ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম

  মনির হোসাইন

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২২, ২০:০৩  
আপডেট :
 ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৪:০৫

ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম
ছবি: সংগৃহীত

ফুসফুস মানুষের এমন একটি অঙ্গ যা শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই শ্বাসযন্ত্রটির প্রধান কাজ হলো বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেয়া এবং রক্তপ্রবাহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা। ফুসফুসের সামান্য ক্ষতিতে মানুষের শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সারও। তবে ফুসফুসের রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে ধূমপান। ধূমপানের প্রভাবেই সংক্রমিত হয় ফুসফুস।

১৯৫০ সালে রিচার্ড ডল নামক বিজ্ঞানী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ধূমপান ও ফুসফুস ক্যান্সারের একটি সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। এর ঠিক চার বছর পর ১৯৫৪ সালে চল্লিশ হাজার ডাক্তারের বিশ বছর ধরে করা ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি নামক আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় যে, ধূমপানের ফলে ফুসফুস ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পায়।

ধূমপানের কারণে এর মধ্যস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান যেমন কার্বন মনোক্সাইড, সাইয়ানাইড প্রভৃতির সংস্পর্শে দীর্ঘদিন থাকার ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফুসফুসের অ্যালভিওলাই এর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে এমফাইসিমা নামক রোগ হয়। অ্যাক্রলিন নামক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থও ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহে ভূমিকা রাখে।

ফুসফুসের সংক্রমণে ধূমপানের প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সাথে কথা বলেন, স্বনামধন্য বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. রাজীব কুমার সাহা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনির হোসাইন।

ফুসফুসে ধুমপানের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. রাজীব কুমার সাহা বলেন, ধূমপান আমাদের সবার জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে আমাদের ফুসফুসের জন্য। এই ক্ষতির দিকগুলো কি কি জানতে পারলে আমরা সচেতন হতে পারবো। ধুমপান করলে ফুসফুসের যেটা হয় যে, ফুসফুস দীর্ঘদিন ক্ষত হতে হতে ব্রঙ্কাইটিস রোগ হয়। আর কারও একজনের ব্রঙ্কাইটিস হয়ে গেলে তার ফুসফুসকে আর আগের অবস্থায় আনা সম্ভব হয় না। তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্রঙ্কাইটিস এর ওষুধ খেতে হয়।

ডা. রাজীব ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ উল্লেখ করে বলেন, ব্রঙ্কাইটিস সাধারণ ঠান্ডা কাশির মত নয়, এতে আক্রান্তদের দীর্ঘমেয়াদি কাশি থাকবে, দিনের যেকোনো সময়ে হতে পারে এ কাশি এবং সাধারণ ওষুধ খেলে কাশি ভালো হতে চায় না। ব্রঙ্কাইটিস রোগ একবার হয়ে গেলে এরপর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। দেখা যায় আক্রান্ত ব্যাক্তি সিঁড়ি বেয়ে একটু উঠলেই এবং একটু হাঁটাহাঁটি করলেই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, এমন সমস্যা হলে সাধারণত মানুষ হাঁপানি রোগ মনে করে থাকে। তবে এটি হাঁপানি নয়, এগুলোকে আমরা ব্রঙ্কাইটিস বলে থাকি এবং এর মূল কারণ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ধূমপান করা।

ডা. রাজীব কুমার বলেন, যদি কেউ দৈনিক এক প্যাকেট করে সিগারেট টানা আট থেকে দশ বছর খায় তাহলে তার ব্রঙ্কাইটিস রোগ হয়। এবং ফুসফুসে ধূমপানের আরো একটি মারাত্মক প্রভাব হচ্ছে নিয়মিত ধূমপানে হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার।

ধূমপানের ভয়বহতা উল্লেখ করে ডা. রাজীব কুমার সাহা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সার অধূমপায়ীদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ জটিল এবং ধূমপায়ীদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

সবশেষে ব্রঙ্কাইটিস ও ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে তিনি বলেন, প্রথমেই আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে, সেইসাথে তামাক জাতীয় দ্রব্য, জর্দা জাতীয় জিনিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলেই ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকা সম্ভব।

আপনার সচেতনতায় বেঁচে উঠতে পারে আপনার পরিবার। কারণ ধূমপানে আপনি আপনার পরিবারকেও সংক্রমিত করছেন। তাই আসুন ধূমপান ত্যাগ করুন, নিজে সুস্থ থাকুন পরিবারকে সুস্থ রাখুন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক:

ডা. রাজীব কুমার সাহা

মেডিসিন এন্ড চেষ্ট স্পেশালিস্ট

এবং ইন্টারভেনশনাল পালমনোলজিস্ট

কনসালটেন্ট-রেসপিরেটরি মেডিসিন

আজগর আলী হাসপাতাল, ঢাকা

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত