ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

নিত্যনতুন কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ

  ফরহাদ উজজামান

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২২, ১৮:০৪  
আপডেট :
 ৩০ জুন ২০২২, ১৮:০৭

নিত্যনতুন কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ

নিত্যনতুন কৌশলে প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেকেই। প্রতারক চক্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারী সদস্যও রয়েছেন। কোনো কোনো চক্রে আছেন বিদেশিরাও। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র বিস্তৃত এদের প্রতারণার জাল। প্রতারণার শিকার কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হচ্ছেন। আবার কেউ লোকলজ্জা, কেউ বা বাড়তি ঝামেলা এড়াতে নীরব থেকে যাচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, জমি লিজ, প্লট বিক্রি, চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, এমএলএল ব্যবসা, পে-অর্ডার, অনলাইন প্রতারণাসহ বিভিন্ন প্রতারণা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিদেশ পাঠানো ও বিয়ের নামে প্রতারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া কনসালটেন্সি ফার্ম খুলে, ব্যাংক লোন করিয়ে দেয়ার নামে, জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করে এবং কয়েন, তক্ষকসহ নানা অভিনব জিনিস নিয়ে প্রতারণার বাণিজ্য চলছে। লোভনীয় চাকরির অফারে বিদেশে লোক পাঠানো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধু সেজে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব প্রতারক চক্র।

সাধারণত সহজসরল মানুষই তাদের লক্ষ্য। সুযোগ বুঝে নানা ছলচাতুরি ও মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তারা প্রতারণা করছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে প্রায় দিনই গ্রেপ্তার ও হচ্ছে। তবে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও প্রতারণার কাজ চালিয়ে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় ভাঙিয়ে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতো একটি প্রতারক চক্র। এ চক্রের মূলহোতা মনসুর আহমেদ এবং তার অন্যতম সহযোগীকে গত ১৭ মে রাজধানীর পল্টন থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব জানায়, নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য তারা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে তোলা ছবি ভুক্তভোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেখাতো। একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রে ৫ থেকে ৭ জন সদস্য রয়েছে। চক্রের মূলহোতা মুনসুর। চক্রটি গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করে আসছে। প্রতারণার জন্য চক্রটি বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করতো।

র‌্যাব সূত্র জানায়, ২০২১ সালে বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে ৭৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এছাড়াও চলতি বছরেও ২০৯ টি অভিযানের মাধ্যমে প্রতারণার সাথে জড়িত ৪২৮ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

উল্লেখযোগ্য প্রতারণার ঘটনা

উপবৃত্তি ও করোনা মহামারির সময় অনুদান দেয়ার নামে প্রতারণা করতো একটি চক্র। প্রতারণা করে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে চক্রের মূলহোতাসহ গত ২৪ মে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

সিআইডি জানায়, প্রতারকরা শিক্ষাবোর্ডের নামে ভুয়া নম্বর দিয়ে মেসেজ দিয়ে উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করতে বলতো। তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষার্থী বা অভিভাবক প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

গত ২৮ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে ফিরোজ কবীর (২০) নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। উপবৃত্তি ও করোনাকালে অনুদান দেয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তিনি।

এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি বিভিন্ন বিভাগের বিশেষত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনা সংঘঠনের তথ্য পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের পরিচয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণার বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি। এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্র শনাক্ত ও তাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে একাধিক প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিল।

মুক্তা ধর বলেন, চক্রের সব সদস্যের সম্মিলিত প্রয়াসে ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা’ পরিচয়ে প্রতারণার কাজটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে করতো তারা। ভিক্টিমের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরপরই যোগাযোগ বন্ধ করে দিতো। চক্রের সদস্যরা প্রথমে বিকাশের দোকান থেকে নম্বর সংগ্রহ করে। এরপর উপবৃত্তির কথা বলে ফোনে মেসেজ পাঠায়। মেসেজ পেয়ে ভুক্তভোগীরা যোগাযোগ করলে নানা কৌশলে বিকাশের গোপন পিন নম্বর নিয়ে টাকা উত্তোলন করতো।

গত বছরের ২ মার্চ রাতে রাজধানীর রামপুরা ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি অভিনব প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। এরা জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার থেকে বিভিন্ন লোকের এনআইডির ছবি পরিবর্তন করে ওই এনআইডি দিয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ তুলে লাপাত্তা হয়ে যেত। ঋণ নেয়ার কাজে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, ভুয়া টিআইএনও ব্যবহার করত চক্রটি। এভাবে এরা ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আকর্ষণীয় বেতনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরখান থানার আটিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এই চক্রের মূলহোতা স্বামী-স্ত্রী। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এসএসসি পাশে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার তরুণদের সঙ্গে প্রতারণা করত।

তারা সাবেক সেনা কর্মকর্তার বডিগার্ড, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী, সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে চাকরির বিজ্ঞাপন দিতো। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে জীবন বৃত্তান্ত জমা নেয়া হত। কয়েকদিন পর যোগাযোগ করে বলা হত চাকরি হয়েছে। ট্রেনিংসহ বিভিন্ন খাতের নামে ১২ হাজার ৫০০ টাকা জমা নেয়া হত। এরপর চাকরি না দিয়ে তাদের বলা হত তাদের মতো আরও চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে। চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে পারলে পার্সেন্টেজ হিসেবে ১ হাজার ১০০ টাকা দেয়া হবে। মাসে অন্তত ১৪ জনকে সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হত। চাকরির নামে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে আদায় করা হত।

গত ২০ মার্চ লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান 'আকাশ নীল' এর প্রতারণার মূলহোতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনিকে ফরিদপুর ও রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, মানুষের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অর্থ নিয়ে তার কোম্পানিকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করে কাঠাল বাগান থেকে পান্থপথে স্থানান্তরিত করে। তার লিমিটেড কোম্পানি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক ব্যবসা যাতে তার নিজের নামে ৭৭%, বোনের নামে ১০%, মাতার নামে ৮% এবং তার স্ত্রীর নামে ৫% শেয়ার রেখেছিল। তার এই পরিবারকেন্দ্রিক ব্যবসায় সে ছিল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মা ছিলেন চেয়ারম্যান এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত বন্ধু ইফতেখাইরুজ্জামান রনি ছিল ডিরেক্টর।

গত বছরের ১৬ এপ্রিল অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করণ, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্টে জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন করে মেয়াদ বসিয়ে বিক্রয়/বাজারজাতকরণের অভিযোগে রাজধানীর ৩টি প্রতিষ্ঠানে র‌্যাবের অভিযানে মূলহোতাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গত ১৬ জুন আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানীর ভুয়া পরিচয়ে স্ব-উদ্ভাবিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব-প্রতিকার, পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্ট, করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রজেক্ট বাস্তবায়নের নামে কোটি কোটি টাকা ও জমি আত্মসাতকারী চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলাম ওরফে বিজ্ঞনী সাইফুল ওরফে সায়েন্টিস্ট সাইফুলসহ ১৬ জনকে ঢাকা ও টাঙ্গাইল এর বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গত বছরের ১ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশি-বিদেশী সংস্থার ভূয়া প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে কথিত তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক ওরফে বিশিষ্ট আলোচক ওরফে ডিপ্লোম্যাট ওরফে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ওরফে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতাকে (আইপিসি) সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, ইশরাত রফিক ঈশিতা প্রতারণার কৌশল হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর র‌্যাংক ব্যাচ ও পদ অর্জনের চেষ্টা চালান। তিনি ফিলিপাইনে পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট (আইপিএই.ফিল.কম) থেকে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে সামরিক বাহিনীর ন্যায় ‘বিগ্রেডিয়ার জেনারেল’ পদটি বাগিয়ে নেন।

ইশরাত রফিক ঈশিতা করোনা মহামারিকে পুঁজি করে ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় সক্রিয় ছিলেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচক ও প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি অনলাইনে করোনা প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন ও সার্টিফিক প্রদান করে প্রচার-প্রচারণা করেছেন। বিভিন্ন বিদেশিদের ভুয়া সার্টিফিকেট প্রচারণা করে অন্যান্যদের অর্থের বিনিময়ে সার্টিফিকেট নিতে আকৃষ্ট করতেন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার শাহাবাগ থানার তোপখানা রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আল এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রতারক রাগীব আহসান ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ‘ধামাকা শপিং ডট কম’ এর সিওও মো. সিরাজলু ইসলাম রানা ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এসব প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অপরাধীরা নিত্য নতুন অপরাধ করছে তার মধ্যে প্রতারণা অন্যতম। র‌্যাব প্রতারণা রোধ এবং প্রতারকদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। যে কোন অভিযোগ র‌্যাব ব্যাটালিয়ন সমূহ এবং র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে সংশিষ্টদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতারণা এক ধরনের সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে যা থেকে প্রতারিত হচ্ছে সকল পেশার মানুষ। প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে সামাজিকভাবে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে র‌্যাব সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আরেকটি প্রতারক চক্রের সন্ধান পায়। এ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দীর্ঘদিন ধরে তারা ম্যাগনেটিক কয়েন, তক্ষক ও পিলারের নামে প্রতারণা করে আসছিল।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রতারকরা বলে থাকে- শত শত বছরের পুরনো সীমানা পিলার ব্যবহার হয় পারমাণবিক চুল্লিতে রিয়েক্টর হিসেবে। মঙ্গলগ্রহের বিভিন্ন প্রকল্পেও রয়েছে চাহিদা। একেকটির দাম কয়েকশ কোটি টাকা। পারমাণবিক রিয়েক্টর এবং মঙ্গলগ্রহের বিভিন্ন প্রকল্পে এর ব্যাপক চাহিদার কথা বলে টার্গেট ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয় কাঠের তৈরি বস্তু। এরকম দুটি কথিত সীমানা পিলার উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পিলারগুলো দেখতে ত্রিভুজাকৃতির। সীমানা পিলারের গায়ে খোদাই করা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম। ১৮১৮ সাল অর্থাৎ ২০৪ বছর আগের কথিত এই পিলারের মূল্য হাঁকা হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকা। অথচ কাঠের তৈরি এই পিলার তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র এক থেকে দুই হাজার টাকা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ওয়ারি বিভাগ) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যক্তি, যারা লোভী ধরনের তাদেরকে টার্গেট করে এ প্রতারক চক্র। এমন একটি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছে। আরও ১২ লাখ টাকা নেয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দিচ্ছিল। এমনকি তারা ওই ব্যক্তিকে আটকেও রেখেছিল। আমরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছি। কথিত সেই সীমানা পিলারও (কাঠ) উদ্ধার করেছি। রফিক নামে এক প্রতারক আছে। তার বাড়ি সিলেটে। সেই হচ্ছে এটির মূল পরিকল্পনাকারী।

তিনি বলেন, সীমানা পিলার বা ম্যাগনেটিক কয়েনের কোনো অস্তিত্ব নেই। কারও লোভে পা না দেয়ার অনুরোধ জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। এই ধরনের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে লোভ সংবরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফজেড/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত