ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

ডিম খেলে কি আসলেই ওজন বাড়ে?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২২, ১২:২০

ডিম খেলে কি আসলেই ওজন বাড়ে?
ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই বলে ডিম খাই না, কুসুমসহ ডিম খেলে মোটা হয়ে যাব, কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে। তাদের ধারণা ডিম খেলে ওজন আরও বেড়ে যাবে। সাথে বাড়বে কোলেস্টেরল।

এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। কারণ ডিমে রয়েছে ক্যালোরি। তাই তাদের মনে হয় ডিম খেলেই ওজন বাড়বে। তাহলে উপায়! ডিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভাঙুন, আর মেদহীন শরীর পান! এইভাবেই ডিমকে দূরে ঠেলে দিয়ে একদল জিরো ফিগারের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু লাখ টাকার প্রশ্নটা হল, এই ধারণা কি আদৌ ঠিক? সত্যিই কি ডিম খাওয়ার সঙ্গে মোটা হয়ে যাওয়ার সরাসরি যোগ রয়েছে?

এটি কি আসলেই ঠিক যে ডিম বা ডিমের কুসুম ওজন বাড়িয়ে দেয় কিংবা কোলেস্টেরল বাড়ায়? উত্তরে বলবো 'না'। বহুদিন পর্যন্ত ডিমকে ''শরীরের শত্রু'' বলে প্রচার করা হয়েছে। একসময় মনে করা হতো, ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল বাড়ে। কিন্তু আধুনিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, এ ধারণা ভিত্তিহীন। বরং ডিমের কুসুম খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরলের সমস্যার কথা যদি ভাবেন, ডিম সেখানে কোন ক্ষতির কারণ নয়। বরং যে ক্ষতিকর তেল বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে ডিম রান্না করছেন সেটা সমস্যা কারণ হতে পারে।

পুষ্টিগুনে ভরপুর ও প্রোটিনের সবচেয়ে সস্তা উৎস হল ডিম। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ডিম খাওয়া ভাল। এটি সত্য যে ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল আছে। কিন্তু রক্তের কোলেস্টেরলের উপর এর সরাসরি কোন প্রভাব নেই। ডিমের কুসুম আমাদের রক্তে গুড কোলেস্টেরলে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ডিমে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন যা আমাদের মস্তিষ্ক এবং পেশী গঠনে সাহায্য করে। একই সাথে ডিমে আছে এমন কিছু অ্যামিনো এসিড যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ার সাথে সাথে মানসিক স্থিরতা বাড়ায়।

সব ডিমেই যে একই পরিমাণ ক্যালোরি থাকে, তা নয়। বড় মাপের ডিমে প্রায় ৯০ ক্যালোরি থাকে। যেখানে মাঝারি বা ছোট মাপের ডিমে ক্যালোরির মাত্রা হয় প্রায় ৭০। তাই ডিম খেলেই শরীরে ক্যালোরি মাত্রা বৃদ্ধি পাবে, এমনটা ভেবে নেয়ার কোনও কারণ নেই।

প্রসঙ্গত, একথা ঠিক যে শরীরে ক্যালোরির মাত্রা যত বৃদ্ধি পাবে, তত ওজন বাড়ার আশঙ্কা বাড়বে। তাই তো একজন ডায়াটেশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিতে আপনি দিনে যে পরিমাণ পরিশ্রম করেন সেই অনুপাতে কত পরিমাণ ক্যালোরি খেলে আপনার ওজন বাড়বে না। সেই মতো খাবার খেলেই দেখবেন ওজন বাড়বে না।

ধরুন আপনাকে দিনে ২০০ ক্যালোরি খেতে হবে। একটা ডিম সকালে খাওয়া মানে শরীরে ৭০ ক্যালোরি প্রবেশ করবে। তার মানে সারা দিনে আপনি আর ১৭০ ক্যালোরি খেতে পারবেন। তার বেশি নয়।

সেদ্ধ ডিম: পোচ খেলে শরীরে প্রায় ৭২ ক্যালোরি প্রবেশ করে। যেখানে সেদ্ধ ডিম খেলে প্রায় ৭৮ ক্যালোরি মজুত হয় দেহে। তাই আপনি যদি শরীরে কম পরিমাণ ক্যালোরি প্রবেশ করাতে চান, তাহলে সেদ্ধ ডিম নয়, খেতে হবে পোচ। তাহলেই আর মোটা হয়ে যাওয়ার চিন্ত থাকবে না।

ডিমের ভুনা: প্রতিদিন সকালে পাঁউরুটির সঙ্গে ডিমের ভুজিয়ে না খেলে মন ভরে না। এদিকে ভাবছেন এমন খাবার খাওয়ার কারণে ওজন বাড়বে কিনা? তাহলে বলবো, নিশ্চিন্তে ডিমের ভুজিয়ে খেতে থাকুন। এমন খাবারের সঙ্গে ওজন বাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ এক প্লেট ডিমের ভুজ্জিতে ৯০-১০০ ক্যালোরি থাকে। এই পরিমাণ ক্যালোরি শরীরে প্রবেশ করার পর বাকি দিনে আর বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাবেন না। তাহলেই আর মোটা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। মোট কথা হিসেবে করে ক্যালোরি খেতে হবে। প্রয়োজনের বেশি খেলেই শরীরের পরিধি বাড়তে শুরু করবে।

ডিমের কুসুম এবং সাদা অংশ: সাধারণত ডিমের কুসুমে ৫৫ ক্যালোরি থাকে, যেখানে সাদা অংশ খেলে শরীরে মাত্র ১৭ ক্যালোরির প্রবেশ ঘটে।

প্রসঙ্গত, ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, আর সাদা অংশে থাকে ভিটামিন এবং খনিজ। তাই তো পুরো ডিম খেতে হবে। শুধু কুসুম বা সাদা অংশ খে কিন্তু পুষ্টির অভাব দেখা দেবে।

প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যামাইনো অ্যাসিডের ঘাটতি দূর হয়। ফলে নানাবিধ রোগের হাত থেকে শরীর রক্ষা পায়। সেই সঙ্গে মহিলাদের অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে। কারণ ডিমে উপস্থিত বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শরীর গঠনে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভূমিকা যে কতটা তা নিশ্চয় কারও অজানা নেই। এই বিশেষ ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডটি মাছের পাশাপাশি ডিমেও প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই তো যাদের মাছ খেতে ইচ্ছা করে না, তাদের প্রতিদিন ডিম খাওয়া উচিত। এমনটা করলে কথায় কথায় শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

ডিম খেলে কী কোলেস্টেরল বাড়ে: একেবারেই না। একথা ঠিক যে ডিমে কোলেস্টেরল রয়েছে, কিন্তু তা ভাল কোলেস্টেরল, যা শরীরের গঠনে সাহায্য করে। এখানেই শেষ নয়, ভাল কোলেস্টেরলের পাশাপাশি ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, ই, ডি এবং কে। রেয়েছে জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রণ এবং ক্যালসিয়াম। তাই সব শেষে একথা বলতেই হয় যে ডিম খাওয়ার সঙ্গে মোটা হওয়ার সরাসরি কোনও সম্পর্কে নেই। তবে শরীরের ভাল-মন্দের সঙ্গে গভীর যোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/স্বর্ণ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত