ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

অগ্নিকন্যা আশালতা সেন

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:২২

অগ্নিকন্যা আশালতা সেন
ফাইল ছবি

আশালতা সেন ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব, সক্রিয় কর্মী, কবি ও সমাজসেবক এবং অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী।

ভারতবর্ষে ধর্ম, সমাজ ও শাস্ত্রের নামে নানাভাবে নারীদের অগ্রযাত্রা ব্যহত করা হয়েছে, তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, চালানো হয়েছে অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন। সতীদাহ, পর্দাপ্রথা, পণপ্রথা এবং কৌলিন্য-প্রথার যূপকাষ্ঠে বলি হয়েছে অগণিত নারীর জীবন। এই তমসাচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যেও কোনো কোনো নারী সকল শৃঙ্খল ভেঙে আলোর মশাল হাতে বের হয়ে এসেছেন, সমাজ-সভ্যতার অগ্রযাত্রায় শামিল হয়েছেন। এমনি এক সংগ্রামী নারী আশালতা দাশগুপ্ত সেন।

শুধু তাই নয়, নারীসমাজের অগ্রযাত্রায় আশালতা সেন আবির্ভূত হয়েছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে। ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে এবং সকল শৃঙ্খল ভেঙে নারীদের বের করে আনতে তিনি সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তৎকালীন পূর্ববাংলার নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে তিনি অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিলেন।

তিনি ১৮৯৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বিক্রমপুরের বিদগাঁও গ্রামে। তার পিতার নাম বগলামোহন দাশগুপ্ত ও মাতার নাম মানদাসুন্দরী দাশগুপ্ত। পিতা ছিলেন নোয়াখালী জজ কোর্টের আইনজীবী।

আশালতা সেন ১৯০৪ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে মাসিক পত্রিকা অন্তঃপুর প্রকাশ করেন এবং তার জাতীয়তাবাদী কবিতা সুধীসমাজের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন এবং ১৯০৫ সালে স্বদেশি আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ তাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তিনি তখন ঢাকা গেণ্ডারিয়ায় নিজ বাড়িতে নারীদের জন্য ‘শিক্ষাশ্রম' নামে একটি বয়নাগার তিনি স্থাপন করেন। নারীদের জন্য বেশ কয়েকটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তৎকালীন পূর্ববাংলার নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে তিনি অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিলেন।

১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধীর ‘লবণ আইন’ অমান্য আন্দোলনের সময় প্রতিবাদস্বরূপ জনসমক্ষে লবণ তৈরি করে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে তিনি বুভুক্ষু মানুষের ত্রাণ তৎপরতায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থা পরিষদ এবং ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন।

আশালতা সেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশের জনগণকে নানাভাবে সাহায্য করেন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কয়েকটি গানও রচনা করেন। ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

আশালতা সেনের বাড়িটি বর্তমানে ‘গেন্ডারিয়া মনিজা রহমান বালিকা বিদ্যালয়’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি দিল্লিতে মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত