ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

স্ত্রীর সহযোগিতায় বাসায় ডেকে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্রীকে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:০৪

স্ত্রীর সহযোগিতায় বাসায় ডেকে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্রীকে
বিজয়। ছবি: প্রতিনিধি

মুন্সিগঞ্জে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ (১৬) ওরফে জেসি হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রেমিক বিজয় রহমানকে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩। শনিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, আবিদা নামে আরেক মেয়েকে গোপনে বিয়ে করেন বিজয়। এতে বাগড়া দেয় প্রেমিকা জেসি। সে আবিদার মোবাইলে প্রেম সম্পর্কিত কথোপকথনের স্ক্রিনশটসহ ম্যাসেজ পাঠায়। এতে আবিদা-বিজয়ের মধ্যে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। বিষয়টির মীমাংসার কথা বলে বাসার ছাদে ডেকে স্ত্রী আবিদার সহযোগিতায় শ্বাসরোধে জেসিকে হত্যা করে বিজয়।

রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আ‌য়ো‌জিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ‌্য জা‌নি‌য়ে বলেন, গত ৩ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

এ ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব-৩। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যার আসামি বিজয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া অপর আসামি আবিদা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় বিজয়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জেসিকার সঙ্গেও সে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। এর মধ্যেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবিদাকে গোপনে বিয়ে করে বিজয়।

এদিকে বিজয়ের বিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয় জেসি। পরে আবিদার ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আবিদার মাঝে দাম্পত্য কলহ, কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার বিজয় জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে জেসিকে উচিত শিক্ষা দিতে স্ত্রী আবিদার সঙ্গে আলোচনা করে বিজয়। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১ জানুয়ারি বিকেলে বিষয়টির মীমাংসা করার জন্য জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে আবিদা। সেখানে আবিদার উপস্থিতিতে বিজয় ও জেসির মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে বিজয়-আবিদা মিলে জেসির গলা টিপে শ্বাসরোধে অজ্ঞান করে। পরিস্থিতি বুঝে জেসি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছে ব‌লে নাটক সাজায় আবিদা ও বিজয়। দুজনে মিলে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতরে চলে আসে তারা।

রাস্তার পাশে জেসিকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন বিজয়ের চাচা। পরে বিজয় ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসেন।

একপর্যায়ে বিজয় ও তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জেসিকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হ‌লে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবরে বিজয় ও আবিদা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

জেসির মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে জানা যায়, জেসিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় বিজয় ও আবিদাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন জেসির ভাই। মামলার পর ৪ জানুয়ারি আবিদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে সে জেল-হাজতে রয়েছে।

জেসির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে মুন্সিগঞ্জ সদরের সেলিম দেওয়ানের মেয়ে। সে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল।

গ্রেপ্তার বিজয় মুন্সিগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে জেসি হত্যার পর থেকে জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে চারদিন আত্মগোপনে থাকে।

সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। সেখান থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপন করে। এরপর গতরাতে সেখান থেকে গ্রেপ্তার হয় বিজয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/রাজু

  • সর্বশেষ
  • পঠিত