ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইন্দোনেশিয়ায় এমন ঘটনা ঘটল কেন?

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২২, ১৫:৪১  
আপডেট :
 ০২ অক্টোবর ২০২২, ১৬:০০

ইন্দোনেশিয়ায় এমন ঘটনা ঘটল কেন?
ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল মাঠে সংঘর্ষ চলছে। ছবি: সংগৃহীত

ফুটবল বিশ্বে কালো শনিবার হয়ে রইলো ১ অক্টোবর। ফুটবল ইতিহাসে এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা বিশ্ব, যা আর কখনও কেউ চাইবে না। ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মাঠে সংঘর্ষের ঘটনায় এতো মানুষের মৃত্যু আর হয়নি।

শনিবার রাতে পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার মালাংয়ের কানজুরহা স্টেডিয়ামে ম্য়াচ ছিল জাভার দু’টি ক্লাব পার্সিবায়া সুরাবায়া ও আরেমার। পার্সেবায়া এই ম্যাচে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে দেয় আরেমাকে। আরেমা সেই ম্য়াচে হারতেই ওই দলের সমর্থকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আরেমার ক্ষুব্ধ দর্শকরা ম্যাচের শেষে মাঠে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশরা প্রচুর টিয়ার গ্যাসের ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ওই সময় স্টেডিয়ামের একটি গেটই সেই সময় খোলা ছিল, সেই কারণে সকলেই ওই গেট দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করে। তার ফলেই হুড়মুড়িয়ে দর্শকরা পড়ে যেতে থাকেন।

প্রথমে জানা গিয়েছিল, দুই দলের মাঠের লড়াইয়ের শেষে, দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১২৯ জন। পরে মৃতের সংখ্যাটা আরও বেড়ে হয়েছে ১৭৪ জন। এই ঘটনার জেরে আহত হয়েছেন ১৮০ জন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আরেমার অন্তত ৩ হাজার সমর্থক ম্যাচের পর মাঠে ঢুকে পড়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার একাধিক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে সমর্থকরা চিৎকার করতে করতে মাঠে ঢুকে পড়েন। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। অনেক পুলিশকে দেখা যায়, সমর্থকদের ওপর লাঠি চার্জ করতে, এবং লাথি মারতে।

পূর্ব জাভার পুলিশ প্রধান নিকো আফিন্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকলে, এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়। সেই সময় মাঠে ঢুকে পড়া সমর্থকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং হুড়োহুড়ি শুরু হয়। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পদদলিত হয়ে, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আহত হন বহু সমর্থক।

নিকো জানান, ঘটনাস্থলেই দুই পুলিশ সদস্যসহ’ প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ জন। বাকিদের মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, সময়ের সাথে বাড়তে পারে প্রাণহানি।

পিটি লিগা ইন্দোনেশিয়া বারু এর সভাপতি আখমাদ হাদিয়ান লুকিতা বলেন, আমরা এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন এবং গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমরা আমাদের সমবেদনা জানাই এবং আশা করি এটি আমাদের সকলের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা হয়ে থাকবে।

ইন্দোনেশিয়ার ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রী জয়নুদিন আমালি জানান, কর্তৃপক্ষ ফুটবল ম্যাচের নিরাপত্তার পুনর্মূল্যায়ন করবে। এই ঘটনার পর, ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ লিগ বিআরআই লিগা ১ এর ম্যাচ গুলি এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে রোববার টেলিভিশনের এক ভাষণে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ার ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রী, জাতীয় পুলিশপ্রধান এবং ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানকে ফুটবল ম্যাচ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও পূর্ব জাভার গভর্নর ঘোষণা দিয়েছেন, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেড় কোটি রুপিয়া পাবে। যার মধ্যে প্রাদেশিক সরকার এক কোটি রুপিয়া এবং স্থানীয় রিজেন্সি ৫০ লাখ রুপিয়া করে দেবে।

ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার ম্যাচগুলিতে এর আগেও বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। তবে এ দিনের মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে হয়নি।

সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স

বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত