ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাংলাদেশে ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩, ০৪:০০

বাংলাদেশে ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবারের মতো এবারও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ২০২২ সালের বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্রাকটিসেস’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বেশিরভাগ ক্ষমতাই ন্যস্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য বিজয়ী হন, যার মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থেকে যান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা ও বিরোধী দলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষগণ মত দিয়েছেন, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।

পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও র‌্যাবসহ সন্ত্রাসদমন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত নিরাপত্তা বাহিনী বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। সামরিক বাহিনী মূলত সেনাবাহিনী, জাতীয় প্রতিরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত, যদিও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতেও তাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন এবং সামরিক বাহিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। আইনশৃংখলা বাহিনীর ওপর বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বহু অপকর্মের অভিযোগ ছিল।

রিপোর্টে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি বা নির্বিচারে হত্যা; গুম, শারীরিক নির্যাতন, নিষ্ঠুর-অমানবিক, অপমানজনক আচরণ অথবা সরকার বা সরকারের পক্ষে তার এজেন্ট কর্তৃক সাজা; কঠিন ও জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিস্থিতি; নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক: রাজনৈতিক বন্দী; বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক কারণে প্রতিহিংসা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা; নির্বিচারে বা বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় হস্তক্ষেপ: ব্যক্তির অপরাধের অভিযোগে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি: সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, অন্যায্য গ্রেপ্তার বা বিচার, সংবাদ প্রকাশে বাধা ও মানহানি আইনসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক কণ্ঠরোধ; ইন্টারনেট স্বাধীনতার উপর ব্যাপক হস্তক্ষেপ; এনজিও ও সুশীল সমাজের কার্যক্রম, তহবিল ও সংগঠন বিষয়ক কঠোর আইনসহ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমাবেশের স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপ; শরণার্থীদের অবাধ চলাচলে বাধাপ্রদান; শরণার্থীদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ; রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ; সরকারে গুরুতর দুর্নীতি; স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ওপর সরকারের বিধিনিষেধ অথবা হয়রানি; পারিবারিক সহিংসতা, যৌন সহিংসতা, শিশু নিপীড়ন, জোরপূর্বক বাল্যবিবাহ এবং অন্যান্য ক্ষতিকর চর্চাসহ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ক্ষেত্রে তদন্ত ও জবাবদিহির ঘাটতি; সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকিসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মানুষদের প্রতি সংঘটিত অপরাধ: সমকামী, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার, কুইয়ার, বা ইন্টারসেক্স ব্যক্তিদের ওপর সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকিসহ তাদের প্রতি সংঘটিত অপরাধ; প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সম্মতিমূলক সমকামী যৌন আচরণকে অপরাধী করে এমন আইনের অস্তিত্ব বা ব্যবহার; স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ; এবং শিশুশ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপের অস্তিত্বসহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্ভরযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এতে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক দায়মুক্তির অভিযোগও রয়েছে। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিপীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার অভিযোগের সামান্যই তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এদিকে এই প্রতিবেদন নিয়ে এক বিবৃতিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, “ব্যক্তির অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন একটি অধিকতর নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী বিশ্ব গড়ে তুলতে সহায়তা করে। (মানুষের) মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার মধ্য দিয়ে দেশ হিসেবে আমাদের পরিচিতির মূল দিকটি ফুটে উঠে।

যুক্তরাষ্ট্র সম্মান, শ্রদ্ধা ও অংশীদারিত্বের চেতনায়উদ্বুদ্ধ হয়ে নিয়মিতভাবে মানবাধিকারের বিষয়গুলো বাংলাদেশ সরকারেরকাছে তুলে ধরছে। আমরা এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখব।

মার্কিন এই প্রতিবেদনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, গত নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, এ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে কারও সন্দেহ নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সত্য কথাই উঠে এসেছে। তাঁর মতে, আগামী নির্বাচনও ভালো হওয়ার পরিবেশ এখনো দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। সে জন্য গত নির্বাচন নিয়ে এসব কথা এখন জোরালোভাবে সামনে আসছে।

এদিকে নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সোমবার রাতে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের অভিযোগকে যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে তাহলে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তাঁর মতে, গত নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, এটি প্রমাণিত। কিন্তু বিএনপি গত নির্বাচনে প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। দলটির ভেতরের দ্বন্দ্ব ও হতাশা থেকে এই কাজ করেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার চুক্তিগুলোর আলোকে প্রণীত বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক এই বার্ষিক প্রতিবেদনে পৃথিবীর ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের স্থানীয় মানবাধিকার ও শ্রমিকদের অধিকারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বিগত প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। দেশ ও অঞ্চলভিত্তিক এই প্রতিবেদনে কোনো আইনি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় না কিংবা মানবাধিকার পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর কোনো ক্রমতালিকা বা তুলনা করা হয় না।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত