ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে আজাদ

  আলফি শাহরীন

প্রকাশ : ২২ মে ২০২২, ১৪:০১

সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে আজাদ

অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জীবন-যাপন অন্য স্বাভাবিক দশটি মানুষের মতন নয়। তারা প্রতিনিয়ত লড়ছে জীবন বাঁচার লড়াই। তারা ভাগ্য কুঁড়িয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তায়, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করে। আবার কেউবা ডাস্টবিন এর ময়লা-আবর্জনা থেকে। একটু সাহায্যের জন্য হাত পেতে বেড়ালেও নানান রকম কটূক্তি শুনতে হয় তাদের এই সমাজের কাছ থেকে।

তবে একটু ভালোবাসা আর সামান্য সাহায্য পেলে তারাও তাদের জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এমনটাই ধারনা লাইফ সার্ভ বাংলাদেশের ফাউন্ডার আজাদ হোসেনের। সমাজমূলক কাজ প্রেমী আজাদ, যার সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ জার্নালের। আসুন তার কাছেই শুনে নেই তার এগিয়ে যাওয়া গল্প।

“ আমি মো. আজাদ হোসেন। বর্তমানে পড়াশোনা করছি গ্রিন ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের সমাজ বিজ্ঞান এবং নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম-এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। কাজের সুবাধে দেশে ও আন্তর্জাতিক সংগঠন-এর সঙ্গে টুকটাক কাজ করে থাকি এবং কিছু সময় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট-এর কাজ করি।

ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে শান্তি লুকিয়ে আছে যা অন্য কোনো কাজে নেই। সেই শান্তির খোঁজেই নেমে পরি সমাজে অসহায় মানুষদের নিয়ে কিছু করার জন্য। অতঃপর যাত্রা শুরু হয় আমার নিজের গড়ে তোলা ছোট একটি ফাউন্ডেশন ‘লাইফ সার্ভ বাংলাদেশের’ ।

লাইফ সার্ভ বাংলাদেশ-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা। পথ শিশু এবং সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষামূলক কার্যক্রম নিয়ে কাজ করা। বৃদ্ধাশ্রমের দাদা-দাদুদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম করা। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা,পশুদের নিয়ে কাজ করা, যারা আর্থিক ভাবে সচ্ছল না তাদেরকে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করা। প্রতি মাসে ছোট ছোট কিছু ইভেন্ট করা।

শুরুর গল্পটা ২০১৬ সালের, আমার দাদি হাসপাতালে ভর্তি ছিলো তখন তার রক্তের প্রয়োজন ছিলো ২ ব্যাগ, বিভিন্ন মানুষ-এর কাছে সহযোগিতা চেয়ে এবং বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক এ রক্ত খুঁজেও পাওয়া যায়নি। মাথায় আসলো আমার মতো এই রকম হাজারো মানুষের কথা যারা-এর ভুক্তভোগী। প্রতিজ্ঞা নিলাম তখনি, আমি রক্ত সংগ্রহ নিয়ে মানুষকে যতোটা সম্ভব সহযোগিতা করবো। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা কতো সময়ই না ব্যয় করি। তাই চিন্তা করলাম ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা যদি ভালো কিছু কাজ করতে পারি তাহলে আমাদের সময় গুলোকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারবো। তাই আর সময় ব্যয় না করে ১ই নভেম্বর ২০১৭ সালে শুরু করি আমাদের সংগঠন-এর যাত্রা। উদ্যোগ-এর শুরুটা হয় রক্তদান কর্মসূচি দিয়ে। যে সকল মানুষদের রক্তের প্রয়োজন হতো তাদের রক্ত সংগ্রহ করে দিতাম আমি এবং আমার সংগঠনের ভলান্টিয়াররা। রক্ত দিতে গিয়ে আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হই, কিছু মাধ্যমে আমরা জানতে পারি আমরা যে রক্ত গুলো দিয়ে আসতাম সেই রক্ত গুলো রোগীকে না দিয়ে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকে ও যাদের রক্তের প্রয়োজন হতো তাদের কাছে বিক্রি করে দিতো। সেখানে আমাদের করার কিছুই ছিলো না । তবে আমরা চেষ্টা করতাম সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার।

এ কাজে বাধা ছিলো অনেক, তবে ‘লাইফ সার্ভ বাংলাদেশ’ থেমে যায়নি। বাধাকে মেনে নিয়েই আমরা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যক্রম করা শুরু করি। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে আমাদের ৫০ জনেরও বেশি ভলান্টিয়ার সেবামূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছে। ঢাকায় ১০০ জন অসহায় শিশুকে আমরা শিক্ষামূলক কোচিং করিয়ে থাকি। যাতে তারা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয়। কিছুদিনের মধ্যে কক্সবাজারে চাকমা জনগোষ্ঠীদের জন্যও স্কুল কোচিং ও কিছু ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করবো যাতে করে তারা এ ট্রেনিং থেকে পর্যাপ্ত শিক্ষা গ্রহণ করে কাজে লাগাতে পারে এবং নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারে।

সকল কাজেই বাধা বিপত্তি থাকে, তেমনি আমারটায়ও ছিলো। আমার ছোট সংগঠনকে এগিয়ে নেয়াও এতো সোজা কাজ ছিলো না আমার জন্য। যাত্রার শুরু থেকেই নানান রকম সমস্যার মোকাবেলার সম্মুখীন করতে হয় আমাকে। সামাজিক কার্যক্রমের বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই পরিবারের বাধার সম্মুখীন হই। তারপর আশেপাশের প্রতিবেশীরা বিভিন্ন ধরনের কথা বার্তা বলতো তখন চুপচাপ থাকতাম খুবি কষ্ট লাগতো সবার কথাগুলো শুনে। ২ থেকে ৩ বছর আগে যেই মানুষগুলো বিভিন্ন ধরনের কথা শুনাতেন আমাকে তারাই এখন আমার বেশ প্রশংসা করেন। সবচেয়ে বেশি হুমকির শিকার হই প্রথম যখন আমরা ফেসবুক গ্রুপে কাজ করা শুরু করি তখন। ফেসবুক গ্রুপের নিয়ম কানুন নিয়ে তখন অনেক কিছুই জানতাম না। তারপর আমাদের গ্রুপের সঙ্গে আরও একটি গ্রুপের নামের কিছুটা মিল হওয়ার কারণে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে সেই গ্রুপের এডমিনরা, তখন খুব বেশি চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম তারপর সেই গ্রুপের ফাউন্ডার আপুর সঙ্গে আমার কথা হয় হলে সে ব্যাপার টা পজেটিভলি নেন এবং তাদের এডমিনদের খারাপ ব্যবহারের কারণে তাদের পক্ষ থেকে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি আমার বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গুলো ফেসবুকে দেখতেন এবং আমাদের এই কার্যক্রম গুলো তার বেশ ভালো লাগতো বলেও জানান আমাকে।

এরপর তিনি আমাকে সাজেশন দিলেন আমার গ্রুপের নাম পরিবর্তন করার জন্য এবং আমি তার কথার সম্মান রেখে আমার গ্রুপের নাম পরিবর্তন করে ফেললাম। এরপর আমাদের মাঝে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হলো ভাই-বোনের এবং আপু আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম এ সহযোগিতা করলেন।

তার কাছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমার এই সংগঠনকে আরও অনেক দূরে নিয়ে যাওয়ার। স্বপ্ন দেখছি একটা বৃদ্ধাশ্রম করার, সেখানে বয়স্ক দাদা-দাদুরা থাকবেন এবং তাদের সঙ্গে পথ শিশুরা বা সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাও থাকবে। এবং সমাজে বিভিন্ন ধরনের অবহেলিত নারী যারা আছেন তারাও থাকবে।

ইচ্ছে আছে একটি স্কুল হবে সেই স্কুলে বাচ্চারা স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে পারবে এবং সেটি হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল কাজ শিখতে পারবে সেই স্কুলে তারা যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি টেকনিক্যাল কাজ গুলো শিখে ভবিষ্যতে তাদের আয় রোজগার করতে আর চিন্তা না করতে হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএস/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত