নতুন জঙ্গি সংগঠন
'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার' ৫ সদস্য গ্রেপ্তার
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:০১ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন জঙ্গি সংগঠন 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৫ সদস্যকে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. গোলাম সারোয়ার (২৫), সাকিব মাহমুদ (২৭), দুই সহদোর মো. ফরহাদ হোসেন (২২), মো. মুরাদ হোসেন (২১) ও মো. ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম (২৮)।
রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই ও লিফলেট, ১টি রেজিস্টার এবং ১টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার' দাওয়াতী, হিজরকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলো। তারা ২/৪ বছর আগে নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক, শারীরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে জামাতুল আনসারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কারণে তারা বিভিন্ন ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকে এবং সংগঠনে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্নস্থানে পৌঁছে দিতো বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সম্পন্ন করেন। তিনি লক্ষীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে চাকরি করতেন। আগে গ্রেপ্তার হওয়া নেয়ামত উল্লাহর মেয়ের জামাতা। গোলাম সারোয়ার তার শশুরের মাধ্যমে ২ বছর আগে 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার' আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়।
তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদেরকে কুমিল্লার বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানো সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সেইফ হাউজে অবস্থান করা হিজরতকারীদের শারীরিক ও তাত্ত্বিক বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন।
এছাড়াও, তিনি তথাকথিত হিজরতকৃত সদস্যদের বিভিন্ন সেইফ হাউজে পৌঁছে দিতেন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিলেন।
গ্রেপ্তার সাকিব গাইবান্ধা হতে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তিনি একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন। তিনি 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার' শুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত্বাবধায়ক শামীম মাহফুজের আপন ভাতিজা।
৩ বছর আগে শামীম মাহফুজের মাধ্যমে সংগঠনে যোগদান করেন। গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও শামীম মাহফুজের নির্দেশনায় গাইবান্ধা অঞ্চলে 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার' আদর্শে উদ্বুদ্ধ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানো কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিলেন এবং তিনি সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য।
গাইবান্ধায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটুক্তি করায় সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় সাকিব তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও ৩-৪ জন সদস্যকে একত্রিত করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই সাকিব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হন।
গ্রেপ্তার ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন সহোদর ভাই। তারা 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া' সংগঠনের সূরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেনের শ্যালক। ৩ বছর আগে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা সংগঠনের সাথে জড়িত হন।
তারা রাজধানীর গুলিস্থান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে 'ট্রাস্ট টেলিকম' নামে একটি মোবাইল এক্সোসরিজের দোকান চালাতেন এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে খরচ করতেন।
এছাড়াও মুন্সিগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করতেন। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করতেন। এছাড়াও তারা পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য ১ম পর্যায়ে ১২ জন সদস্যকে প্রেরণকালীন সময়ে এই খামারে সবাইকে একত্রিত করেন।
গ্রেপ্তার ওয়াসিকুর রহমান রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন। ২ বছর আগে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হন। রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে 'ষোল আনা' নামক একটি আতরের দোকান পরিচালনা করতেন এবং দোকানে লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। সে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/রাজু