ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

ত্বকের বলিরেখা নিয়ে যত কথা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১১ মে ২০২২, ১১:৫১

ত্বকের বলিরেখা নিয়ে যত কথা

কথায় আছে ‘সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র’। কিন্তু অকালেই যদি মুখের সৌন্দর্য হারিয়ে যায় তাহলে সবকিছু জয় করবেন কীভাবে? বর্তমান জীবনযাত্রা, আবহাওয়া এবং দূষণের কারণে খুব কম বয়সেই মেয়েদের ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। অনেক অল্প বয়সেই মুখে বলিরেখা ও বয়সের ছাপ পড়তে দেখা যায়।

অল্প বয়সেই চোখের পাশে, ঠোঁটের নীচে, কপালে ভাজ পড়তে শুরু করে। আয়নায় দেখলে নিজেকে কেমন যেন অচেনা লাগে। আর এ সবের চক্করে আত্মবিশ্বাসও কমতে শুরু করে। তাই সময় থাকতে আপনার ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বলিরেখা দূর করতে অনেকে নিয়মিত পার্লারে যান, আবার কেউ নামীদামী ব্রান্ডের বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। কেউ কেউ আবার ঘরোয়া উপায়ে ভরসা রাখেন। এই প্রতিবেদনে রইল তেমনই কিছু ঘরোয়া উপায় যা ত্বককে বলিরেখা মুক্ত করবে এবং আপনাকে তারুণ্যময় স্বাস্থ্য উজ্জ্বল ত্বক ফিরে পেতে সহায়তা করবে।

বলিরেখা কী?

মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায় কোষের কার্যক্ষমতা। অর্থাৎ, জৈবিক ক্ষমতা হ্রাস পায়। তখন এই প্রক্রিয়াটি শরীরে, বিশেষ করে ত্বকে সহজেই ফুটে ওঠে। মানুষের বয়স হলে এনজাইম কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তখন ত্বকে যে রেখা ফুটে উঠে তাই বলিরেখা।

বলিরেখা হবার কারণ?

অনেক কারণেই একজন ব্যক্তির শরীরে বা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে পারে। যেমন- বংশগতি, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস,পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ইত্যাদি । বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাসলে বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে গালে, চোখের চারপাশে বলিরেখার ভাঁজের সৃষ্টি হয়। যা বয়স বৃদ্ধির সবচেয়ে খারাপ চিহ্ন। এটা শুধু যে বয়সের চিহ্ন তা নয় অনেক সময় কোনো কারণে কোলাজেনের উৎপাদন কমে গিয়ে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে গেলেও এমন হতে পারে। আবার অন্যান্য কারণেও হতে পারে যেমন অত্যাধিক মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ধূমপান, পানি কম খাওয়া, কম ঘুমানো, ত্বকে অতিরিক্ত আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব ইত্যাদি।

ত্বকের বলিরেখা রোধ ও দূর করার উপায়-

ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে জীবনযাপনের ধারা পাল্টানো। এর মধ্যে খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যয়াম ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম (৮ ঘণ্টা) উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। এই অভ্যাস বয়সের ছাপ পড়ার আগেই শুরু করা উচিত। অনেক ধরনের খাবারই রয়েছে যা ত্বকের স্বাস্থ্য ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে।

ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধে কিছু খাবার-

১) গাঢ় সবুজ শাকসবজি

গাঢ় সবুজ শাকসবজিতে আছে প্রচুর খনিজ উপাদান ও ভিটামিন এ, সি এবং ই। এগুলো ত্বকে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। খাদ্য তালিকায় শাক, বিশেষ করে পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শালগম ,ডাটা ও শিম রাখুন। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সবজি খেলে তা ত্বকে বার্ধক্য আসার গতিকে ধীর করে দেয়। তাই বেশি করে সবজি খাওয়া উচিৎ।

২) বেদানা

বেদানায় থাকে দ্রুত হিমোগ্লোবিন তৈরির উপাদান। শুধুমাত্র হিমোগ্লোবিন তৈরির উপাদানই নয়, এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ফলে ত্বকের বলিরেখা রোধে এই ফলটি খুব কার্যকরী।

৩) সবুজ চা

ফল ও সবজির মতো সবুজ চাও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। গবেষণায় জানা যায় যে, এটি সূর্য রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে যা ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী।

৪) গাজর

গাজর ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রচুর পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও বলিরেখা রোধে গাজর খাওয়া অত্যাবশ্যক।

৫) টমেটো

টমেটো তে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কাজেই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখা উচিত।

৬) লেবু

ত্বকের বলিরেখা ও ক্ষত দূর করতে লেবুর জুড়ি নেই। রোজ সকালে চিনি ছাড়া এক গ্লাস লেবুর রস খেলে ত্বক সজীব থাকে।

৭) কাঠবাদাম

কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই, সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ভিটামিন ই, ভিটামিন সি এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোলাজেন তৈরি করে। তাই ৩০ বছর বয়সের পর নিয়মিত পাঁচ-ছয়টি করে কাঠবাদাম খাদ্যতালিকায় রাখুন।

৮) টক দই ত্বকের বলিরেখা কমাতে টক দইয়ের জুড়ি নেই। দইয়ের মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান,যা রোগ-প্রতিরোধ পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে, প্রদাহরোধ করে বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।

৯) পাকা পেঁপে উজ্জ্বল কমলা রঙের এই ফলটি কার্যকর ভাবে মুখের ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের বলিরেখা দূরীকরণে ঘরোয়া কিছু উপায়-

ঘরোয়া উপায়ে যদি নিয়মিতভাবে যদি কিছু নিয়ম মেনে চলা যায় তাহলে বলিরেখা দূর করে ত্বকের বয়স বেশ কয়েক বছর কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

১) জোজোবা অয়েল

জোজোবা অয়েলে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবার গুণ থাকে। এই তেল চটচটে নয়। প্রতিদিন এর ব্যবহার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বকের বলিরেখা রোধ করে।

২) গোলাপজল

গোলাপজল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। দুই চা চামচ গোলাপ জল, তিন-চার ফোঁটা গ্লিসারিন এবং অর্ধেকটা লেবুর রস দিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। একটি তুলোর বলে এই প্যাকটি ভিজিয়ে প্রতি রাতে ত্বকে ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের বলিরেখা পড়া রোধ করে ত্বকের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে থাকে।

৩) অ্যালোভেরা জেল

অ্যালোভেরা জেল ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে মেরামত করে, ত্বককে আর্দ্র ও টানটান করে বলিরেখা রোধ করে।

৪) শসার প্যাক

শসাতে সিলিকা নামক একটি উপাদান আছে যা ত্বকের চামড়া ঝুলে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে । ৩ চা চামচ শসার পেস্ট, ১ চা চামচ ডিমের সাদা অংশ, ২ চা চামচ লেবুর রস, ২ চা চামচ পুদিনা পাতার রস, পর্যাপ্ত পরিমাণে আপেলের পেস্ট দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি সারা মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৫) টমেটো প্যাক

টমেটোতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে আয়রন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ফলে ত্বকের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং ত্বক টানটান রাখতে টমেটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপরোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করলে আমাদের ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যাবে না আর বলিরেখা থেকেও মুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/স্বর্ণ/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত