ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা: দানব নিধন শুরু হোক

  মোস্তফা কামাল পাশা

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:২৯

বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা: দানব নিধন শুরু হোক

লেখাটা শুধুমাত্র অকৃত্রিম ও নির্ভেজাল বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনা ভক্তদের জন্য। কারো অস্বস্তি থাকলে এড়িয়ে যান।

দেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটতে বেশ ক'টি চক্র সক্রিয়। এরা দেশে-বিদেশে দু'তরফেই ছোবল হানতে বিষদাঁত শাণ দিচ্ছে। সাজাচ্ছে নানা ভুয়া ইস্যু! অনেকে কৌশলে লোভী ও ভোগী কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকে পকেটে পুরে ইচ্ছেমত লুটছে-বাজাচ্ছে দেশের বারোটা।

আমরা জানি, কুখ্যাত জিয়ার বিএনপি, পাকি ঔরশজাত উগ্রবাদী ও ধর্ম ব্যবসায়ী চক্র জামাত দেশের চিহ্নিত দুশমন। এরা দেশকে কখনো মেনে নেয়নি-নেবেও না। জিয়া-এরশাদের অবৈধ শাসনকালে প্রমাণ বারবার সামনে এসেছে। বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিরর্থক। বেগম জিয়া এদের মূল ভিত্তি ও শক্তি। তাকে কেন্দ্রে রেখেই সব ষড়যন্ত্র এক মোহনায় মিলছে। বেগম কতটা হিংস্র ও পরশ্রীকাতর প্রমাণ খুঁজতে গুগল সার্চ দেয়ার দরকার নেই। ৯১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কিছু কৌশলগত ভুলে ক্ষমতায় এসে তিনি বেশিদিন অপেক্ষা করেননি। নিজের গোলাপি বার্নিশের তুলতুলে থাবা থেকে দাঁত-নখ বের করে আওয়ামী লীগের হ্নদপিণ্ডে কামড় বসান।

৭৫ এর ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী, অনুরাগীদের জন্য কারবালার চে' মর্মঘাতি এক ভয়ঙ্কর দিন। এদিন জিয়া, মোশতাক, জাসদ চক্রের সমন্বিত ষড়যন্ত্রের ফসল ওঠে খোন্দকার মোসতাকের বকলমে জিয়ার গোলায়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু খুনের মাঠ জাসদ তৈরি করে দিলেও দুর্ভাগ্য, দ্রুতই তাদের ওপর নাযেল হয় জিয়া গজব! সবই সিআইএ ও আইএস এর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও অর্থায়নে। রহস্যঘেরা সিরাজুল আলম খানের হাত ধরে জাসদের জন্মও সিআইএ-আইএস এর গর্ভে। কাপালিক দাদাকে এরা বঙ্গবন্ধুর বিকল্প বানাবার টোপে গেঁথে নেয়। নিট ফলাফল সবার জানা। বেগম জিয়া আওয়ামী লীগ তথা প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার কলজেতে ছুরি গাঁথার জীঘাংসায় হঠাৎ ১৫ আগস্ট নয়া জন্মদিন আবিষ্কার করেন। এর মাঝে তার আরো ৬টি জন্মদিন আবিষ্কার হয়েছে! পৃথিবীর কোন দেশে সরকার প্রধান বা দল নেতার আধা ডজনের বেশি জন্মদিন থাকার এমন ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত কল্পনা করাই যায় না। আইএস’র নির্দেশনায় ৯৩ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ঘটা করে ভুয়া জন্মদিন উদযাপন শুরু করেন। কী অবিশ্বাস্য জীঘাংসা, কল্পনা করুন! তার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক যুবরাজ তারেক মাদকাসক্ত স্যাডিস্ট! লন্ডনে দলের ডায়াসে তার ক্যারিকেচার আর ‘বাণী’র ঘনঘটা দেখলে তেলাপোকায়ও হাসে! স্কুলফেল মহাপণ্ডিত, বিশাল গবেষকটি বিলাত পলাতক ক্লাউন।

এরা চিহ্নিত শত্রু। তাই সাবধান থাকা সহজ। কিন্তু কাছের শত্রু বড়ই ভয়ঙ্কর। উদাহরণ ১৫ আগস্ট বিভীষিকা! বঙ্গবন্ধুর চারপাশেই শত্রু অবস্থান করছিল। তিনিতো চিনেও চেনেননি। বিশ্বাস অটুট রেখেছিলেন। তাই চিহ্নিত শত্রুরা গলার রগ ফুলিয়ে বলে, আওয়ামী লীগইতো ‘শেখ মুজিবকে’ হত্যা করেছে, পরেও সরকার চালিয়েছে আওয়ামী লীগ! মিথ্যাতো না! এখনো ঘরের শত্রুরা ওঁৎ পেতে আছে নেত্রীর আশপাশেই। সুযোগের অপেক্ষা কেবল। সবচে’ ভয়ঙ্কর এবং হিংস্র এরাই। তাই যারা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে ভালবাসেন, হাসতে হাসতে নেত্রীর জন্য জীবন দিতে পারবেন- প্রশ্ন ছাড়াই। তৈরি থাকুন। একযুগ আগের কপর্দকহীন এখন বহু কোটিপতির ছাল বদলানো নেতারা পারবে না। যখন বাসযাত্রী ছিল, তখন পারতো। এখন ২০০০ থেকে ৬০০০ সিসির আলিশান গাড়ি, দেশ-বিদেশে বাড়ি ও নামে-বেনামে বহু ব্যবসার মালিক তারা অনেকে। অভিজাত ক্লাব, রিসোর্ট, ইয়ট, বাগানবাড়ির রঙিন ঝাড়বাতির নিচে তাদের জলসা ঘর। রঙিন পানির কাটগ্লাস হাতে কচি মাংসের সৌরভ নেয়। বাতানুকূল গোত্রের নয়া অভিজাতও! দিনে ‘ন্যাতা’, ভাষণের গুতোয় মাইক ফাটে, রাতে ‘কেতা’! সুরা, সাকি, জুয়া, মউজ আওর মাস্তি! ঘামের নোনাভেজা কর্মীরা এদের প্রজা! এদের সাথে ঘরের দুশমন, বাইরের দুশমন সবার আঁতাত। একের সমস্যায় অন্যে কাঁধ বাড়িয়ে দেবে! আপনার আমার এই সুযোগ নেই- নেবও না।

যারা ক্ষমতার একযুগ পরও পদ, পদক, ক্ষমতা, প্রভাব, বিত্ত, প্রতাপ, তাপ, দান, অনুদান কিছুর পরোয়া করেননি, ধার ধারেননি; তারাই নেত্রীর খাটি জানবাজ কর্মী। লোভ আর ধান্ধায় বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর প্রতি ভালবাসা হয় না। ভালবাসার অভিনয় হয়, অতীতে দলের বিপদে বারবার প্রমাণ মিলেছে। সামনে আরো বেশি। তো, হাতানো, আর গ্যাঁজানো ভেজাল বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীভক্ত সংখ্যায় খুব কম হলেও প্রদর্শনী বেশ ঝমকালো! দেশপ্রেমিক ইস্পাত দৃঢ় আওয়ামী লীগের কর্মী সংখ্যায় বিপুল। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ নন- এটাই বড় সমস্যা। সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ হবার ডাক এসেছে। ছোট ছোট গ্রুপ করুন। মনে রাখতে হবে, সম্মিলিত শক্তির উত্থান আর অমিত দেশপ্রেমে সব সম্ভব। প্রমাণ বঙ্গবন্ধু, প্রমাণ জননেত্রী শেখ হাসিনা। ভেজালেরা বিপদে চিহ্নিত দলের বোতল ও সাকি বন্ধুর আড়াল নেবে, দেশ ছেড়ে সেকেন্ড হোমে পালাবে। নেত্রীকে ঘর-বাইরের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতেই হবে- জীবনের দামে। তিনি ছাড়া দেশ বা দল এগিয়ে নেয়ার কেউ নেই। কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁতে দাঁত কামড়ে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তার চারপাশেই ভেজাল তেলের স্রোত আর বর্ণচোরা বিষাক্ত জেলি ফিসের ভিড়। জঙ্গি, উগ্রবাদী, ধর্মবেপারি, দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালীদের সাথে আঁতাত অনেকের। বর্ণচোরা নেতা, আমলাকে পকেটে রেখে সুযোগের অপেক্ষায় এই চক্র। আলামতে খুবই পরিষ্কার। অদৃশ্য অপশক্তিকে কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না। ফণা তোলার আগেই বিনাশ করে দিতে হবে। আগাছায় ভরে গেছে দল, দিতে হবে নিবিড় নিড়ানি।

কেনো এমন হচ্ছে?

চট্টগ্রামে নগরীর একমাত্র সবুজ চত্বর সিআরবি। প্রকৃতির এমন প্রাচীন বৃক্ষশোভিত পাহাড়ঘেরা বিশাল ও ঘন সবুজ নিসর্গ পৃথিবীর কোনো নগরে নেই। চট্টগ্রাম নগরীর একমাত্র প্রাকৃতিক অক্সিজেন যোগানদাতাও এই সবুজ। সাথে আছে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ও চাকসু’র প্রথম জিএস আরদুর রবসহ আরো বেশ ক’জন শহীদের কবর। পিপিপি’র কাভারে সিআরবি সংলগ্ন ও শহীদ স্মৃতি মোড়ানো প্রায় হাজার কোটি টাকার ৬ একর জমি ৮ কোটি টাকা নামমাত্র দামে ৫০+১২ মোট ৬২ বছরের জন্য লিজ দেয়া হয়েছে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানকে।

পিপিপি চুক্তিভুক্ত হওয়ায় রেল ও একটি প্রভাবশালী সুবিধাভোগী দলীয় চক্র দাবি করছে, এটা প্রধানমন্ত্রীর নিজের প্রকল্প। বিরোধিতা করা মানেই প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা! নগরীর সর্বস্তরের নাগরিকের দু’মাসের বেশি সময় ধরে চলা সিআরবি রক্ষা আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই এমন হাস্যকর ও নির্লজ্জ দাবি। যতটুকু জানা গেছে, রেলের কোনো জায়গায় হাসপাতাল হবে, তা প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতে নেই। সিআরবিও সংলগ্ন এলাকা ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে চিহ্নিত। হেরিটেজ সাইটে কোনো স্থাপনা করা নিষিদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি পেতে কিছুদিন আগে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ এর নামে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ প্রকল্পটির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, তাও মধ্যরাতে। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা বা তার পরিবারের সদস্যদের নাম নিয়ে যারা এমন জঘন্য প্রতারণার ব্যবসা করে, তারা কীভাবে নেত্রী বা বঙ্গবন্ধুর নির্ভেজাল অনুসারী হতে পারে? বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশনের অনুমোদনহীন এই সাইনবোর্ড বঙ্গবন্ধু পরিবারকে অপবাণি জ্য বিস্তারে হাতিয়ার বানানোর কূটকৌশল মাত্র। এটা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে দেশে-বিদেশে ছোট করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের ঘৃণ্য চক্রান্ত ছাড়া আর কী?

দুঃখজনক হলেও সত্য, সিআরবি রক্ষা আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা এখনো ভয়াল ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগে তুলে ধরতে পারেননি! কোথায় তাদের বাধা, তাও পরিষ্কার না। উদাহরণটা তুলে ধরার কারণ, প্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে তার নামের চে’ও বড় বড় আরও কত আর্থিক ও অনৈতিক প্রতারণা ঘটছে, তা সরেজমিন অনুসন্ধানের সময় হয়েছে। না হলে সর্বনাশ ঠেকানো ও দুর্জন চিহ্নিত করা অসম্ভব।

এটা সত্য, এ দেশে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল একটা বড় পরিবারেও কোনো কোনো সদস্য লোভের টানে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। তাও পরিবার প্রধানের অগোচরে। স্বাভাবিক কারণে বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘লোভী ও চাটার বহরে’ ভর্তি বিপুল মানুষের একটি দেশ সততার একক আলো দিয়ে নেত্রীর পক্ষে পরিচালনা অসম্ভব কঠিন। তিনিতো তার চারপাশের সবাইকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু বিশ্বাস ও আস্থার গোঁড়ায় কেউ যদি ঘৃণ্য ব্যক্তিস্বার্থের ধারালো কুড়োল চালায়, তিনি কীভাবে ঠেকাবেন? তার অবস্থান থেকে কল্পনা করলে কিছুটা হলেও ধারণা নেয়া যায়। আসলে তিনি এককভাবে বিশাল একটা পর্বত বয়ে যাচ্ছেন যুগের বেশি। অবিশ্বাস্য শোক, প্রচণ্ড কষ্ট, অভিমান বুকে চেপে বাঙালিকে সোনালি ভোর উপহার দিতে হাসিমুখে সকল বৈরিতা জয় করে দেশ সেবা করে যাচ্ছেন। এমন কষ্টসহিষ্ণু, সৎ, উদার, অদম্য দেশনায়ক সমকালীন বিশ্ব ইতিহাসে দ্বিতীয়টি দুর্লভ। শেখ হাসিনা আর বাংলাদেশ এখন সমার্থক হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করতেও আতঙ্কে হিম হয়ে যায় সর্বাঙ্গ।

তাহলে এবার বুঝে নিন কী করা উচিত। কুচক্রী আর লোভী হায়েনা, দানবদের কী আর বাড়তে দেয়া উচিত? ঘরের ভেতরের বিষাক্ত বাস্তুসাপ ধংস করার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। এরা চেনাজানা, গায়ে-পোষাকে-লেবাসে-বুলি বচনে বঙ্গবন্ধুর ভেক, কিন্তু আচরণ-কাজে সর্বভুক দানব। তাহলে বিলম্ব কেনো? দানব নিধনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু হোক। ঘরের পর বাইরের দাঁতাল সাফাই আপনাই সহজ হয়ে যাবে।

মোস্তফা কামাল পাশা, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত