ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

আদর্শিক রাজনীতির কাণ্ডারী এস এম কামাল উদ্দিন

  মোস্তফা কামাল পাশা

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২১, ১৫:৩৮  
আপডেট :
 ০৪ জুন ২০২১, ১৫:৪৩

আদর্শিক রাজনীতির কাণ্ডারী এস এম কামাল উদ্দিন

ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও দলীয় আদর্শের প্রতি অবিচল রাজনীতিক এখন ক্ষণজন্মা। এসব গুণের সাথে দুর্দান্ত সাহস, দূরদর্শিতা মিলে আওয়ামী লীগ রাজনীতির কর্মী বান্ধব এক মোহন পুরুষ ছিলেন চট্টগ্রামের এস এম কামাল উদ্দিন। বর্তমান রাজনীতিতে কামাল ভাইদের বিকল্প খুবই বিরল। চলমান ধারায় আগামীতে আসবেন কিনা তাও অনিশ্চিত।

হাটহাজারীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল উদ্দিনের ১২তম প্রয়াণ দিবস আজ। দুর্ধর্ষ এই মুক্তিযোদ্ধা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে হাটহাজারী থানার এফ এফ কমান্ডার। তাঁর নেতৃত্বে পুরো হাটহাজারীতে অন্তত ২০ প্লাটুন এবং ৬০টি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ পাক হানাদার ঘাতকদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়।

মূল কমান্ডার কামাল ভাই মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য অপারেশনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। মদুনাঘাট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কাটির হাট, নাজির হাটসহ বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তাঁর অসম সাহসী নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উজ্জ্বল সাক্ষী।

যুদ্ধে সাহসী অবদানের পাশাপাশি তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সামনের সারির নেতা ছিলেন। পালন করেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন দায়িত্ব।

যুবলীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মনি ভাইয়ের বিশ্বস্ত সহযোগী তিনি। উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলেন। চৌকস ক্রীড়াবিদ হিসাবেও কামাল ভাইয়ের সুনাম রয়েছে। এই সুবাদে টানা এক যুগেরও বেশি জেলা ক্রীড়া সংস্থার ( সিজেকেএস) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

অত্যন্ত মেধাবী, স্পষ্টবাক কামাল ভাই আওয়ামী লীগ রাজনীতির একজন নিবেদিতপ্রাণ বিশ্বস্ত সৈনিক। জেলা কমিটিতে যুক্ত থাকায় খুব কাছ থেকে দক্ষতা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, সাহস ও কর্মী অন্তঃপ্রাণ মানুষটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেটের সামনে অভিজাত চিম্বুক রেস্টুরেন্টটি চালাতেন। এই সুবাদে ‘চিম্বুক কামাল’ কম বয়সে হজ্ব করে আসায় ‘হাজি কামাল’ হিসাবেও পরিচিত।

ছাত্রলীগের তদানীন্তন অন্যতম নেতা মহিউদ্দিন ভাই, সুলতানুল কবির চৌধুরী, কামাল ভাই, ইদরিস ভাই ও ইদরিস আলমরা একসাথে রাজনীতি করেছেন। ৫ জনই পরস্পরের জানের দোস্ত । ইদরিস ভাইয়ের চিটাগাং বোর্ডিং, কামাল ভাইয়ের চিম্বুক ও মহিউদ্দিন ভাইয়ের আস্তানা গ্র্যান্ড হোটেলে তাঁরা একসাথে বসে ৭৫ পরবর্তী রাজনীতির দিক নির্দেশনা ঠিক করতেন।

কামাল ভাই ও ইদরিস ভাইয়ের বাড়ি হাটহাজারীর মধ্য মাদার্শা গ্রামের হালদা কূলে। দু’জনই উত্তর জেলা রাজনীতিতে। সুলতান ভাই দক্ষিণ জেলা, মহিউদ্দিন ভাই ও ইদরিস আলম নগর রাজনীতির নেতৃত্বে ছিলেন। কামাল ভাইয়ের প্রজ্ঞা, বাগ্মিতা, সাহস, জ্ঞানের গভীরতা ও উপস্থিত বুদ্ধি এককথায় তুলনাহীন।

হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি সশস্ত্র, জামায়াত, শিবির ও সা কা’র এনডিপির টানা বর্বরতা, হামলা, খুন, নির্যাতন, অপহরণের বিরুদ্ধে ৮০ ও ৯০ দশকের শুরুতে নাজিম ভাই, ইদরিস ভাইদের সাথে তিনিও ম্যান্টরের ভূমিকা পালন করেন।

সর্বশেষ ফটিকছড়ির বিবির হাট, তকির হাটে ঘাতক চক্রের সশস্ত্র সাঁড়াশি আক্রমণে হারুন বশর, জমিরসহ ট্রিপল মার্ডারের ভয়াল দিনে বিবির হাট সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। পথে কাটির হাটে তদানিন্তন দুর্ধর্ষ জেলা ছাত্রলীগ নেতা শাহনেওয়াজ চৌধুরীদের কাছে নিজের নতুন গাড়ি ছেড়ে দিয়ে মোশাররফ ভাইয়ের জিপে বিবিরহাট যান। ওদিনের রক্তক্ষয়ী হামলা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ রাজনীতির অমোচনীয় ভয়াল এক ট্রাজেডি। যা এখন মুছে যাওয়ার পথে।

মহিউদ্দিন ভাই, কামাল ভাই মিলে ওরা পাঁচ বন্ধুই দুর্ধর্ষ মুক্তিয়োদ্ধা এবং সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে সামনের সারির নেতা। দুর্ভাগ্য পাঁচ কীর্তিমানের একজনও আজ আমাদের মাঝে নেই। হাটহাজারী-রাউজান-ফটিকছড়ি প্রতিরোধ যুদ্ধের মূল কাণ্ডারি আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ভাইও। ১৯৯২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। এরপর ইদরিস ভাই উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদে থাকতে ২০০১ সালে, পরে ইদরিস আলম, তারপর কামাল ভাই পরে সুলতান ভাই সবশেষে মহিউদ্দিন ভাই ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর চলে গেলেন অন্যলোকে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক পঞ্চপাণ্ডবসহ সবাই। মহিউদ্দিন ভাইতো সবাইকে ছাড়িয়ে টানা তিন মেয়াদের নির্বাচিত সফল সিটি মেয়র এবং গণ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি হিসাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন। কামাল ভাইকে নিয়ে হঠাৎ লিখতে গিয়ে তাঁর বিশাল সু-কীর্তির উপর আলোকপাত করা অসম্ভব। কামাল ভাইয়ের ছেলে-মেয়েরাও তাঁর মতই সমান মেধাবী। কৃতিত্বের সাথে লেখাপড়া শেষ করে কর্মজীবনে চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ সম্মানজনক অবস্থানে আছে। ১২তম প্রয়াণ দিবসে কীর্তিমান নেতা কামাল ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত