থাই উপকূলে নৌকায় দুইশোর বেশি রোহিঙ্গার মৃত্যুর আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:৩৭
থাইল্যান্ডের ফুকেট এলাকার নিকটবর্তী অঞ্চলে আন্দামান সমুদ্রে দুইশো'র বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে একটি নৌকা সাত দিনের বেশি সময় ধরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঐ নৌকায় থাকা শরণার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু, যাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন খাবার ও পানির অভাবে এরই মধ্যে মারা গেছে বলে জানাচ্ছে বিবিসি থাই সার্ভিস।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নৌকাটি নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তবে কয়েকদিন আগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নৌকাটি এবং ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই নৌকায় থাকা শরণার্থীরা বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির থেকে পালিয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
নৌকায় থাকা শরণার্থীদের সাথে কথা বলে মানবাধিকার সংস্থা আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লেওয়া রয়টার্সকে জানান যে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের রানং উপকূলে থাকার সময় নৌকাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং সেটিতে পানি ওঠা শুরু করে।
নৌকায় থাকা শরণার্থীদের বরাত দিয়ে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিজ লেওয়া বলেছেন যে নৌকার যাত্রীরা ক্রমাগত নৌকা থেকে পানি সেচে ফেলার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন একটি এক মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে ভাসমান ঐ নৌকায় শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নৌকায় অবস্থান করতে দেখা যায়। ঐ ভিডিওটি ধারণ করার সময় নৌকাটি থাইল্যান্ডের পশ্চিমে ফুকেট প্রদেশের কাছে আন্দামান উপকূলে অবস্থান করছিল।
থাইল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী সাইদ আলম বিবিসি থাইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, বুধবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
টেলিফোনে বিবিসি থাই সার্ভিসকে জানান সাইদ আলম জানিয়েছেন, অনেকেই মারা যাওয়ার পর তাদের মরদেহ সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে। তাদের খাবার শেষ হয়ে গেছে, নৌকায় পানি উঠছে ।
সাইদ আলম আরও বলেছেন, কেউ এই নৌকাটির সাহায্য না করলে এটি দুই দিনের মধ্যে নৌকাটি ডুবে যাবে।
এদিকে, থাইল্যান্ডের নৌ চলাচল নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ম্যারিটাইম ন্যাশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেন্টারের অঞ্চল-৩ এর একজন কর্মকর্তা বিবিসি থাই সার্ভিসকে নিশ্চিত করেছেন যে রোহিঙ্গা শরণার্থী বহনকারী এই নৌকাটি সম্পর্কে তারা অবগত আছেন। তবে এটি থাইল্যান্ডের উপকূলের ১০০ নটিকাল মাইলের বেশি দূরত্বে থাকায় তারা নৌকার যাত্রীদের আটক করতে বা খাদ্য সহায়তা দিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর থাইল্যান্ড মুখপাত্র নৌকাটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন যেন থাই কর্তৃপক্ষ যেন নৌকাটি উদ্ধার করে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
ইউএনএইচসিআর শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিয়ানমার আর বাংলাদেশের মধ্যকার আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পালানোর প্রবণতায় ‘নাটকীয় বৃদ্ধি’ লক্ষ্য করেছে তারা।
সংস্থাটি বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১৯০০ জন সাগরপথে অবৈধভাবে সীমান্ত পার করেছে, যে সংখ্যাটি ২০২০ সালের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। এই এগারো মাসে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে অন্তত ১১৯ জন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর