ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঘন ধোঁয়া আমেরিকা ও কানাডায়, মাস্ক পরার পরামর্শ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ১৭:৫১

ঘন ধোঁয়া আমেরিকা ও কানাডায়, মাস্ক পরার পরামর্শ
ছবি- সংগৃহীত

কানাডায় সৃষ্ট দাবানলের কারণে প্রচণ্ড ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে উত্তর আমেরিকার উপকূল। তীব্র দাবানলে বাতাসের মান খারাপ হওয়ায় উত্তর আমেরিকার লাখ লাখ মানুষকে ঘরের বাইরে বের হলে এন৯৫ মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর ফলে সেখানকার সমস্ত স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, বিমানের উঠানামা কমে গেছে এবং আমেরিকার কয়েক মিলিয়ন মানুষকে বাইরে বের না হয়ে ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

নিউইয়র্ক শহর হলুদাভ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, দিনদুপুরে অস্পষ্ট স্ট্যাচু অব লিবার্টি। ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে সব। আমেরিকার ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস প্রায় পুরো আটলান্টিক উপকূল জুড়ে এয়ার কোয়ালিটি এলার্ট জারি করেছে। ভারমন্ট থেকে সাউথ ক্যারোলাইনা এবং ওহাইয়ো থেকে ক্যান্সাস পর্যন্ত স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়। এই বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজনকে ঘরের মধ্যে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, পাশাপাশি তাদেরকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বায়ুমণ্ডলে নানা ধরনের ময়লা ও ধূলিকণা যুক্ত থাকার কারণে এই ধোঁয়া শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, আমেরিকার জনগণ মারাত্মক রকমের বায়ু দূষণের মুখে পড়েছে। এজন্য তিনি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মতো লোকজনকে চলাফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।

নিউইয়র্কে বিনা পয়সায় মাস্ক বিতরণ করা শুরু হবে। কানাডা বলেছে যে, মানুষ যদি ঘরে থাকতে না পারে এবং বাইরে বের হয় তাহলে তাদের মাস্ক পরা উচিত।

কর্মকর্তা বলেছেন যে, বিপদজনক এই ধোঁয়াটে অবস্থা পুরো সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। বেশিরভাগ ধোঁয়া আসছে কুইবেক থেকে। সেখানে ১৫০টির বেশি আগুন জ্বলছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, প্রদেশটির ১৫ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটা এরই মধ্যে কুইবেকের সবচেয়ে খারাপ আগুনের মৌসুমে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ধোঁয়া:

কানাডার দাবানলের ধোঁয়া মে মাস থেকে দক্ষিণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসছে। পশ্চিমের প্রদেশগুলো থেকে পূর্বে নোভা স্কটিয়া এবং কুইবেক পর্যন্ত ছড়িয়েছে ধোঁয়া। আইকিউ এয়ারের মতে, বুধবার নিউইয়র্ক সিটির বায়ুর মান বিশ্বের যেকোনো বড় শহরের চেয়ে খারাপ ছিল। দ্বিতীয় সবচেয়ে খারাপ ছিল পাকিস্তানের লাহোর। যেখানে পরবর্তী বায়ুমানে সবচেয়ে খারাপ মার্কিন শহর ডেট্রয়েট, মিশিগান ছিল ১৩তম স্থানে।

কানাডার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব এবং মধ্য-পশ্চিম রাজ্যগুলোতে বায়ু দূষণের সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বড় শহরের আকাশ ঘোলাটে বাদামি রঙ ধারণ করে। বাতাসে ক্ষতিকারক দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস ও কানেকটিকাটসহ পূর্বের রাজ্যগুলোতে বায়ু মানের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বিলম্বিত ফ্লাইট:

কানাডায় দাবানলের কারণে সীমিত দৃষ্টিসীমা তৈরি হওয়ার কারণে নিউইয়র্কের প্রধান প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট বিলম্বিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভ্রমণকারীদের সতর্ক করে বলেছে, নিউইয়র্কের লাগার্ডিয়া এবং পাশের নেওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হতে পারে।

ফ্লাইট অ্যাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্ক সিটি এয়ারপোর্টে প্রায় ৮০০ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। দুই দেশেই লাখ লাখ মানুষ বাতাসের মান সম্পর্কিত হুঁশিয়ারির আওতায় রয়েছে।

অবশ্য বিমান চলাচল বিলম্বিত করার আরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। আটলান্টা থেকে হিউস্টনের ফ্লাইটও বিলম্বিত হয়েছে। একইসাথে ফিলাডেলফিয়ার প্রধান বিমানবন্দরের আগমনী ফ্লাইটও বিলম্বিত হয়েছে। টরেন্টোর পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের প্রায় ২৫০ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।

নিউইয়ক শহরের লাগার্ডিয়া বিমানবন্দর তার যাত্রীদের বলেছে, ‘আবহাওয়ার খারাপ অবস্থা এডিএ বিমানবন্দরে ফ্লাইটের ওপর প্রভাব ফেলেছে। আপনার ফ্লাইটের অবস্থা জানতে আপনার এয়ারলাইনের সাথে কথা বলুন।’

কানাডার দমকলবাহিনী দেশজুড়ে শুরু হওয়া ৪০০টির মতো দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পাচ্ছে, দেশটির পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা এবং পূর্ব উপকূল ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে গেছে। কুয়াশা নিউয়র্ক সিটির বিখ্যাত আকাশসীমাকে ঢেকে দিয়েছে এবং এটি মঙ্গলগ্রহ ও পৃথিবীর ধ্বংসপরবর্তী কল্পিত দৃশ্যের মতো অবস্থা তৈরি করেছে।

বাতাসের মান ও দূষণ নিয়ে দুই দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাই হুঁশিয়ারি জারি করেছেন।

দাবানলের ধোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি:

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দাবানলের ধোঁয়া দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সেন্টার অব আরবান এনভায়রনমেন্ট নামে একটি সংস্থার পরিচালক এবং ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর অধ্যাপক ম্যাথিউ অ্যাডামস বলেন, দাবানলের ধোঁয়া নিঃস্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, বুক ব্যথা কিংবা চোখ, নাক এবং গলায় জ্বালাপোড়া হতে পারে।

অধ্যাপক অ্যাডামস বলেন, বাতাসের এই দূষণের সময়টাতে আমরা হাসপাতালে রোগীর ভিড় দেখবো। আর যারা এই সময়ে হাসপাতালে আসবে তাদের আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা থাকবে।

কিন্তু দাবানলের ধোঁয়ায় আরও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে যেমন ক্যান্সার বা ফুসফুসের রোগ, বিশেষ করে যারা ওই এলাকার বাসিন্দা এবং প্রায়ই দাবানলের শিকার হয়। সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা,সিএনএন

বাংলাদেশ জার্নাল/সামি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত