ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ড্রাগ এডিক্টেড শিশুদের সহযোগিতায় গো আপ ফাউন্ডেশনের সুমাইয়া

  আলফি শাহরীন

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২২, ১৪:১৫

ড্রাগ এডিক্টেড শিশুদের সহযোগিতায় গো আপ ফাউন্ডেশনের সুমাইয়া

যারা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের দুর্যোগ মোকাবেলায় ও অন্যের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তারা সম্মুখ সারির যোদ্ধা। এই কাতারে আছেন ডাক্তার, পুলিশসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। অবশ্য মানবিকতার পাশাপাশি ছিল তাদের পেশাগত তাগিদ। কিন্তু একেবারে স্বেচ্ছায় নিঃস্বার্থভাবে কেউ কি এই সম্মুখ সারিতে এসে দাঁড়ায়?

এমনই এক দুঃসাহসী সৈনিক মাহমুদা আক্তার সুমাইয়া। বলছি দেশের ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়াসে দুঃসাহস নিয়ে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়েপড়া তরুণী সুমাইয়ার গল্প।

জনবহুল এলাকায় একজন মেয়ে যখন একাই কাজ করছিল ড্রাগ এডিক্টেড শিশুদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তখন কেউ এগিয়ে না এসে, তাকে নিয়ে সমালোচনার ভিড় জমিয়েছিল এলাকাবাসী।

বিশেষ করে ‘বাহিরে কিসের কাজ ? মেয়েদের তো ঘরই সব’ এই কথা গুলো শুনতে হতো তাকে, তখনকার মুহূর্তটি হৃদয়বিদারক।

সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে তাকে সাহায্য করা তো দূরে থাক, তাকে বিভিন্ন কটূক্তি শুনতে হয়েছে প্রতিদিন। এমনই ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনায় আক্রান্ত মানুষদের রক্ত,ওষুধ,আর্থিক সাহায্যসহ ইমারজেন্সি সার্ভিস প্রদানে সার্বিক সহযোগীতে থেকে শুরু করে বার্ন ইউনিটে গিয়ে অসহায় রোগীদের সাথে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে গিয়েছেন গো আপ ফাউন্ডেশনের এই তরুণী ভলান্টিয়ার লিডার সুমাইয়া।

এতসব প্রতিবন্ধকতাও থামাতে পারেনি তাকে। সুমাইয়া জানান, আমাদের সমাজের যেসব শিশুরা দিনের পর দিন মাদকে আসক্ত হচ্ছে তাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের কথা কতজনই বা চিন্তা করে। আমরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করি। তাদের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলি। আগে যেখানে তারা হাতে ব্লেড জাতিয় ধারালো বস্তু নিয়ে ঘুরাঘুরি করত সেখানে তারা বই দেখলে ছুটে চলে আসে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে।

গো আপ ফাউন্ডেশন দেশের সাধারণ শিশুদের মতো এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক কিছু শিক্ষা যেমন: সবাইকে সালাম দেয়া, অকথ্য ভাষায় গালাগাল না করা, শিক্ষক ও বড়দের সম্মান দেয়া, ছোটদের স্নেহ করা, শৃঙ্খলা মেনে চলা ইত্যাদি আরও অনেক বিষয় আমরা তাদের শেখাতে সক্ষম হয়েছি। তারা এখন নিজেরাই লেখাপড়া শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আমরা তাদের প্রত্যেকটি ক্লাসে খাবার দিয়ে থাকি। বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রম করিয়ে থাকি যাতে তারা শিক্ষাকে বোঝা হিসেবে না মনে করে।

আমরা স্কুলের শিশু ও তাদের পরিবারকে গো আপ ফাউন্ডেশনের ‘আনন্দ স্টেশন’ও ‘ইদে মিষ্টি মুখ’ ইভেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন আনন্দদায়ক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকি বলে জানান সুমাইয়া।

গো আপ ফাউন্ডেশন তাদেরকে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শরীর চর্চা, কবিতা আবৃতি, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে আমাদের কাছে। গো আপ ফাউন্ডেশনের এই স্কুলটি ‘আমাদের ইসকুল’ নামে পরিচিত। গো আপ ফাউন্ডেশন উদ্যোগ নিয়েছে এই মাদকাসক্ত শিশুদের সুন্দর জীবন গঠনে সহায়তা করার।

মেয়েরাও যে সমাজ উন্নয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখতে পারে এমন চিন্তাভাবনা মানুষের মাঝে তুলে ধরা ছিল আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। কথায় আছে , এক মাঘে শীত যায় না। বিভিন্ন ট্রেজিটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে নেমে এলো অন্য এক অভিশাপ - যার নাম বন্যা। এতে বিশেষ করে সিলেট-সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। দেশের এই কঠিন সময়েও তার নেতৃত্বে গো আপ ফাইন্ডেশন ত্রাণ এর পাশাপাশি নারীদের জন্য স্যানিটারি নেপকিন বিতরণ করেছেন সেসব বন্যার্ত মানুষের মাঝে।

সুমাইয়া মনে করেন, জীবনে সবকিছু লাভ - ক্ষতির হিসেব করে হয় না। অন্যের স্থানে নিজেকে একবার কল্পনা করে দেখলেই অনেক হিসেব সহজ হয়ে যায়। করোনার এই ব্যতিক্রমী রমজানেও তার নেতৃত্বে গো আপ ফাউন্ডেশন সেহরি এবং ইফতার নিয়ে ছুটে গিয়েছেন ৬ হাজার রোজাদারের কাছে। দরিদ্র-দুস্থ মানুষের জন্য স্বাধীনতা-প্রোজেক্টের মাধ্যমে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছেন। তার এই পথচলা নিস্বার্থ , সকল মানুষের জন্য।

গো আপ ফাউন্ডেশনের “আমাদের ইসকুল” এ ভলান্টিয়ারিং থেকেই সুমাইয়ার যাত্রা শুরু হয় মানব সেবায়। বর্তমানে গো আপ ফাউন্ডেশনে জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন , এতসব কর্মকান্ডের পেছনে আমার চেতনা ও শক্তি ছিল একাত্তর। আমি চাই দেশের প্রত্যেক তরুণ যেন দেশকে ভালোবাসে , অন্যের কষ্টে ব্যথিত হয় , অন্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকে।

ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অধ্যয়নরত সুমাইয়া। দেশপ্রেম থেকেই এসব করেন এই তরুণী। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অবদান রাখতে ১৭টি গোল নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে এই সংগ্রামী তরুণী মাহমুদা আক্তার সুমাইয়া।

সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের মধ্যে অন্ধ প্রতিবন্ধী শিশু গুলো অন্যতম। অন্ধ প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবন উন্নয়নেও আজ করছেন তিনি পাশাপাশী এসডিজি ১৩ ক্লাইমেইট একশন এ তার ভূমিকা রয়েছে, তিনি সাতক্ষীরা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল শ্যমনগরে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাতেও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির কাজ করে যাচ্ছেন প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএস/এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত