ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ওয়েবিনারে বক্তারা

‘নারী নির্যাতন রোধে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:২৫

‘নারী নির্যাতন রোধে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার’

‘নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে নারীর পাশাপাশি পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সেইসঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে শনিবার বেলা ১১টায় সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার ক্লাব ‘নারী নির্যাতন রোধে এই সময়ে করণীয়’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

ওয়েবিনারে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আক্তার ও রোজিনা ইসলাম, নিউজ টুয়েন্টিফোরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নি, দৈনিক ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রাবেয়া বেবী, একাত্তর টিভির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফারজানা রূপা, নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক শাহানাজ শারমিন, বাংলা ট্রিবিউন-এর প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম, দৈনিক দেশ রূপান্তর’র ফিচার সম্পাদক মোহসিনা লাইজু এবং দীপ্ত টিভির প্রতিবেদক সাদিয়া চৌধুরী।

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইলিয়াস আহমেদ। সমাপনী বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান। ওয়েবিনার আয়োজক কমিটির পক্ষে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মালেকা বেগম। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক প্রতিমা দেব, নাজনীন সুলতানা ও জোবায়রা বিশ্বাস, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জায়েদ উল এহসান, সিএসই বিভাগের শিক্ষক আয়েশা আজিজ প্রভা এবং জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন সজীব সরকার। ওয়েবিনারের সঞ্চালনা করেন বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আসিফুন নাহার। ওয়েবিনারটি দীপ্ত টেলিভিশনের সহযোগিতায় সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি ও দীপ্ত টিভির ফেসবুক পাতায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

ওয়েবিনারে শাহনাজ মুন্নি বলেন, নারীর প্রতি বৈষ্যম্য রোধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার। কেননা একটি শিশু পরিবারে যা দেখে সেই শিক্ষাই লাভ করে। তাই পরিবারে নারীর প্রতি সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে শিশুরা তা-ই শিখবে।

তিনি বলেন, পুরুষের মানসিকতা ও চেতনার উন্নতি না হলে সহিংসতা বা বৈষম্য দূর হবে না। নারীদের উদ্দেশে জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে হলে সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নারী বলে সবকিছু মেনে নিতে হবে, এই ধারণা থেকে বের হতে হবে।

ফারাজানা রূপা বলেন, এখনো নারীর জন্য সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের বিপরীতে নারীর অংশগ্রহণই তার প্রমাণ। এমনকি গণমাধ্যমেও শক্তিশালী নারী সাংবাদিক আর তৈরি হচ্ছে না।

তিনি বলেন, কথা বলার স্বাধীনতা সবার রয়েছে। তবে সম্প্রতি নারীর পোশাক, চলাফেরা নিয়ে এত বেশি কথা হচ্ছে, যা অনেক সময় অপরাধের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

রোজিনা ইসলাম বলেন, নারীর যুদ্ধ নিজেকেই করতে হবে। নিজের অবস্থান শক্ত করা, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা এসব বড় ব্যাপার। বর্তমানে সাইবার ক্রাইম বেড়ে গেছে। এর বড় ভুক্তভোগী নারীরা। মানুষ এখন গণমাধ্যমের খবরের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো খবর বেশি বিশ্বাস করে। এ কারণে অনেক সময় নানা গুজব ছড়ায়। এসব সমস্যা সমাধানে নারী ইস্যু নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

রাবেয়া বেবী বলেন, সমতার দিক দিয়ে নারীরা সবদিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। এখানে পরিবারেরও ভূমিকা রয়েছে।

নাজনীন আক্তার বলেন, বিচার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী হতে হবে। দ্রুত ও ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এমন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে।

শাহানাজ শারমিন বলেন, নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি এখনও রয়ে গেছে তবে এর ধরন হয়তো কিছুটা বদলেছে। করোনার সময়ে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। বাল্যবিবাহকেও আমি নারী নির্যাতনই বলবো। নারীদের পথে হাজারো সমস্যা আসবে, তবে নারীদের ভাবতে হবে, তারা যা ভাবছেন বা করছেন, তা সঠিক কিনা। ঠিক থাকলে নিজেদের মতো এগিয়ে যেতে হবে।

সাদিয়া চৌধুরী বলেন, বিষয়গুলোকে সবসময় নারীদের বলে আলাদা করা ঠিক নয়। বিষয়গুলো নারী-পুরুষ সবারই। নির্যাতনের বিষয়গুলো এসব ঘটনা ঘটার পর কী হবে, সবাই শুধু এই দিকটা আলোচনা করেন। কিন্তু আমি বলতে চাই এসব ঘটনা কেন ঘটে বা কীভাবে বন্ধ করা যায়, সেটাও ভাবতে হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান বলেন, আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে সাধারণ স্বাস্থ্য সম্পর্কেই জ্ঞান খুব কম। যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ের শিক্ষাটাকে সাধারণ স্বাস্থ্যশিক্ষার সঙ্গেই সিলেবাসে পড়াতে হবে। আর যারা পড়াবেন, সেই শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। সেক্স এডুকেশনের বিষয়টি পরিবার থেকেই শুরু হতে হবে। বুঝতে হবে, যৌনতা মানে নিপীড়ন নয়, কোনোকিছুতে জোর করাটাই নিপীড়ন।

অধ্যাপক ড. মালেকা বেগম বলেন, আজকের আলোচনা থেকে নতুন অনেক বিষয় উঠে এসেছে যা ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও বন্ধুবান্ধবসহ সবার সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজন হবে। আজকের এই আয়োজনের ব্যাপারে যারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং যে সাংবাদিকরা আজ আমাদের এ সভায় সময় দিলেন, তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

রেজিস্ট্রার ইলিয়াস আহমেদ বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা এখনও রয়ে গেছে। এজন্য দেশে দেশে এ কর্মসূচি পালনের আহ্বানে আমরাও সাড়া দিয়ে আজকের এই আলোচনার আয়োজন করেছি। করোনার এই সময়ে এমন নির্যাতন আরও বেড়েছে। এটা প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত