ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস

  এস.ডি সাগর, জয়পুরহাট

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:৫৩

জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস
ছবি: জয়পুরহাট

আজ ১৪ ডিসেম্বর, জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। এইদিনে তৎকালীন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় ডাক বাংলোয় স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করে জয়পুরহাটকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের তারা খেয়ে পাকসেনারা জয়পুরহাট ছেড়ে সিরাজগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে পাকসেনারা সান্তাহার থেকে ট্রেনযোগে আসেন তৎকালীন মহকুমার জয়পুরহাটে। এরপর তারা স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় জয়পুরহাটের বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায়। এমনকি জুম্মার নামাজের দিনেও মসজিদ থেকে অর্ধ-শতাধিক মুসল্লিদের ধরে নিয়ে গিয়ে সদর উপজেলার চকবরকত ইউনিয়নের পাগলা দেওয়ান বদ্ধভুমিতে নির্বিচারে হত্যা চালায়। এই পাগলা দেওয়ান ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় সেই এলাকা দিয়ে চলাচল করতো শতশত শরণার্থীরা। সেখানে অসংখ্য শরণার্থীদের ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকসেনারা।

এদিকে সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের কড়ই কাদিপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩শ'৭১ জন মৃৎ শিল্পীকে স্থানীয় রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় নির্যাতন করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তাদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে পাকসেনারা। এ সময় স্থানীয় রাজাকাররা তাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট চালায়।

ছবি: জয়পুরহাট

রাংতা ঘোনাপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ডা. ইসহাক আলী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, কড়ই কাদিপুরে গণহত্যা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ভুল বুঝিয়েছিল যে, এসব হিন্দুরা পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এমন কথা বলে পাকসেনাদের উসকে দেয় স্থানীয় রাজাকাররা। এরপরেই পাকসেনারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩শ' ৭১ জন মৃৎ শিল্পীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

তিনি বলেন, এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। যেসব হিন্দুরা পালিয়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করছেন তাদেরও স্থানীয় রাজাকাররা ধরে নিয়ে এসে পাকসেনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। অনেক স্থানীয় রাজাকার আবার নিজেই অনেক হিন্দুকে কুপিয়ে মেরেছে। এমন জঘন্য ঘটনা কখনোই ভুলতে পারি না। তাই এই বাংলার মাটিতে এসব রাজাকারদের বিচার দেখে মরতে চাই।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফসার আলী বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, পাগলা দেওয়ান গণকবরের উত্তর পাশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা বাঙ্কার করে অবস্থান নিয়েছিলো। এ সময় তারা শত শত সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে ছুড়ি-দা দিয়ে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে।

তিনি জানান, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও জয়পুরহাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্থানীয় অনেক রাজাকারদের এখনো বিচার হয়নি। তবে এখনো যাদের বিচার হয়নি তাদের তালিকা করে জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা তদন্ত করছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত