ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইভিএমে টাকা না দেয়া এক ঢিলে দুই পাখি মারা?

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:১৬

ইভিএমে টাকা না দেয়া এক ঢিলে দুই পাখি মারা?
ছবি - সংগৃহীত

ইভিএম নিয়ে বিতর্ক কি হটাৎই মিইয়ে গেলো? নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী ১৫০ আসনে যে ইভিএম ভোট হচ্ছে না, তা নিশ্চিত। আর অর্থ সংকটের অজুহাতে সরকার যে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম প্রকল্পের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে অপারগতা জানিয়েছে। তাদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগই বেশি লাভবান হয়েছে।

বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ঢিলে দুপাখি মেরেছেন। করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকটে থাকার পর ইভিএমের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। যারা ভোটদানের আধুনিক প্রক্রিয়া হিসেবে ইভিএম পদ্ধতির সমর্থক তারাও এমন আর্থিক সংকটের মধ্যে থেকে ইভিএমের প্রতি নিশর্ত সমর্থন দিতে পারেনি।

আরেকটি বিষয় হলো ইভিএমে কারচুপি হতে পারে, মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির এমন দাবিকে চট করে নাকচ করাও সম্ভব ছিল না। যদিও নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে “ইভিএম-এ ভোট ম্যানুপুলেশনের বিষয়ে কেউ এ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইভিএম-এ কারচুপি করা সম্ভব এমন প্রমাণ করার জন্য বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ এ অভিযোগটি প্রমাণ করতে পারেনি।” আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে ইভিএম নিয়ে বিএনপির যে অস্বস্তি ও অবিশ্বাস ছিল, এখন আর এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে আশ্বস্ত করতে হবে না যে ইভিএম-এ “ম্যানুপুলেশন” হবে না। ক্ষমতাসীনরাও হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন যে তাদেরকেও আর ইভিএমের পক্ষে “সাফাই” গাইতে হবে না। সরকারও সরাসরি নাকচ না করার বদলে “টাকার অভাবের “কথা বলে পাশ কাটাতে পারলো। যদিও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে “অর্থের সংকট নয়” খাদ্য ও চিকিৎিসাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কারণেই আপতত ইভিএমের জন্য অর্থ খরচের পক্ষে নয় তার সরকার।

তবে ইভিএম বাতিল হলেও তা বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখবে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে চট করে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব হয়তো মিলবে না। তবে অবশ্যই এটি নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়ে গেলো তখনই যখন প্রকল্পটি আর অনুমোদনের মুখই দেখলো না। কেন যেন মনে হয় নির্বাচন কমিশন এখন তাদের হাতে থাকা আগের এভিএম দিয়ে অল্প কিছু আসনে ভোট করার যে পরিকল্পনা করছে, তাও হয়তো বাস্তবায়ন হবে না।

আইন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশনের সংলাপের আমন্ত্রণেও সাড়া দেয়নি।

ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন যে আলোচনা করেছে তাতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ২৯টি দল অংশ নিলেও যায়নি বিএনপি। আর নির্বাচন কমিশন যে দাবি করেছিল যে, ইভিএমের পক্ষে ১৭টি এবং বিরুদ্ধে ১২টি দল মতামত দিয়েছে তা নিয়েও কিন্তু কথা উঠেছিল।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইভিএম নিয়ে বিতর্কের আপাতত অবসান হয়েছে। কিন্তু এখনো নির্বাচন কমিশনের হাতে যেসব ইভিএম সচল অবস্থায় আছে, সেগুলো ব্যবহারতো নিশ্চিতই হবে। ১ ফেব্রুয়ারি ৬টি আসনে উপনির্বাচনে সবকয়টিতে ইভিএম ব্যবহার হবে।

যদিও এগুলো বিএনপির ছেড়ে দেয়া আসন, এবং উপনির্বাচনে বিএনপি দলগত ভাবে অংশ নেয়নি, তাই এ নিয়ে কোনো কথা উঠছে না।

শুরুতেই বলেছিলাম ইভিএম কেনার প্রকল্পে সরকার অর্থ বরাদ্দে রাজী না হওয়াটা একদিকে যেমন অর্থ সাশ্রয় হলো, তেমনি কিছুটা হলেও নির্বাচনের একটি বিষয়ে নতুন করে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হলো।

বলা যায় পরোক্ষভাবে হলেও ক্ষমতাসীনরা মাঠের বিরোধী দল বিএনপির ইভিএম বিষয়ক আপত্তিটা আমলে নিয়েছে। তাতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন এবং বিএনপি তিনপক্ষই লাভবান হলো বলা যায়। কেননা বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে এমনিতেই বিএনপির অভিযোগ-আপত্তির শেষ নেই। ফলে কমিশন যদি সরকারের বরাদ্দ পেয়ে ইভিএম দিয়ে ১৫০টি আসনে ভোট করতে যেতো তা নিয়ে বিএনপির জোরালো অবস্থান থাকতো।

ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে একধাপ অগ্রগতি হলো নতুন ইভিএম কেনার প্রস্তাব বাতিল হওয়া। পর্দার আড়ালে যারা আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে হাঁটবার জন্য কাজ করছেন, তারা অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন যেটিতে বিএনপি অংশ নিয়েছিল, সেখানে মাত্র ৬টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুইটি আসনে গড় ভোট পড়েছিল ৪৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। চট্টগ্রামের একটি আসনে ৬২ দশমিক ২৭ শতাংশ, সাতক্ষীরার একটি আসনে ৫২ দশমিক ৮২ এবং খুলনা ও রংপুরের দুটি আসনে যথাক্রমে ৪৯ দশমিক ৪১ এবং ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

বলা যায় বিএনপি যদি আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশও নেয় তবে তারা চাইবে যত কম সংখ্যক আসনে ইভিএমে ভোট নেয়া হোক। আগের নির্বাচন কমিশনের মত বর্তমান নির্বাচন কমিশনও এখন পর্যন্ত ইভিএমের ওপর আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং গাইবান্ধা উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ বাতিল করায় তাদের প্রতি কিছুটা হলেও দেশবাসীর আস্থা বেড়েছে।

বুধবার ইভিএমে ৬টি আসনের উপনির্বাচনও একরকম পরীক্ষা নির্বাচন কমিশনের জন্য। যদিও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ওই দলেরই সাবেক সাংসদ উকিল আব্দুস সাত্তারকে জেতাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অতি তৎপরতা এরই মধ্যে “রাজনৈতিক নষ্টামি” হিসেবে সমালোচিত হচ্ছে। যদিও সংসদ থেকে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিএনপিও যে রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি পয়েন্ট যোগ করতে পারেনি, সেটিও কঠিন বাস্তবতা বলেই মেনে নিতে হচ্ছে বিএনপিকে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতৃত্ব তা স্বীকার করতে চান না।

সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত