ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

নরসিংদীতে দুর্ঘটনায় নিহত ২, তদন্তে উঠে এলো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪১

নরসিংদীতে দুর্ঘটনায় নিহত ২, তদন্তে উঠে এলো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড
পিবিআইয়ের সংবাদ সম্মেলন। সংগৃহীত ছবি

নর‌সিংদী‌তে মাইক্রোবাসচাপায় শাহন শাহ আলম বিপ্লব ও তার ব‌ডিগা‌র্ড ম‌নির হো‌সে‌নের মৃত্যুর কথা ব‌লা হ‌লেও এটি ছি‌লো প‌রিক‌ল্পিত হত‌্যাকাণ্ড। পি‌বিআই তদন্ত ক‌রে ঘটনার রহস‌্য ভেদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হ‌লেন, হত‌্যাকা‌ণ্ডের মূল প‌রিকল্পনাকারী মামুন মিয়া, মাসুম, সোহাগ ও মাসুদ মিয়া।

পি‌বিআই জানায়, বিপ্লব এলাকায় একাধিক হত্যা মামলার আসামি। মনির তার বডিগার্ড। বিপ্লব এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পেত না। এই বিপ্লব শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হয় না, যারা তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয় তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিশোধ নি‌তেন। কিন্তু তারও শেষ রক্ষা হয়নি। এক সময় তার সঙ্গে ডিশ ব্যবসা করা মামুন নামে এক ব্যক্তি অন্যদের নিয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

অবশেষে মাইক্রোবাস চাপা দিয়ে হত্যার পর নাটক সাজায় সড়ক দুর্ঘটনার। সেই নাটক ধোপে টেকেনি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে সেই হত্যার রহস্য। এই ঘটনায় রহস্য উদঘাটনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান অতিরিক্ত আই‌জি‌পি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ২০১৯ সালে নরসিংদীর রায়পুরায় দুলাল গাজী নামে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে প্রধান আসামি করা হয় বিপ্লবকে। কিন্তু মামলার বিষয় প্রকাশ্যে কেউ কোনো কথা বলতে সাহস পেত না। কিছুদিন পরে এই মামলার বাদি দুলাল গাজীর ছেলে রবিন গাজী একটি ঘর পোড়া মামলায় ছয় মাস জেল খেটে আসে। একসময় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেলে তারা বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে। তখন আস্তে আস্তে অনেকে বিপ্লবের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে। এ ঘটনায় চার ব্যক্তি বিপ্লবের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দেয়।

পিবিআই প্রধান বলেন, বিপ্লব জেল খেটে যেদিন বের হয়ে আসে ওই দিন সাক্ষীদের দুইজন জুয়েল ও নাইমকে এলাকায় ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

বনজ কুমার বলেন, বিপ্লব ও তার সহকর্মীদের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকার অনেকে ক্ষিপ্ত হয়। এর মধ্যে এক সময় বিপ্লবের সঙ্গে ডিশের ব্যবসা করা মামুন মিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে বিপ্লবকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। তারা একাধিকবার বিপ্লবকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১২ আগস্ট রাত ৮ টা ৫৫ মিনিটে নরসিংদীর শিবপুরের ইটাখোলা এলাকায় বিপ্লব ও মনিরকে বহনকারী একটি মোটরসাইকেলকে মামুনের নেতৃত্বে একটি মাইক্রোবাস চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে বিপ্লব ও মনির মারা যায়। ঘটনাটিকে তারা সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশ একটি দুর্ঘটনার মামলা করে এবং সে হিসেবে তারা আদালতে প্রতিবেদন দেয়।

হাইওয়ে পুলিশের দেয়া প্রতিবেদনের উপর ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হলে তারা আদালতে নারাজি দেয়। পরে মামলাটি ফের তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। তখন পিবিআই তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে যে মাইক্রোবাসটি দিয়ে তাদের চাপা দেয়া হয়েছিল সেটিতে বেশ কয়েকজন যাত্রী ছিল। পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলো সাধারণত দুর্ঘটনার পরে চালক পালিয়ে যায়; কিন্তু এখানে কেন যাত্রীরা পালিয়ে গেল। পরে তারা অনুসন্ধানে এটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে ক্লু পায়। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এর সঙ্গে মামুন ও তার সহযোগীদের সম্পৃক্ততা পায়।

পিবিআই অনুসন্ধানে জানতে পারে যে, ব্যবসায়িক শত্রুতা থেকে মামুনের নেতৃত্বে বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরে মূল পরিকল্পনাকারী মামুন মিয়া, মাসুম, সোহাগ ও মাসুদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেয় এবং আদালতে দায় স্বীকার করে।

পিবিআই প্রধান বলেন, এ ঘটনায় ৯ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থদাতা হিসেবে ওমর ফারুক মোল্লা নামে এক প্রবাসীর নাম উঠে এসেছে। তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে। আগামী সপ্তাহে নয় জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত