ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছোঁ-মারা পার্টির প্রতিদিন টার্গেট ৩০০ মোবাইল ফোন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৩৬

ছোঁ-মারা পার্টির প্রতিদিন টার্গেট ৩০০ মোবাইল ফোন
ছোঁ-মারা পার্টি। সংগৃহীত ছবি

সংঘবদ্ধ বিশাল চক্র। সদস্য সংখ্যা ১০০ জন। প্রতিদিন তাদের টার্গেট অন্তত ৩০০টি মোবাইল ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়া। রাজধানীতে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরাই তাদের টার্গেট। মোবাইল, ল্যাপটপ, ব্যাগসহ দামি জিনিসপত্র ছোঁ-মেরে নিয়ে যাওয়া এই চক্রের সক্রিয় ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মিজান, আমিরুল ইসলাম বাবু, শরিফ হোসেন, হৃদয়, রাজ, সুমন, সোহেল বাবু, হৃদয়, মনিরুজ্জামান, নাজমুল, মনির, ইমরান, ফারুক, আশরাফুল ইসলাম সজিব, আরিফ ও হাসান। শুক্রবার রাজধানীর উত্তরখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। গ্রেপ্তার চক্রটির সদস্যদের কাছ থেকে নম্বরবিহীন একটি মোটরসাইকেল, ৫০টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল, ৪টি চাকু, দুই জোড়া স্বর্ণের দুল এবং নগদ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শনিবার অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, রাজধানীতে ছোঁ-মারা এ পার্টির প্রায় ১০০ সক্রিয় সদস্যের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের প্রতিদিন অন্তত ৩টি মোবাইল চুরির টার্গেট থাকে। সে হিসেবে ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত ৩০০ মোবাইল চুরি হয়।

তিনি বলেন, বাস-ট্রেন বা প্রাইভেটকারে চলাচলকারী যাত্রীরা মোবাইলে কথা বলার সময় জানালা দিয়ে ছোঁ-মেরে মোবাইল নিয়ে যায় চক্রটি। এছাড়া গাড়ির জানালা দিয়ে যাত্রীদের বা পথচারীদের ব্যাগ, স্বর্ণের চেইন, ল্যাপটপ নিয়ে যায় তারা। ছিনতাইয়ের পর নামমাত্র দামে মোবাইলসহ বিভিন্ন পণ্য মহাজনদের কাছে বিক্রি করত চক্রের সদস্যরা। এরপর মহাজনরা নির্ধারিত দোকানে সেসব বিক্রি করে দিতেন। দোকানিরা তুলনামূলক কমদামি মোবাইল খুচরা বাজারে বিক্রি করতো। তবে দামি মোবাইলের যন্ত্রাংশ খুলে বাজারে বিক্রি করতো। অনেক ক্ষেত্রে দামি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করতো তারা।

হারুন-অর-রশীদ বলেন, উত্তরখানে বিসমিল্লাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামক একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ছোঁ-মারা পার্টির দল নেতা ও চোরাই মাল ক্রয়-বিক্রয়কারীসহ চক্রের ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি মহাখালী থেকে টঙ্গী বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ১৫-১৬টি স্পটে ছিনতাই চালিয়ে আসছিল।

চক্রের নেতা মিজান, জয়-বাবু ও শরীফের নেতৃত্বে বাস, প্রাইভেটকার ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রীদের কাছ থেকে ছোঁ-মেরে মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও গলার চেইনসহ মূল্যবান মালামাল কেড়ে নেয়। এরপর সেসব চোরাই সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়কারী সুমন, ফারুক ও আশরাফুল ইসলাম সজিবের মাধ্যমে বিসমিল্লাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামে দোকানে বিক্রয় করত।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার অভিযুক্তদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। সাধারণত মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে ছিনতাই করে। কখনো কখনো দলনেতা তথা মহাজনরাই তাদের মাদক সরবরাহ করে। যাতে তাদের দিয়ে ছিনতাই চালিয়ে নেয়া যায়। চক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলে তাদের জামিন করানো এবং পরিবারকে অর্থ দিয়ে সহায়তাও করে থাকেন এ মহাজনরা।

এ সমস্যা সমাধানে আমাদের মূলে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করলে জামিনে বের হয়ে আবার এ কাজে জড়িয়ে পড়ে। এজন্য তাদের শাস্তির পাশাপাশি রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আমাদেরও অন্ধকার জায়গা এড়িয়ে চলা কিংবা গাড়িতে চলাচলের সময় জানালার পাশে ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত।

ডিবি জানায়, গত ১ জানুয়ারি উত্তরার ফার্নিচার ব্যবসায়ী জনৈক আসাদুজ্জামান অসুস্থ বাবাকে ধানমন্ডি ইবনে সিনা হসপিটালে ভর্তি করে নিজের প্রাইভেট কারে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মহাখালী-বনানী হয়ে যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সড়ক ও জনপদ অফিসের পশ্চিম পাশে রাস্তায় জ্যাম থাকায় ৬/৭ জন ছিনতাইকারী তার প্রাইভেটকারটির আশেপাশে ঘুরঘুর করার এক পর্যায়ে একজন থাবা দিয়ে তার মোবাইলটি নিয়ে যায়। পরে উপস্থিত জনগণের সাথে ওই পথে যাওয়া ডিবি লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনাল টিম দৌড়ে ছিনতাইকারীদের মধ্যে ৩ জনকে ছিনতাই হওয়া মোবাইলটিসহ হাতেনাতে ধরে ফেলে। এরপর তাদের দেয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের হেফাজত থেকে মোবাইল, কোম্পানির তিনটি ছোট চাকু ও উদ্ধার করা হয়।

পরে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৩ ফেব্রুয়ারি ডিবি কোতোয়ালি জোনাল টিম দক্ষিণ খানের কসাইবাড়ি রেলগেট এলাকা ও উত্তরখান থানাধীন কাঁচকুড়া সাইন বোর্ড এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে আরো ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মিজান, শরীফ ও জয় বাবু হলো মহাজন। তারা বিভিন্নভাবে বখে যাওয়া সক্ষম তরুণদেরকে থাকার জায়গা, খাবার ও গাজা-ইয়াবাসহ নেশার সামগ্রী দেয় এবং একটা পর্যায়ে ছিনতাই করতে সহযোগী হিসেবে নিয়ে যায়।

এভাবেই ছিনতাইয়ের হাতেখড়ি পাওয়া যুবকরা পরে হয়ে পড়ে দুর্ধর্ষ উল্লেখ করে ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মুহূর্তেই রিকশা, বাস, সিএনজি ও প্রাইভেট কার থেকে ছিনিয়ে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে মিশে যায় জনতার সাথে। ধরা পড়লে তাদের কাছে থাকা চাকু অথবা ব্লেড দিয়ে কৌশলে কেটে দেয় হাত অথবা পেটের চামড়া। রক্তাক্ত অবস্থা দেখে অধিকাংশ সময় ভিকটিম পথচারীরা ছেড়ে দেয় এই ছিনতাইকারীদের। পুলিশ হেফাজতে আসলে নেশার জন্য মরিয়া হয়ে থাকা এই ছিনতাইকারীরা কখনো কখনো নিজেদের মলমূত্র নিজেদের গায়ে, মাথায় মেখে সৃষ্টি করে ভিন্ন রকম বিব্রত অবস্থা।

ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাই লব্ধ মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার, ঘড়ি বিক্রি করে পাইকার ফারুক ও সুমন নামে দুজনের কাছে। যারা পরে উত্তরখানের মোবাইল দোকানদার সজীবের কাছে এগুলোকে বিক্রি করে। বিক্রিত বাটন মোবাইলগুলো গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করলেও দামি কোম্পানির স্মার্টফোনগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করতে পারলে তা পরিবর্তন করে। না হলে মোবাইল গুলোকে ভেঙে তার কেসিং, ব্যাটারি, ক্যামেরা ও মনিটরকে পার্ট পার্ট করে বিক্রি করে। যাতে মোবাইল গুলোকে শনাক্ত করে উদ্ধার করা না যায়।

গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর থেকে টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুর, হাউজ বিল্ডিং, জসীমউদ্দীন, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত বিশ্বরোড, রেডিসনের মোড়, বনানী, কাকলি ও মহাখালী পর্যন্ত থাবা দিয়ে ছিনতাই করে আসছে। তাদের সবার নামে গাজীপুর এবং ডিএমপিতে একাধিক মামলা আছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত