ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

পুলিশে মাফ, শিক্ষার্থী কেন পাবে না হাফ?

  নাজমুল হুদা

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১৪:১২  
আপডেট :
 ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১৪:১৮

পুলিশে মাফ, শিক্ষার্থী কেন পাবে না হাফ?

সম্প্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সারা দেশে ধর্মঘট করেছেন। এরপর ডিজেলচালিত বাসভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে অধিকাংশ বাসেই ২৭ শতাংশের বেশি বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছে।

মহানগরীতে বিভিন্ন রুটের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা নেয়ার কথা হলেও এই পদ্ধতি মানছে না অধিকাংশ বাসচালকরা। 'ওয়েবিল' পদ্ধতি চালু রেখে সে অনুযায়ী যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সাধারণ জনগণের পাশাপাশি বরাবরের মতোই বাসের বাড়তি ভাড়ার বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নগরে চলা অধিকাংশ বাসেই শিক্ষার্থীদের 'হাফ পাস' নিচ্ছে না। অর্ধেক ভাড়া দিতে গেলে বাসের হেলপার, ড্রাইভার ও চেকার কর্তৃক হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

সম্প্রতি রাইদা বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাওয়ায় ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয় বাসটির চালকের সহকারী। রামপুরা এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পরিবহনটির প্রায় ৫০টি বাস আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এরপর হতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয়ার ঘোষণা দেয় বাস কর্তৃপক্ষ। এমন চিত্র মহানগরীতে নিয়মিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ২৪৬টি রুটে প্রায় ৮ হাজার বাস চলাচল করে। অথচ এর মধ্যে হাতেগোনা ১০-১২টি রুটে হাফ ভাড়ার প্রচলন ছিলো। সম্প্রতি বাসের বাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পর এই সংখ্যা ২-৩ এ নেমে এসেছে। বেশিরভাগ বাসের দরজার ওপরে বা পাশেই লেখা হচ্ছে হাফ পাস নেই।

বাংলাদেশে হাফ ভাড়ার তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৬৪ সালে বিআরটিসি চারটি বাস দিয়ে সরকারিভাবে গণপরিবহন সেবা দেয়া শুরু করে। তখন থেকে সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ সরকারি সেবা। পরবর্তীতে যখন সরকারি বাসের সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি বাস গণপরিবহনে সেবা দেয়া শুরু করে, তখন সরকারি বাসের নিয়মে বেসরকারি বাসেও ছাত্রদের হাফ ভাড়া নেয়া হত। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো লিখিত নিয়ম নেই। এটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়ায়, যা পরবর্তীতে চলে আসছে।

এদিকে মহানগরীর প্রায় সব বাসেই পুলিশ সদস্যদের সম্পূর্ণ পাস দেয়া হয়৷ অর্থাৎ তাদের থেকে কোনো ভাড়া নেয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশের থেকে ফুল পাস নেয়া হলে তাদের থেকে হাফ পাস নিতে সমস্যা কেন? পুলিশ সদস্যরা তো চাকরি করেন। শিক্ষার্থীরা তো কোনো চাকরি করে না।

ঢাকা শহরে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে কয়েক লাখ। এই শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। সড়কে যাতায়াতে তাদের যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তা লেখাপড়ার খরচের চেয়েও অনেক বেশি। গ্রাম থেকে ঢাকায় লেখাপড়া করতে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরো অসহনীয়। কোনো আয়-উপার্জন না থাকায় কৃষক বাবা-মায়ের থেকেই সম্পূর্ণ লেখাপড়ার খরচ ও ঢাকায় থাকার খরচ আনতে হয়।

একটা উদাহরণ দেই, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মহাখালীতে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর কলেজে যেতে এক শিক্ষার্থীর ৩০-৪০ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন আসা-যাওয়ার হিসাবে শুধুমাত্র বাস ভাড়াই ৬০-৮০ টাকা। যা মাসে গড়ে ২ হাজার টাকার মতো, বছরে ২৪ হাজার টাকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু যাতায়াত বাবদ এত অর্থ ব্যয় করা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কঠিন। এছাড়া লেখাপড়ার অন্যান্য খরচ ও ঢাকায় বসবাসের খরচ তো আছেই। করোনায় অনেক পরিবারের পক্ষে সন্তানের শিক্ষা ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করবে। দেশকে নেতৃত্ব দেবে। সমাজের কল্যাণে কাজ করবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে হবে। তাদের সুন্দর পরিবেশে লেখাপড়া নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে মহানগরীর প্রতিটি বাসে 'হাফ পাস' নিশ্চিত করতে সকল মহলের উদ্যোগ নিতে হবে। সড়কে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে যেমন শিক্ষার্থী হেনস্তা কমবে, তেমনি বাস আটকে সড়ক অবরোধ বন্ধ হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত