ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্যাংক ভীতি দূর হোক

  রিয়াজুল হক

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:০৯

ব্যাংক ভীতি দূর হোক
ছবি- সংগৃহীত

কয়েকদিন আগে পরিচিত এক লোক আমাকে বললেন, প্রতি মাসে এক হাজার টাকা জমা রাখতে চান। তিনি অবশ্য আমাকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান/ উপায়ের কথা নিজেই বললেন। আমার কাছ জানতে চাইলেন, কোনটা ভালো হবে?

আমি তাকে যে কোন একটা ব্যাংকে ডিপিএস খুলতে বললাম। বলা প্রয়োজন, তিনি টাকা সঞ্চয়ের বিকল্প কয়েকটি ব্যবস্থার কথা বললেও ব্যাংকে জমা রাখার কথা বলেননি। যে কারণে আমি ব্যাংকে ডিপিএস করার কথা বললেও তিনি ব্যাংকে যেতে রাজি ছিলেন না। কারণটাও অদ্ভুত, ব্যাংকের ভিতর যেতে তার ভয় করে। আরো বললেন, সে শুধু নিজের নাম লিখতে পারে, আর কিছু লিখতে পারে না।

এটা যে সমস্যা না, সেটার স্বপক্ষে তাকে অনেক যুক্তি দেখালাম। তারপর তিনি হয়ত কিছুটা বুঝতে পারলেন।

একটা ঘটনা বলি। প্রায় ছাব্বিশ বছর আগের কথা। সাবিনা বেগম মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটা বুয়ার কাজ করে। মধ্য বয়সী এই নারীর স্বামী রিক্সা চালায়। সাবিনা যে বাসায় কাজ করত, সে বাড়ির গৃহকর্ত্রী সাবিনাকে ব্যাংকে ডিপিএস খোলার পরামর্শ দিল। এতে করে কিছু টাকা ব্যাংকে জমা হবে। পরে একটা কাজে আসবে। সে সময় যারা কিছুটা বোঝে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের দিকে, সবাই ডিপিএস খোলার জন্য ব্যাংকের কাউন্টারে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকত।

বলা যায়, ডিপিএস খোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল সে সময়। কিন্তু সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়। সাবিনা কিংবা তার স্বামী শুধু নাম লিখতে পারত। আর কিছুই জানতো না। যাই হোক, সেই বাড়ির গৃহকর্তা সাবিনার স্বামীকে নিয়ে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে সকল ফরম পূরণ করে মাসিক ৫০০ টাকার একটি ডিপিএস খুলে দিলেন। সাবিনার স্বামী লেখাপড়া জানা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা জমার ফরম পূরণ করে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসতো। এভাবে ১০ বছর প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে ১০ বছর পর তিনি খুব সম্ভবত ১,২৫,০০০ টাকা পেলেন। ২০০৭ সালে সেই টাকা দিয়েই ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠালেন। এখন তাদের অবস্থা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেছে। সাবিনা বেগমকে আর মানুষের বাসায় কাজ করতে হয় না। স্বামী একটা মুদি দোকান চালায়। অভাব অনটন গত ১৩/১৪ বছরে আর স্পর্শ করতে পারেনি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ডিপিএস টা না থাকত, তবে সাবিনার পরিবারের পক্ষে একসাথে লক্ষাধিক টাকা জমানো কখনো সম্ভব হত না। ব্যাংকে সামান্য করে সঞ্চয় একসময় ভাগ্য ফেরাতে সহায়তা করেছে।

এখনো আমাদের লেখাপড়া না জানা মানুষগুলোর মধ্যে ব্যাংক অনীহা বেশি কাজ করে। যে কারণে অনেকেই নামসর্বস্ব ভুয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কষ্টের সঞ্চিত অর্থ জমা রাখেন। কেউবা অতি উচ্চ মুনাফার আশায় এই কাজ করে থাকেন। কয়েক বছর পরে দেখা যায়, ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির দরজায় বড় একটা তালা ঝুলছে। গরীব মানুষগুলোর চোখের জল হয় একমাত্র সম্বল। অনেক ঘটছে এরকম ঘটনা। তাই বুঝেশুনে সঞ্চয়ের টাকা জমা রাখুন এবং ব্যাংক ভীতি দূর করুন, কারণ সেখানেই আপনার অর্থ সর্বাধিক নিরাপদ।

লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমজে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত