ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩২ মিনিট আগে
শিরোনাম

সিদ্দিকা কবির: টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠানের পথিকৃৎ, উপস্থাপক-পুষ্টিবিদ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৩১  
আপডেট :
 ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৪২

সিদ্দিকা কবির: টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠানের পথিকৃৎ, উপস্থাপক-পুষ্টিবিদ
সিদ্দিকা কবির

পুষ্টিবিশেষজ্ঞ, রন্ধনশিল্পী ও শিক্ষাবিদ সিদ্দিকা কবীর বাংলাদেশে রান্নাকে শিল্প হিসেবে পরিচিতিতে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

দেশে রান্নার বই লেখার প্রচলন এবং তা জনপ্রিয় করে তোলার প্রধান কৃতিত্ব সিদ্দিকা কবীরের। তার বই বাংলাদেশের রসনাবিলাসী মানুষের রান্নাঘরে অপরিহার্য হয়ে উঠে সেই সত্তরের দশক থেকে। রান্না করতে পছন্দ করেন অথচ সিদ্দিকা কবীরের বই নেড়ে চেড়ে দেখেননি এমন মানুষ বোধ হয় খুব একটা পাওয়া যাবে না বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বুক শেলফ পেরিয়ে সিদ্দিকা কবীর পৌছে গেছেন সুদূর প্রবাসেও। বিদেশে পড়তে যাবার আগে রান্নায় অপটু ছাত্র-ছাত্রীরা স্যুটকেসে ভরে নিয়েছেন তার বই। তার রচিত "রান্না-খাদ্য-পুষ্টি" সবচেয়ে বেশি বিক্রিত রান্নার বই। সিদ্দিকা কবীর তার ‘রান্না খাদ্য পুষ্টি’ বইটির জন্য ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে ইংরেজি ভাষায় একটি কারি রান্নার বই লিখেন।

১৯৮০ সালে লিখেন পাঠ্যবই খাদ্যপুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থা যা স্নাতক পর্যায়ে পড়ানো হয়। এছাড়া তিনি ১৯৯৭ সালে দৈনিক জনকণ্ঠে রসনা নামে কলাম লিখেন যা পরবর্তীতে খাবার দাবারের কড়চা নামে প্রকাশিত হয়। শুধু বই লেখাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না সিদ্দিকা কবীর। ১৯৬৫ সালে তখনকার পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরে বাইরে’ নামে একটি রান্নার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার টিভি উপস্থাপনার শুরু। “সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি” নামে তার একটি টেলিভিশন শো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে। সেই অনুষ্ঠানে তার সাথে উপস্থাপনার কাজ করতেন শারমিন লাকি। সিদ্দিকা কবির দীর্ঘদিন ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা নেন।

সিদ্দিকা কবীরের জন্ম পুরানো ঢাকার মকিম বাজারে, ১৯৩১ সালের ৭ মে। তার পিতা মৌলভি আহমেদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ও পরবর্তীতে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। সিদ্দিকা কবীরের মাতা সৈয়দা হাসিনা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে সিদ্দিকা কবীর ব্যাংকার সৈয়দ আলী কবীরকে বিয়ে করেন।

শিক্ষা সিদ্দিকা কবীর পড়াশোনা করেন প্রথমে ইডেন কলেজে। সেখান থেকে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন ও সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পর তিনি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটি হতে ১৯৬৩ সালে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি পান।

চাকরি-জীবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় সিদ্দিকা কবীর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপূর্ব তৎকালীন পাকিস্তান রেডিওতে ঘোষক হিসাবে খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দেন। স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পরে প্রথমে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলে শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করেন। এর পর তিনি ইডেন কলেজে গণিতের প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর দেশে ফিরে তিনি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, আজিমপুর, ঢাকা এর সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

পুরস্কার: অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার (২০০৪)

অধ্যাপক সিদ্দিকা কবীর ৩১ জানুয়ারি ২০১২-তে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার স্কয়্যার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি হৃদরোগসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুপূর্ব বেশ কিছুদিন সিআরপি-তে চিকিৎসারত থাকার পর, উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কয়্যার হাসপাতালে স্থানান্তরের পর সেখানে চিকিৎসারত থাকাকালীন তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত