাতে লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। এই অঞ্চলের কিছু অংশ ইতোমধ্যেই রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এই লুহানস্ক এবং পার্শ্ববর্তী ডোনেৎস্ক - যা দক্ষিণ ইউক্রেনের মারিউপোল থেকে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত - মিলেই হচ্ছে ডনবাস অঞ্চল, যা রাশিয়া তাদের ভাষায় মুক্ত করতে চায়, এবং এটা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ অগ্রাধিকার।

আর মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে ডনবাসে রাশিয়া যদি সাফল্য পায় - তাহলে মস্কো পুরো এলাকাটিকেই একসময় নিজের অংশ করে নেবে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তারা ডোনেৎস্ক অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সরঞ্জামের মজুত ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে কিছু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্রও আছে। মন্ত্রণালয়ে বলছে, উডাশনে রেল স্টেশনের কাছে ইউক্রেনের বাহিনীকে পাঠানো সামরিক সরঞ্জামের ওপর বিমান থেকে ছোঁড়া নির্ভুল নিশানার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানা হয়। বিবিসি এ দাবি যাচাই করতে পারেনি, তবে এটা সঠিক হলে তা হবে ইউক্রেনের বাহিনীর জন্য এক বড় আঘাত। ইউক্রেন ইতোমধ্যেই পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আরো অস্ত্র চেয়েছে।

সেভেরোদোনেতস্ক শহরটি বেশ কিছুদিন ধরেই রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছিল। সেভেরোদোনেতস্ক ও লিসিচানস্ক এই দুটি শহর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিভারস্কি ডোনেটস নদীর দুই পারে অবস্থিত। এ নদীর ওপর তিনটি সেতু আছে। গত রোববার রুশরা তিনটি সেতুর দুটিই উড়িয়ে দেয়। এখন তাদের লক্ষ্য হচ্ছে তৃতীয় সেতুটি ধ্বংস করা। সেটা করতে পারলে সেভেরোদোনেৎস্ক ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যুদ্ধের আগে শহরটির জনসংখ্যা ছিল এক লক্ষ। এর মধ্যে মাত্র ১৫,০০০ এর মত লোক এখনো শহরে বাস করছে। শহরটিতে যেভাবে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে এবং রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ হচ্ছে তাতে এই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া কার্যত অসম্ভব বলে বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিটি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত