ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাংস্কৃতিক বীরযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫৩  
আপডেট :
 ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:০১

সাংস্কৃতিক বীরযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ
আলতাফ মাহমুদ

বাংলাদেশের খ্যাতিমান সুরকার, সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের জন্মদিবস আজ। ১৯৩৩ সালে ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী থানার পাতারহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে বরিশাল জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন বি এম কলেজে। পরে তিনি আর্ট শেখার জন্য কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানেই তিনি গান গাইতে শুরু করেন। গানের তালিম নেন প্রখ্যাত ভায়োলিন বাদক সুরেন রায়ের কাছে। এসময় তিনি গণসংগীত গাইতে শুরু করেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় আসেন এবং ধূমকেতু শিল্পী গোষ্ঠীতে যোগ দান করেন। পরে তিনি সংস্থাটির সংগীত পরিচালক হন। ঢাকায় এসেই তিনি বিভিন্ন জায়গায় গণসংগীত পরিবেশন করে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করেন। এভাবেই তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ভাষ সৈনিক আলতাফ মাহমুদের অনন্য কীর্তি ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা আবদুল গাফফার চৌধুরীর কবিতা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটিতে সুর করা। এই গানটিতে প্রথম সুর করেছিলেন আর এক প্রখ্যাত সুরকার আব্দুল লতিফ। কিন্তু আলতাফ মাহমুদের সুরটি গৃহীত হয় এবং সেটাই এখন প্রচলিত আছে।

১৯৫৪ সালে তিনি ভিয়েনা শান্তি সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ পান। ভিয়েনায় যাওয়ার জন্য তিনি করাচি যান। পাকিস্তান সরকার তার পাসপোর্ট আটকে দেয়ায় তার আর ভিয়েনা যাওয়া হয়নি। তিনি তখন করাচিতেই অবস্থান করেন এবং ওস্তাদ আব্দুল কাদের খানের কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেন। এছাড়া তিনি প্রখ্যাত নৃত্য পরিচালক ঘনশ্যাম ও সংগীত পরিচালক দেবু ভট্টাচাযের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।

১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। একে একে উনিশটি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্যায়সে কাহু, কার বউ, তানহা, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, দুই ভাই, সংসার, আঁকাবাঁকা, আদর্শ ছাপাখানা, নয়নতারা, শপথ নিলাম, প্রতিশোধ, ক খ গ ঘ ঙ, কুচবরণ কন্যা, সুয়োরানী দুয়োরানী, আপন দুলাল, সপ্তডিঙ্গা, জীবন থেকে নেয়া প্রভৃতি।

জীবন থেকে নেয়া আর এক শহীদ চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের অমর সৃষ্টি। বাংলা চলচ্চিত্রে এখনো যা মাইলফলক হয়ে আছে। এই চলচ্চিত্রে তিনি হামিং ব্যবহার করেন। যা ছিল তখনকার যুগে নতুন।

ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হলে আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত নিয়ে ক্রান্তিতে যুক্ত হন। উদীচী প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি উদীচীতে যুক্ত হন এবং সংগীত প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। আমৃত্যু তিনি উদীচীর উপদেষ্টা ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তি অংশগ্রহণ করেন। তিনি ক্র্যাক প্লাটুনের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তার ঢাকার রাজারবাগে আউটার সার্কুলার রোডের নিজ বাসায় গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। যুদ্ধ চলাকানীন সময় এই দিনে (৩০ আগস্ট) আলতাফ মাহমুদকে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। নির্মম অত্যাচার করে তাকে হত্যা করা হয়।

বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার কারণে ১৯৭৭ সালে আলতাফ মাহমুদকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। সংস্কৃতিক্ষেত্রে অসামান্য আবদান রাখায় শহীদ আলতাফ মাহমুদকে ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে আলতাফ মাহমুদ অংশগ্রহণ করেছেন মহান ভাষা আন্দোলনে। যোগ দিয়েছেন স্বধীনতা সংগ্রামে, চূড়ান্ত পর্বে সশস্ত্র যোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও তার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন দেশ তিনি দেখে যেতে পারেননি। রাজাকার আলবদর বাহিনীর পরামর্শে ধরে নিয়ে গিয়ে দেশবরেণ্য এই সাংস্কৃতিক যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। তার স্মৃতির প্রতি, কর্মের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত