ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

পাখির রাজা ফিঙে

  মোহাম্মদ মহসীন

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২১, ২১:১৭  
আপডেট :
 ০৭ মার্চ ২০২১, ২৩:১৯

পাখির রাজা ফিঙে
ফাইল ছবি

গাঁও গ্রামের পরিচিত পাখি ফিঙে। এই পাখিকে অঞ্চলবেঁধে হ্যাচ্ছা পাখি বলে চিনে বা ডাকে। এদের বিচরণ ক্ষেত্র মাঠে- ঘাটে, জলের ধারে, পুকুর পাড়ে। ফিঙে পাখি মানুষের কাছাকাছি উড়ে বেড়াতে বেশ পছন্দ করে। এরা পরিবেশ বান্ধব পাখি। মজার বিষয় হলো রাখালিরা যখন উন্মুক্ত মাঠে গরু, মহিষ ও ছাগল ছেড়ে দিয়ে আনমনা হয়ে বসে থাকে। তখন গবাদি পশুগুলো ঘাস খাওয়ার প্রতি মগ্ন থাকে। তখন ফিঙে পাখিরা পিঠে বসে উড়ে উড়ে ফড়িং, মৌমাছি, পিঁপড়া, ওলু পোকা, পতঙ্গ, মাজরা পোকা, মাকড়শা এবং পঙ্গপালের মতো ফড়িং, পোকামাকড় ধরে- ধরে খায়। আবার কৃষক যখন লাঙ্গলের হাল ধরে, এর পিছনে পিছনে ফিঙ্গে পাখি জড়ো হয়ে উন্মুক্ত শুঁয়োপোকাগুলো তুলে তুলে খাওয়ার দৃশ্যও অন্যরকম লাগে। পাখির রাজা ফিঙ্গে পাখি। এরা অন্যান্য পাখিকে সহ্য করতে পারে না। ফিঙে পাখির চরম শত্রু হলো কাক আর চিল।

এ প্রজাতিটি অনেক বড় পাখির প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য বেশ পরিচিত। এদের বাসার কাছে অন্য পাখি আক্রমণ করতে এলে, তাড়াতেও দ্বিধা করে না। তাই অনেক পাখি ফিঙে পাখির বাসা এড়িয়ে চলে। তাদের কিষানেরা ফসলের মাঠে শক্ত জাতীয় সুতা টানিয়ে ও বাঁশের শক্ত খুঁটি মাঠে জুড়ে দেয়। যাহাতে ক্ষতিকর অন্যান্য ক্ষতিকর পোকা মাকড়শা যাহাতে খেতে পারে। সবার কাছে যেমন তেমন আমার কাছে প্রিয় পাখি ফিঙে।

পৃথিবীতে প্রায় ২৩ প্রজাতির ফিঙে আছে এর মধ্যে বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির ফিঙে পাখি দেখা যায়। ক্ষীণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এই পাখির প্রাধান্য লক্ষণীয় যে, জানুয়ারি থেকে প্রজন্মের সময় পর্যন্ত গায়ের রঙ কোচ কোচে কালো রূপ ধারণ করে। এরে প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। গাছের খোড়লে বাটি আকৃতিতে বাসা তৈরি করে, ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩ থেকে ১৪ দিন। এর লেজসহ ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত কালো। কালোর ওপরে নীলাভ আভায় যেন মনোরম লাগে। এদের ঠোঁট ধাতব কালো, গোঁড়ায় সাদা ফোঁটা থাকে এবং পা কালচে। এদের অপ্রাপ্ত, বয়স্কদের পেটের ওপর থাকে সাদা দাগ। স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি একই রকম। অনেকে একে আক্রমণাত্মক পাখি হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ফিঙে পাখি সকালবেলা মধুর সুরে গান গেয়ে মন ভোলাতে পটু।

এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। তবে ক্ষীণ-পশ্চিম ইরান থেকে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা হয়ে পূর্ব চীন এবং ইন্দোনেশিয়া হয়ে জাপানের দুর্ঘটনাক্রমে শরণার্থী হয়ে যায়। এগুলি উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান এবং উত্তর পাকিস্তানের গ্রীষ্মের শরণার্থী হিসাবে পাওয়া গেলেও সিন্ধু উপত্যকা থেকে বাংলাদেশে এবং ভারত এবং শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, হংকং এবং চিনেও দেখা মিলে। মাজা কালো রঙ আর দু’ভাগ করা লেজ দিয়ে এরেকে সহজেই চেনা যায়।

গাঁও গ্রামে ফিঙে পাখির পরিধি বেশি দেখা গেলেও নগরে দেখা মিলে কম। তবে ফিঙে পাখিকে কখনো কখনো সঙ্গী ছাড়া একা একা বসে থাকতে বেশি দেখা গেছে। এ বিষয়ে অনেক ঘুরেফিরে প্রত্যক্ষ করেছি। এই প্রজাতির পাখি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি।

লেখক: প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক, প্রাবন্ধিক।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত