ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গণউন্নয়ন বাস্তবায়িত হোক

  ড. জান্নাতুল ফেরদৌস

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২২, ২২:১২  
আপডেট :
 ২৮ মে ২০২২, ২২:১৪

নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গণউন্নয়ন বাস্তবায়িত হোক
ফাইল ফটো। সংগৃহীত

নির্বাচন মানেই প্রতিশ্রুতি। নির্বাচন ও প্রতিশ্রুতি শব্দ দুটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নির্বাচনের সময়ে প্রত্যেক প্রার্থী নিজ এলাকার জনজীবনের উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহারের এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে প্রার্থীরা নিজের প্রতি জনগণের সহানুভূতি ও বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পরে তাদের প্রতিশ্রুতির কতটুকু বাস্তবায়ন করেন, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির আলোকে সেটি আলোচনা সমালোচনার জায়গা রাখে।

সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে মেয়র পদে ৬ জন ও কাউন্সিলর পদে ১৫৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১২০ জন সাধারণ কাউন্সিলর পদে ও ৩৮ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে সর্ব মহলে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। তবে সব আলোচনাকে ছাপিয়ে নির্বাচন পরবর্তী প্রার্থীদের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথা অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে।

নির্বাচন হলো প্রতিনিধি বাছাইয়ের মাধ্যম। আর সেই বাছাইয়ের মাধ্যমে মূলত জনগণের আশা-প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে। সাধারণত নির্বাচনের মাধ্যমেই ভোটাররা তাদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। মূলত এর মাধ্যমেই জনগণ শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে থাকে। স্থানীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন, সর্বক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণই নির্বাচনের বৈধতা নিশ্চিত করে।

মেয়র পদে আগের নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক নির্বাচন করছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছন কামরুল আহসান বাবুল, নিজাম উদ্দীন ও মাসুদ পারভেজ। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন রাশেদুল ইসলাম।

আলোচনার দিক হল মূলত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থাকা সকল প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিরা গণউন্নয়নে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেন। সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই প্রচেষ্টায় জনগণকে সাথে নিয়ে একটি জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় পৌঁছানো সম্ভব। তাই এক্ষেত্রে উন্নয়নের ধরাকে বাস্তবায়ন করতে হলে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন আবশ্যক।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জনগণের অন্যতম দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নগরের যানজট নিরসনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। আয়তনে তেমন বড় না হলেও কুমিল্লা শহরে প্রবেশের বিভিন্ন পথে যত্রতত্র পার্কিং আর ফুটপাত দখলের ফলে বেহাল রূপ ধারণ করেছে যানজট। এর মধ্যে টমচমব্রীজ এলাকা, শাসনগাছা, কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরসহ গুরত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিয়মিত যানজটের ফলে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এতে এ সড়কে যাতায়াতকারীদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি পথচারীদেরও পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।

অপরদিকে শহরের বিভিন্ন রাস্তার উপর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি যত্রতত্র পার্কিং করায় যানজট যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। এসকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পার্কিং নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না কেউই। কাজেই যানজটের বিষয়ে নগরীর জনপ্রতিনিধিদের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং যানজট নিরসনে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যেদিয়ে এ সমস্যা থেকে উত্তরন করা সময়ের দাবি।

দ্বিতীয়ত, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসীকে। এর মধ্যে বিভিন্ন নালা-নর্দমা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। প্রতি বছরই বর্ষায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসীকে। কিছুটা ভারী বর্ষণ হলেই বিভিন্ন অলিগলি এবং ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পয়োনিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন হয়।

মূলত সিটি কর্পোরেশন পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকা, ড্রেনেজ লাইন নিয়মিত পরিষ্কার না করা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই অধিক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আবার ভারী বৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে পানি ধারণের জন্য শহরে উপযুক্ত জলাধার নেই। আর ভারী বৃষ্টির পানি টেনে নেয়ার জন্য আধুনিক মানের কোন পাম্প স্থাপন হয়নি। যে কারণে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাযথ ও আধুনিকায়ন জরুরি।

পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে পরিকল্পিত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে। এতে কর্মীদের দক্ষতা নিশ্চিতে বিভিন্ন যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। সার্বিকভাবে একটি আদর্শ নগরী হিসেবে কুমিল্লা শহরকে প্রতিষ্ঠা করতে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এর জন্য নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসুক এবং গণ উন্নয়ন বাস্তবায়ন হবে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • পঠিত