ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এমন কেন?

  সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২১, ১০:২২

প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এমন কেন?
ফাইল ছবি

শিক্ষাব্যবস্থার ফাউন্ডেশন বা ভিত বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষাকে। আর এ ভিত গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি পালন করেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। আজকে যারা দেশের উচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত রয়েছেন, তাদের শুরুটাও এই প্রাথমিক শিক্ষকের হাত ধরেই। এই শিক্ষকের কাছেই প্রথম হাতেখড়ি হয় একটি শিশুর। অ আ ক খ বর্ণের পরিচয়টা সেখান থেকেই শুরু হয়। অথচ শিক্ষাজীবনের প্রথম গুরু এই প্রাথমিক শিক্ষকদেরই অনেকটা ‘খাটো’ করে দেখা হয়।

বাংলাদেশ জার্নালের চোখে পড়েছে এমনই একটি লেখা। যা প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছে। লেখক সেখানে জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের হয়ে নিজের অব্যক্ত কথা।

ফেসবুক গ্রুপ থেকে সংগৃহীত লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

ওরা বলে, আমি প্রাইমারি মাস্টার! আমার মন ছোট! প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষকের স্কেল ১৮তম ও প্রধান শিক্ষকের স্কেল ১৭ থেকে শুরু হলেও আন্দোলন করে সহকারী শিক্ষক ১৩ ও প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেডে পৌঁছেছি।

আগামীতে ১০, ১১, ১২ হতে চলেছি। দুঃখের বিষয় হলো, আমরা প্রাইমারি মাস্টার!

মনে পড়ল বাবার মুখে শোনা গল্পটি- নৃগোষ্ঠী জাতির দুই ভাই সাঁওতাল সুন্দর পোশাক পড়ে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। একই গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই সহোদর ভাই মাচায় বসে গরমের সন্ধ্যায় গল্প করছে। চারিদিকে অন্ধকার, কিছুই দেখা যায় না। দুজন যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে।

এমন সময় বড়ভাই জিজ্ঞেস করছে, কে যাচ্ছে? নৃগোষ্ঠীর দুই ভাইয়ের একজন বলল, আমরা ভদ্রলোক!!

মাচায় বসা সম্ভ্রান্ত ঘরের দুই ভাইয়ের ছোটভাই বড়কে জিজ্ঞেস করল, কে ভাই ওরা?

বড় ভাই বলল, ওরা সাঁওতাল!

তখন আক্ষেপ করে সাঁওতাল দুইভাই বলল, আমরা তো বললাম ভদ্রলোক। আমাদের দেখতেও পেলো না। তবুও কেমনে বুঝে গেল আমরা সাঁওতাল!

কিন্তু কেন? কেন, কেন আজো আমাদের শুনতে হচ্ছে আমরা প্রাইমারি মাস্টার!

কেন শুনতে হয়, প্রাইমারি মাস্টারের মন ছোট!

কেন পরিচয় দিতে যদি বলা হয় আমি প্রাইমারি মাস্টার, তখনই বুঝি তাদের কদরের আগ্রহ কমে যায়!

কেন সমাজের ছোট থেকে সকলেই, এমনকি প্রতিটি অফিসের পিয়ন, দারোয়ান, কেরানী মাস্টারকে অবমূল্যায়ন করে? এমনকি নিজের হাতে শিশু বয়স থেকে কিশোর পেরিয়ে বয়ঃসন্ধি সময় কাল পার করে দেয়ার পর সেই ছাত্রই অবহেলা করে তার শিক্ষককে।

আজকে আমার ছাত্র মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় আছে বলে খুশিতে আটখানা হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও কোন শিক্ষার্থী আজও লেখেনি ‘ধন্যবাদ’। আমার এই সাফল্যের মূলে আমার সকল শিক্ষার বুনিয়াদকারী সেই প্রাথমিক শিক্ষকদের ধন্যবাদ।

কেন বলে প্রাইমারী মাস্টারেরা ফাঁকি দিয়ে বেতন খায়? কেন আজো দেখতে হয় প্যান্ট শার্ট ইন করে কোট পরা মাস্টারের পায়ে রাবারের জুতা!

এরকম শত শত কেন’র (প্রশ্নের) সম্মুখীন হতে আমাকে, আপনাকে? তবে কি আমিই আমাকে বদলে নেয়নি? নাকি সমাজ আমাকে বদলে দেয়নি? নাকি সমাজের উনারা আমাকে হিংসে করে বলছে?

কেন সরকার বাহাদুর আমাদের মূল্যায়ন করছে না। কেন আমার দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে নিয়ে গর্বিত হচ্ছে না?

আমার প্রিয় সহকর্মী, আমাদের কী অভাবে এমন কথা শুনতে হচ্ছে? শিক্ষা অফিসের সামনে মোটরসাইকেলের সারি তো আছে বেশ বড়সড়! উপজেলা, জেলায়, এমনকি বিভাগে, রাজধানীতে বড় বড় দালান, অট্টালিকাও আছে। আর প্রাইমারি মাস্টারের ছেলে-মেয়ে বড় বড় পদে চাকরিও করছে আবার সেই সন্তানের মুখেও শুনতে হচ্ছে প্রাইমারি মাস্টারের মন ছোট! কেন, কেন, কেন! !!

জানা নাই আমার এমন শত থেকে হাজারও কেন’র (প্রশ্নের) উত্তর। আমি শুধু জানি, দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টাও অসভ্যতা বদলে সভ্যতা ফিরে পাবে, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও, দেশটাও বদলে যাবে। তেমনি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও আমাদের প্রাইমারি সমাজটাও বদলে যাবে।

আজকে তো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চশিক্ষায় মেধায় এগিয়ে থাকা ছাত্রছাত্রী শিক্ষক পদে আসছেন। নেই সেই বিড়ির আগুনে পোটা পাঞ্জাবীতে শত শত ফুটো হওয়া পোশাক। নেই তো ঢিলেঢালা পায়জামা। নেই তার সেলাই দেওয়া স্যান্ডেল।

তবুও আমরা বদলাতে পারিনি ওরা বলে প্রাইমারি মাস্টার! তাহলে কি আমি আমাকে বদলাতে দিচ্ছি না? আমিই কি আমার সবচেয়ে বড় বাধা? আমি জানি না, আমি জানি না কোথায় আমার দুর্বলতা!

আপনি কি জানেন, বলতে পারেন? কেন ওরা বলে প্রাইমারি মাস্টারের মন ছোট। ওরা কথা বলতে জানে না, ওদের ভাষাজ্ঞান নেই, সৌজন্যবোধও নেই!

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত