ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

মৃধা আলাউদ্দিনের নতুন কাব্যগ্রন্থ : অল্পকিছু বিষ প্রয়োজন

  সাহেদ বিপ্লব

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২২, ২৩:৪৯

মৃধা আলাউদ্দিনের নতুন কাব্যগ্রন্থ : অল্পকিছু বিষ প্রয়োজন

প্রদৃপ্ত-প্রথাবিরোধী এবং একই সঙ্গে নিভৃতচারী কবি মৃধা আলাউদ্দিনের লেখা একটি বইয়ের নাম ‘অল্পকিছু বিশ প্রয়োজন’। এবারের বইমেলা বের হওয়া এ বইটি ইতোমধ্যেই পাঠক সমাজে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে।

মৃধা আলাউদ্দিনের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক বছরের কিন্তু তিনি এমন ধরনের গভীরবোধসমৃদ্ধ দোঁহাকাব্য- শুঁড়িখানার ষড়ৈশ্বর্য আর নারীর নীল ব্যথায় ভরা কবিতা পাঠকদের হাতে তুলে দিবেন তা আমরা ভাবতেও পারিনি। বলা যায় বাংলা সাহিত্যের একটি নতুন পথের সূচনা করলেন নব্বইয়ের আলোচিত-সমালোচিত এই নিভৃতচারী কবি মৃধা আলাউদ্দিন।

বলা চলে অল্প কথায় অনেক ভাব সৃষ্টি করা এক কবির নাম মৃধা আলাউদ্দিন। সে দিক দিয়ে তার এই কবিতা সফলতার দিকেই দিয়ে হাঁটছে এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। মৃধা একজন সমাজ সচেতন কবি। তার প্রতিটি কবিতায় সমাজের কল্যাণ হবে এমন কবিতাই লেখেন তিনি। এই বইতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মৃধা এই দেশের সাধারণ মানুষের কথা বলার চেষ্টা করেছেন তার কবিতায়। দেশের প্রতি কী দারুণ ভালোবাসা থাকলে কবি এভাবে বলতে পারেন। আমরা যদি তার কবিতার দিকে একটু দৃষ্টি দেই তাহলে দেখা যাবে কী মায়া দিয়ে তিনি লিখেছেন তার কবিতা- ‘এই যদি হয় আমার দেশের এইখানে আর থাকবো না,/গুঁড়িয়ে দেবো শুঁড়িখানা রাজপ্রাসাদও রাখবো না’।

এই দেশের সাধারণ মানুষকে কতটুকু ভালোবাসলে এমন কথা বলতে পারেন। এই দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে রাজার যে প্রাসাদ তাও গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছেন কবি মৃধা আলাউদ্দিন।

২.

আমাদের দেশে যেখানে এখনকার কবিরা প্রেমিকার মুখে হাসি ফুটাতে, একটু সুরসুরি দিতে তাদের নিয়ে কবিতা লিখে থাকে। মৃধা সেই পথে হাঁটেননি। তিনি হেঁটেছেন এই দেশের সাধারণ মানুষের চিন্তা ভাবনা নিয়ে। যাদের কথা কেউ বলতে চায় না। একদিকে রাজার চোখ রাঙানো অন্য দিকে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা কিন্তু সব কিছু রেখে সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন আমাদের আজকের আলোচিত কবি মৃধা আলাউদ্দিন।

বুকের ভেতর সাহস কতোটা থাকলে এমন কথা বলতে পারেন একজন কবি। মৃধা তার দুই লাইনের (দোঁহাকাব্য) কবিতার ভেতর অনেক কথা বলতে চেয়েছেন।

আমি মৃধা আলাউদিনের কবিতাগুলো পড়েছি আর অবাক হয়েছি এতো সাহস পেলো কোথায় কবি- কবিকে কখনো কখনো আমার কাছে নির্ভীক কবি বলেই মনে হয়েছে। নির্ব্যাজ ও নির্ব্যূঢ় মৃধাকে আসলেই আপাদমস্তক কবি বলেই মনে হয়, যখন শুনি তিনি বলেন-

শুঁড়িখানায় ঢুকেই দেখি রঙমহলে নারীর দেহ- তোর ছবি/সত্যি বলি আর কিছু না, তখন শুধু এই শহরে আমিই কবি।

৩.

কবি তো এমনই হবার কথা। তার সাহস থাকবে। থাকবে দেশ প্রেম ও দ্রোহ- স্বমহিমায় আত্মচিৎকার উঠে আসবে তার কবিতায় এবং একই সাথে দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকবে। দেশ নিয়ে যারা কথা বলেন মৃধা সেই পথে হাঁটা কবিদের একজন। তিনি যেমন নিজের কথা বলেছেন তেমন বলেছেন দেশের মানুষের কথা তার কবিতার ভেতর দিয়ে। এই কবিতাগুলো সাধারণ পাঠকদের নয়। যারা দেশকে ভালোবাসেন- এমনকি দেশের মানুষকে ভালোবাসেন তাদের জন্য লেখা হয়েছে। আমরা দিন দিন দেশকে ভালোবাসতে ভুলে যাচ্ছি। দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক কবি এমন করতে পারেন না। মৃধাও তার ব্যতিক্রম নয়। আমর াবলতে চাই এই কবিতাগুলো আমাদের সবার পড়া দরকার। অনেক রক্তের বিনিময়ে এই দেশ আমাদের ছিনিয়ে আনতে হয়েছে। তাই আসুন আমরা দেশকে ভালোবাসি তার সাথে এই দেশের সাধারণ মানুষকে। নিজেকে। ৪.

কবি মৃধা আলাউদ্দিন তার কবিতায় উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অতিশয়োক্তি, শ্লেষ ও অন্তর্জালও সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন- সর্বক্ষণই থাকবো আমি শুঁড়িখানায় তবু তোরে ডাকবো না,/দূরে থেকেও দূরে যাবো- দূরের দেশে, তবু দূরে থাকবো না। পাঠকের উদ্দেশ্যে আমরা নিচে মৃধার আরও কিছু দোঁহা তুলে ধরলাম- ক. অবশেষে শুঁড়িখানার নোনা জলে আটকে গেলো ক্যাসিনো সম্রাট। খ. জীবন দিলাম শুঁড়িখানায় সর্বক্ষণই তুচ্ছ ভেবে কেয়ামত/ এখন দেখি এই দুনিয়ার সবখানে ভাই আল্লাহতায়ালার নেয়ামত। গ. শুঁড়িখানায় জোছনা-তারা, পুরা চাঁন ও ষড়ৈশ্বর্য সবই আছে/এখন থেকে আর যাবো না পাছদুয়ারে- নরম নদী নারীর কাছে। ঘ. শুঁড়িখানার নরম দেহ, নীল পেয়ালা- কাবাব ভুনা আদিরসের নিষ্প্রয়োজন/কান্না ভেজা এই জীবনে এখন দেখি সবার আগে অল্পকিছু বিষ প্রয়োজন। ঙ. আর পারি না দেখলে কাঁপি শুঁড়িখানা, নরম নদীর ঢেউ/এমন জায়গায় নাওরে খোদা যেখানে নাই কেউ। চ. বাসান্তিকা রাং, খুশিকা বাহার, পুরা চাঁনকা রাওশান/আওর শুঁড়িখানাকা গুলবাগ মেরা দেল চুরচুর কার দিছে।

৫.

অমর একুশের বইমেলা ২০২২ সালে কবি মৃধা আলাউদ্দিনের অল্পকিছু বিষ প্রয়োজন দোঁহাকাব্যগ্রন্থখানি প্রকাশ করেছে স্টুডেন্ট ওয়েজ। প্রচ্ছদ করেছেন কবি শামসেত তাবরেজীর আঁকা চিত্রকল্প দিয়ে উদয় শংকর দুর্জয়। প্রচ্ছদে বেশ দ্যুতি আছে। বইটির মূল্য দুইশত টাকা। বোর্ড বাধাই ৬৪ পাতার এই বইটি পাঠাকদের হাতে হাতে ছড়িয়ে যাক এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। আমরা কবির এ বইটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করছি। বইটি আপনার সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করবে বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত