ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

  মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন কাদেরী

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ২০:১৮

পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ছবি: মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন কাদেরী

আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরম করুণাধার ও অসীম দয়ালু। অজস্র দরুদ ও সালাম সর্বকালের সর্বযুগের অতুলনীয় মহামানব উভয় জগতের বাদশা হুজুর পুরনুর প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মোজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। যার নুরানী চরণর ধূলি মোবারকের ওসিলায় শবে মেরাজের মাস রজব, শবে বারাআত রজনীর মাস শাবান, পবিত্র হজ ও ঈদুল আযহার মাস জিলহজ, ঈদুল ফিতর ও ছয় রোযার মাস শাওয়াল এবং সাহরি-ইফতার, তারাবিহ্ ও কুরআন নাজিলের মাস রমযানুল মুবারক পেয়েছি।

ফজিলতপূর্ণ মাহে রমজান আরবি হিজরী সনের নবম (৯ম) মাস। তাছাড়া এ মাসেই রয়েছে বছরের শ্রেষ্ঠতম অনন্য রজনী লাইলাতুল ক্বদর। তাই সামগ্রিকভাবে এ মাস বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ জন্য যে, এমাসে মহান রাবুল আলামীন তাঁর বান্দার প্রতি করুণাধার হয়ে অসংখ্য রহমত দান করত; বান্দার অসংখ্য গুনাহ ক্ষমা করে তাকে মাগফিরাত দান এবং অজস্র গুনাহগার বান্দাকে জাহান্নামের আজাব হতে নাজাত বা মুক্তিদান করেন ।

হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজানের পরিচয় প্রদান করে তাঁর তাফসির নঈমিতে উল্লেখ করেছেন- ‘রমজান’ শব্দটি ‘রহমান’ শব্দটির মতই আল্লাহর একটি নাম। যেহেতু এমাসে দিনরাত আল্লাহর ইবাদত করা হয় এবং আল্লাহর রহমত বর্ষণ হয় তাই এ মাসকে আল্লাহর রহমতের মাস বলা হয়।

তাই রোজা রাখা অবস্থায় কেউ যদি বৈধ চাকরি, হালাল ব্যবসা ইত্যাদি করে থাকে তাও আল্লাহর ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে অর্থাৎ আল্লাহ যেমন বলেছেন- ‘আস-সাওমু লি’ অর্থাৎ রোজা হলো শুধুমাত্র আমারই জন্য। সুতরাং রোজা অবস্থায় শরিয়তে বৈধ যা কিছু করা হবে সমস্ত কিছু ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।

আর যদি রমজান শব্দটি ‘রামদ্ধুন’ হতে নির্গত যার অর্থ-উষ্ণতা বা জ্বলে যাওয়া, দগ্ধ করা ইত্যাদি। যেহেতু এ মাসে মুসলমান রোজাদারগণ ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা সহ্য করে নিজকে আত্মশুদ্ধি করার প্রায়াস চালায়।

এ প্রসঙ্গে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোজা পাপগুলো কে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ফেলে, তাই রমযানকে ‘রমদ্বান’ করে নাম রাখা হয়েছে। (কানযুল উম্মাল) গাউসূল আজম বড়পীর শায়খ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- রামাদ্বান শব্দটি আরবি পাঁচটি হরফ দ্বারা গঠিত যথা- রা, মীম, দোয়াদ, আলিফ ও নুন।

এই একেকটি হরফ একেকটি নেয়ামতের প্রতি ইঙ্গিত করে। যেমন (১) রা-দ্বারা ‘রিদওয়ানিল্লাহ’ আল্লাহর সন্তুষ্টি বা রাহমাতুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রহমত (২) ‘মীম’ দ্বারা মুহাব্বাতুল্লাহ বা আল্লাহর ভালোবাসা (৩) ”দোয়াদ” দ্বারা ‘দমানীল্লাহ’ তথা আল্লাহর জিম্মাদারী (৪) আলিফ’ দ্বারা ’উলফাতীল্লাহ তথা আকৃষ্ট- আকর্ষণ বা আমানীল্লাহ তথা আল্লাহর আমানত বা নিরাপত্তা (৫) নুন’ দ্বারা নুরুল্লাহ তথা আল্লাহ তায়ালার নুর/আলো প্রকাশ করে তা বুঝানো হয়েছে।

অতএব একথা প্রতীয়মান হয় যে, মাহে রমযান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ভালোবাসা পাওয়া, তারই জিম্মাদারীতে যাওয়া ও তাঁরই ইবাদতের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার এবং তাঁর নুর বা জ্যাতি দ্বারা নিজকে আলোকিত করার এক মহান নেয়ামতের মাস।

রোযা হল ইসলামের ৫ম স্তম্ভের ৩য় স্তম্ভ। তাই ইহা প্রাপ্ত বয়স্ক, সক্ষম সকল মুসলমানর ওপর ফরজ বা আবশ্যকীয় আমল বা ইবাদত। মহান রাবুল আলামীন এব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল করীমে ইরশাদ করেছেন- হে ঈমানদারগণ! তোমাদর উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়াবান বা মুত্তাকী হতে পারো। (সূরা বাকারা, ১৮৩ নং আয়াত)

অত্র আয়াতে ‘তোমাদর পূর্ববর্তী’ বলে মহান আল্লাহ তায়ালা রোযার মাহত্ব্য বা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে বর্ণনা করে ও মুসলমানদের এটাই বুঝিয়েছেন রোযা একটি কষ্টকর শারীরিক ইবাদত তবে এটা শুধুমাত্র তোমাদের ওপর ফরজ করা করা হয়েছে এমনটা নয় বরং উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর উপরও রোযা ফরজ করা হয়েছিল। এই বিধান হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল নবীর উম্মতের জন্য শরীয়ত কর্তক ফরজ ছিল।

তাছাড়া রোযার মাধ্যমে ব্যক্তি তার প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ করে তাকওয়া বা পরহেযগারীর শক্তি ও গুণাবলী অর্জন করে। ফলে বান্দার সকল ইবাদত তাঁর প্রতিপালকের নিকট অতি সহজে কবুল হয় ও বান্দা তার নামায, দোয়া ও ইবাদত-বান্দেগীতে অনন্য স্বাদ খুঁজে পাই ও একাগ্রচিত্তে সকল ইবাদাতে মনানিবেশ করে। আর তাকওয়ার দরুণ মানুষের মধ্য নীতি-নৈতিকতার বিকাশ ঘটে, ফলে মানুষ লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা, ক্রোধ, নেশা, মিথ্যাবুলি, প্রতারণা ও অশ্লীলতা চর্চা ইত্যাদি থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে পারে ।

ধর্মীয় প্রক্ষাপটে ইসলামে পবিত্র মাহে রমযান ও রোযার গুরুত্ব অত্যাধিক । এপ্রসঙ্গে কুরআনে পাকের পাশাপাশি হাদীসে পাকেও আল্লাহর হাবীব রোযা পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। মহান রাবুল আলামীন ইরশাদ করেন ‘ফা-মান শাহিদা মিনকুমুশ শাহরা ফাল ইয়াছুমহু’ অর্থাৎ অত:পর তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে সে যেন ( সুস্থ থাকলে) অবশ্যই রোযা পালন করে। (সুরা বাকারা,১৮৫ নং আয়াত)।

তাই প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ-সবল সকল মুসলমানের উপর পবিত্র মাহে রমযানের রোযা পালন করা আবশ্যক এটাই নির্দেশ করে।

সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী জলীলুল কদর সাহাবীয়ে রাসূল (দ.) হযরত আবু হারায়রা রদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন-আল্লাহর রাসূল (দ.) ইরশাদ করেছেন-“যখন পবিত্র রমযান মাস আগমন করে তখন আসমানের সমস্ত দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অথবা রহমতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং (বিতাড়িত ও অভিশপ্ত) শয়তানদের শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। ( সহিহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

অপর এক হাদীসে পাকে মাহে রমজানের ফজিলত বর্ণনায় রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যখন রমযানের প্রথম রাত আগমন করে তখন শয়তানসমূহ ও অবাধ্য জিনদেরক শিকলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, অত:পর জাহান্নামের একটি দরজাও খোলা হয় না, জান্নাতের সমস্ত দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। এসময় একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন এ বলে ‘হে পূণ্যের অন্বেষণকারী! সামনে অগ্রসর হও! হে মন্দের অন্বেষণকারী থেমে যাও। আর আল্লাহ গাফুরুর রাহীম রমযানের প্রতিটি রাতেই অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করেন। (সহীহ জামে তিরমিজি ও সুনানে ইবনে মাজাহ শরিফ)

মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ, প্রিয়নবী (দ.) এবং মাহে ওসিলায় এই পরিস্থিতি থেকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ কে সুস্থ শরীরে সিয়াম সাধনার মাহে রমজান অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুক। আমিন

লেখক: মুদাররিস, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা ফাযিল মাদরাসা, ষোলশহর , চট্টগ্রাম ও খতিব মসজিদ-এ রহমানিয়া গাউসিয়া,অক্সিজেন, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত