ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

জলের জিপসি ও কালাচাঁন

  শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:২৪

জলের জিপসি ও কালাচাঁন

রাতের ঘুম ভাঙছে। মরাগাঙের উপর দিয়ে কচুরিপানা ছুটছে বড় নদীর দিকে। শীতের ভাব না আসলেও কচুরিপানার নিচের জল বারোমাসই হিম থাকে। মাছের খোঁজে জলের সাথে সারারাত কাটায় কালাচাঁন। মাছ শিকারে জাল আর বরশি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। মাছের দৌড় দেখলে আর তর সয় না; ফাল দিয়ে জলের উপর জাল উড়িয়ে দেয়।

জোয়ান পোলা সে। বাবা-মায়ের বয়স হইছে। বাবা লালন মিয়া সাত সাতটা বিয়ে করেছে। সপ্তাহে একদিন বউয়ের কোষায় পা রাখে। কামাই-টামাই করে না। বরং বউদের আদর যত্নে দিন কাটায় সে। বড় বউ ডালিয়া বানু। তার বড় ছেলে কালাচাঁন। সংসারের ভারবোঝা তার মায়ের কাঁধেই ছিল। মা ডালিয়া বানু গেরাম করে আসার সময় ব্লকের উপর উঠতেই পা মছকে গেছিল। সেদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নৌকায় ওঠে সে। সারারাত যন্ত্রণায় কাঁপছিল। সকালবেলা দেখে কলার থোঁড়ের মতো পা ফুলে গেছে। লতাপাতা দিয়ে ভাঙা পা বেঁধে রেখেছে কিন্তু কাজ হলো না। সারতে মেলাদিন চলে যাবে। কতদিন লাগবে তাও তার জানা নেই।

সংসার সামলানোর দায় নিয়ে নৌকার বৈঠায় বসেছিল কালাচাঁন। ভেতরে ছোট ছোট দু’মেয়ে নিয়ে ডালিয়া বানু ঘুমিয়ে পড়ছে। সারারাত মাছ ধরায় কালাচাঁনের চোখে ঘুম নেই। ঘুম হয়নি তাতে কী? মাছতো ধরা পরছে। সে খুশিতে টগবগ করে তার মন। সময়টার বেশ কদর। যেমন জল নামার মৌসুম তেমনি মাছ নামারও সময়। বর্ষাজলে উঠানের মাটি হাতর ও খাল হয়ে নদীতে নামে। সে উর্বর মাটিতে চিকচিক করে দূরের টাওয়ার। সেখানে বাবুসাবদের আরামঘর। তাদের আমিষ জোগান দেয় কালাচাঁন। জলের গিঁটে ধড় নড়ে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয় হেলায় দিন পার করলে কী আর চলে? সে হিসাবে ঠাহর আছে কালাচাঁনের। কাম না করলে খাওন জোটে না। তাই সে ঢুলতে ঢুলতে পাড়ের দিকে নৌকা হাঁকায়।

সারি সারি নৌকা। বড় বাড়িতে যেমন ঘরের পরে ঘর থাকে। এগুলোও দেখতে সেরকম ঘর। ইশা বলতে পূর্ব পশ্চিমের সারি সারি নৌকা। তারা বৈঠায় বৈঠায় ঘা মিলিয়ে বসবাস করছে। কালাচাঁনও তাদের পাড়ার ছেলে। বেহুদা সময় নষ্ট করে না; কাজেকর্মে বেশ মনোযোগ তার। এখনতো কাঁধে সংসারের দায় তাই কাজ থেকে মন সরে না। আগে সে মায়ের সাথে গেরামে বের হতো। এখন রাতভর নদীতে কাটায়। তাতে খাওনের জোগাড় এবং চাল ডালেরও টাকা মেলে তার।

মাঝনদীতে তার নৌকা। কচুরির ফাঁকে ফাঁকে জাল উড়ায়। কোনো খেপই খালি যায় না। আজ অনেক মাছ ধরা পড়ছে। মনটা বেজায় ফুরফুরে। সারারাত মাছ ধরে তার চোখ লাল হয়ে উঠেছে। মনে সুখ খিলখিল করছে। মনে সুখ থাকলে গান উতলে ওঠে। নৌকা ভিড়াতে ভিড়াতে মনের সুখে গান ধরেছে সে। দুই বছর আমার লগে প্রেম করিয়া তুই নাকি ময়নারে করবি বিয়া, কেমন সইমু আমি এই জ্বালা -বলিয়া গলা উচিয়ে ধরে। পাশ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে বালির ট্রলার। ঢেউয়ে বারবার জেপসিদের নৌকাগুলো লাফিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে আরো জোরে ধাক্কা লাগলে তাদের কোষা উঠে যাবে জলের পেঠ থেকে ডাঙার পিঠে। ট্রলারের উৎপাতে নদী মলিন হতে শুরু করেছে। নদী তাদের দখলে চলে গেলে আড়াইশ বছরের বসতও হারিয়ে যাবে। লালন মিয়ারে চেয়ারম্যান সাব একদিন ডেকে বলছিল, অন্য কাম ধর। এখানে বেশিদিন থাকতে পারবি না। কালাচাঁন ডাঙার মানুষের সাথে মিশতে থাকে। তার সাথে সাথে অনেকেই এখন ডাঙার কাজ করে।

ট্রলারের উৎপাত বেড়েই চলছে। কালাচাঁন পাড়ায় ফিরছিল। পেছনে কয়েকটি ট্রলার আসছে দেখে মনে হচ্ছে পেছনে কেউ তাদের ধাওয়া করছে। কালাচাঁনের নৌকা লাফিয়ে ওঠে। তার নৌকার ধাক্কায় পাশের নৌকাও লাফিয়ে ওঠে। চোখ কচলাতে কচলাতে ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ঢাঙর মেয়ে। চিৎকার দিয়ে বলল, জোয়ান ব্যাটা; এলা চোহে দেহ না। কালাচাঁন কাঁচুমাচু খেয়ে বললো এলা বইন খেয়াল করি নাই। নেশা হরছো, চোহে দেহ না মিয়া! কালাচাঁন তার থেকে চোখ ফিরাতে পারল না। মনে আসলেই নেশা ধরছে, বরং ইচ্ছা করেই ছোট ছোট ধাক্কা দিতে লাগল। যতবার ধাক্কা লাগে ততবারই তার শরীর কেঁপে উঠে। কালাচাঁন কাছে বৈঠা ভিড়িয়ে বললো তোমার নাম কি-লা? নাম দিয়া কাম কী, যাও! সর্দার ডাহুম তাড়াতাড়ি পার অও। নাম কও তারপরই চইলা যামু, কওনা! চাঁদনী... চাঁদনী বলে সে নৌকার ভিতরে ঢুকে গেল। কালাচাঁন উঁকি দিতে দিতে সামনে এগিয়ে গেল।

চাঁদনী চঞ্চল মেয়ে। জলপাড়ার দু’চারটে ছেলে ছলেকলে কথা বলতে চায়। নাম জানতে চায়, কিন্তু সে সাড়া দেয় না। মা গেরাম করে, মেয়ে সংসার সামলায়। নৌকায় থেকে সে ছোট ছোট ভাইবোনদের সামাল দেয়। কালাচাঁনের ধাক্কায় তার মায়ের ঘুমটাও ভেঙে গেল। চাঁদনীর গলার আওয়াজে একবার গলা উঠিয়েছিল। কিন্তু চাঁদনী কিছু না বললে আবার চোখ নামিয়ে তার মা গোঙরাতে লাগল। চাঁদনী চুলায় চাল বসায়।

পূর্ব পশ্চিমে নদীর মুখ। পূব দিকে সূর্য উঠে আলো ঠিকরে পড়ছে পশ্চিমে। সে মাটির চুলায় আগুন ধরাতে বৈঠায় উরু গাড়ল। পূবে সূর্যের ত্যাজ। তার গা ছিমছিম করছে। চুলগুলো সোনালি বর্ণের। পার্লারের কালার নয় রোদের তাপেই তার চুলের বর্ণ এমন হয়েছে। শ্যামল রঙের মুখে লাবণ্যমাখা হাসি লেপটে গেল। নদী থেকে পাড়ায় ফেরার প্রথম নৌকা তাদের। তাই যে কারো চোখ পড়ে তাদের নৌকার উপর। গত কয়দিন আগে খোকন নৌকা নিয়ে ফিরছিল। চাঁদনীকে দেখে বলছিল, চল ডাঙায় ঘুরে আসি। চাঁদনী সর্দারের ভয় দেখালে মুখ থামিয়ে বলল, দোহাই লাগে, মাঝহানে সর্দার টানো ক্যালা। সর্দার কী বিয়া হরে নাই। চাঁদনী মাছ কুটার বটি উছিয়ে বলছিল গেলি, আবার চোখ ঠাপালে গলা টান দিমুলা তহন বুঝবি। সেদিন থেকে সে তার উপর ঘন ঘন নজর দিতে থাকে কিন্তু কিছু বলে না।

কালাচাঁন পাড়ে ভিড়ে। কাপড়চোপড় ছেড়ে মাছের ঢুলা নিয়ে শহরে পা বাড়ায়। নানান জাতের মাছ দেখলে যে কারো চোখ পড়বে। হাঁটতে হাঁটতে শহরের কান্দায় এলো সে। সাহেব তারে ডাক দিলো। সে দাম হাঁকাল এক হাজার টাকা। তাতে আটশ টাকায় রফা হয়ে গেল। কালাচাঁন মাছ বিক্রি করে হাসতে হাসতে পাড়ায় ফিরছিল। তাদের পাড়ায় ফিরতে হলে আরেকটি পাড়া পড়ে। সেখানে থাকে রুপালি। রুপালিকে সে অনেক ভালোবাসত, বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিল। নিয়তি নিঠুর। কোষা ছিল না তাই সেই প্রস্তাব ফেরত দিয়েছিল রুপালির মা। সে কালাচাঁনকে পছন্দ করে না। তখন বেকার ছিল, বয়সও কম। সংসারের অবস্থাও বেহাল। তাই মনের দুঃখ মনে মনে আঁটিয়ে রুপালিকে পরের কাছে উঠিয়ে দেয়।

কালাচাঁদ জানে বিয়ে করতে চাইলে বউ রাখনের কোষা লাগে। কোষা না থাকলে বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ের প্রধান শর্ত কোষা। কোষা না হলে বাসা বাঁধব কোন ডেরায়। রুপালির বিয়ের আয়োজন হলে কালাচাঁন তার বিয়েতে খেটেখুটে দেয়। বিয়ের পর থেকে সে ভালো আছে। তার সুখের সংসার। কালাচাঁন কোষায় ফেরার পথে চায়ের দোকানে রুপালির সাথে দেখা, রুপালি কথা কয় না বরং না দেখার ভান করে। কালাচাঁন নিজেকে সামলাতে পারে না। পায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, রুপালি কি হইল, আমারে চিনোচ না লা, আমি কালাচাঁন তোঁয়ার বান্ধব। রুপালি পান চিবোতে চিবোতে পাড়ায় চলে গেল।

কালাচাঁন পাড়ায় ফিরে, মনে মনে রুপালি ও চাঁদনীকে জপতে লাগল। কে ভালা! জপে কী লাভ! রুপালি ভুলে গেল। চাঁদনী কী তাকে পাত্তা দিবে? দম ধরে মান্দার গাছের গোড়ায় বসে রইল সে। হঠাৎ মনে হলো চাঁদনী তাকে ফিরাবে না। আর ফিরাবে কেন। সে এখন দৈনিক আয় করে। বিয়ে করতে কোষা লাগবে। কোষা কেনার টাকা জোগাতে কয়দিন লাগবে। মনে মনে ঠাহর করল, রাতে নদীতে দিনে উপরে কাম করে কোষা কিনবে। এভাবে কাজ করলে তার কতদিন আর লাগবে।

মান্দার গাছের গোড়া থেকে উঠে দাঁড়াল কালাচাঁন। চোখ গেল পূবের দিকে। চাঁদনীর লাল জামাটা দূর থেকে দেখা গেল। তাদের সামনে আরেকটি নৌকা ভিড়ছে কিন্তু এ নৌকা সকালেও সে দেখেনি। তাহলে সেটা কার নৌকা। কালাচাঁন দৌড়ে এলো। দেখে ওধারের নৌকায় খোকন। চাঁদনী বারবার তাকে তেড়ে যাচ্ছে। কালাচাঁন খোকনের নৌকায় লাফিয়ে উঠল এবং হারামিরবাচ্চা বলে তাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। চাঁদনী হা করে তাকিয়ে রইল। কালাচাঁন খোকনকে শাঁসিয়ে বলল, ভালায় ভালায় এধার থেকে নৌকা ছাড়! নইলে তোরে খাইছি। খোকন জলে ভাসতে ভাসতে বলল, আর মাইরনা কালাচাঁন, এহনই চইলা যামু। খোকন হাঁফাতে হাঁফাতে নৌকায় উঠে চলে গেল। কালাচাঁন বললো চাঁদনী সাবধানে থাইক্যো লা, দিন-টিন ভালা না। চাঁদনী কালাচাঁনকে ডেকে বলল, তুমি লা আমার জন্য এমন কর ক্যান! কালাচাঁন হাসতে হাসতে চলে গেল। তার মেছতা শরীরের মাঝে দাঁতগুলোই কেবল চকচক করতে লাগল।

বিকেলের ক্লান্ত রোদ। শহরের যুবক যুবতিরা ভিড় করছে নদীর পাড়ে। চাঁদনী থালা বাসন ঘসতে ঘসতে তাদের দিকে তাকাল। তাদের খুঁনসুঁটি দেখে কালাচাঁনকে মনে করতে লাগল। তার কাঁধে সে মাথা রাখতে পারত। কত ভালো লাগত তার। সে সুযোগ কী বেদে মেয়েদের থাকে। ভাবতে ভাবতে দখিনা বাতাসে হা করে তাকিয়ে রইল। আহ! অলক্ষ্মী ভর করছে। চুলাটা নিভে গেল। তার মা দেখলে চেঁচামেচি করত, ভাগ্য ভালো সে গেরামে গেছে। চুলায় চোং দিয়ে ফুঁ দিতে লাগল। আগুন জ্বলে উঠল, তার মা নৌকায় পা রাখল। কিরে মা কি করছ লা। ঝাঁপি নৌকার ভেতরে নিয়ে গেল। চাঁদনীর মন কালাচাঁনের নৌকার উপর দিয়ে দৌড়াতে লাগল।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। ধীরে ধীরে নদীপাড় খালি হতে লাগল। পশ্চিমের লাল আভা সরে আকাশ সাদা হচ্ছে। সূর্য ছুটি নিয়ে চাঁদ ঝলসে উঠছে। নৌকার ভেতরে ছোট ছোট প্রদীপ। নদীতে চাঁদের আলো কচুরিপানার সাথে খেলা করছে। নদীর দু’পাশে শহর। মাঝখান থেকে শহরের আলো চিকচিক করছে। দু’শহরের বুক চিরে যে নদী সে নদীতে কালাচাঁনের জীবন ও যৌবন ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কালাচাঁন দিনরাত কাজ করছে। আজ পূর্ণিমার রাত মাছ ধরতে যাওয়ার সময় চাঁদনীর নৌকায় টোকা দেয়। সে মাথায় এগিয়ে আসে। চাঁদনী কালাচাঁনকে দেখে বলল, কোনে যাও লা, মাছ ধরতে লা! চাঁদনী মিষ্টি হেসে বলল, খেনেটেনে আমাগোরে মাছ দিতে হারো! দোয়া কইর লা! মাছ পাইলে দিতে কি আর! কালাচাঁন চাঁদনীকে কী বলতে ইশারা করল- চাঁদনী বলল, এহন যাও লা, পরে কথা কইমু। কালাচাঁন চাঁদনীর দিকে তাকাতে তাকাতে নৌকা উজানের দিকে ঠেলতে লাগল।

মরা গাঙ হলেও জল নামার মৌসুম। গেরামের খানাখন্দের জল নেমে যাচ্ছে। সাথে সাথে মাছও নামছে। তাই অনেকেই নদীর সাথে রাত পার করছে তাদের মধ্যে পাড়ার লোকই বেশি। কালাচাঁন তাদের একজন। সে চাঁদনীর নৌকায় ঠাহর করতে করতে এগিয়ে গেল এবং জাল ফেলল জলের উপর। নৌকা ঘুরে গেলে মাছ লাফাতে লাগল। মাছের লাফ-ফাল দেখে মনে হলো চাক পড়েছে। সে খুশিতে টগবগ করতে লাগল। মাছের ভারে জাল উঠাতে পারছে না তবুও দাঁত কিড়মিড় করে উঠাল। এতো মাছ সে কখনো পায়নি। জাল পেললেই মাছ। এত মাছ সামলাবে কী করে তাই পাড়ে ফিরে চাঁদনীকে ডাকে, চাঁদনী চাঁদনী... আগ বাড়ো। কালাচাঁনের স্বর গেঁথে রেখেছে সে। ডাক দেয়া মাত্র মাথা তুলে দাঁড়ায়, সাথে চাঁদনীর মা। কালাচাঁন সালাম দিয়ে বলল, খালা তোয়াঁর নৌকায় অল্প মাছ রাহি হকাল হকাল নিয়া যামু। রাহো না লা, তাতে কী হইব রাহো রাহো। চাঁদনী- কালাচাঁনরে জায়গা কইরা দে না লা। চাঁদনী অবাক হয়ে বলল, সে কি মা! তুমি তারে চিন। চিনুম না, লালন সর্দারের পোলা। কালাচাঁন দ্রুত নৌকায় উঠে মাছ রাখছে। চাঁদনী তাকে সাহায্য করছিল। কালাচাঁন হিসহিস করে বলল, চাঁদনী আই তোঁয়ারে কলিজায় বাইন্দা রাখমু। চাঁদনী মিটিমিটি হাসে। সে উঠে দাঁড়িয়ে চাঁদনীর মাকে বলে উঠল, খালা যাইগুন। দোয়া হইর আইজ নদীতে মেলা মাছ হরছে। হ রে কালচাঁন, দোয়া আছে যাও... যাও, তারাতারি আগ বাড়ো মাছের খেন যায়গুন। কালাচাঁন ঘুরে দাঁড়ালে চাঁদনির বাহুর সাথে পুবালি বাতাসে ডালভাঙার মতো হাতে ঘসা লাগল। কালাচাঁন নিজের নৌকায় উঠে সামনে বাড়ছে। চাঁদনী ও কালাচাঁন দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইল। নৌকার দূরত্ব বাড়তে লাগল। চাঁদের আলোও বাড়তে লাগলো। ট্রলারের ধাক্কায় কালাচাঁনের নৌকা উল্টে গেল। ট্রলারে বালির কান্দায় বসাছিল কুলি। সে মাস্টারকে বলল, সাব মনে হয় তলিয়ে গেছে। মাস্টার তাকিয়ে বলল, জিপসি... জিপসি। কুলি কিছুই বুঝল না বরং দেখল সকালের সূর্যের মত জলের রং। মনে মনে ভাবল গরিবের জীবনমূল্য জলের মত। চাঁদনী নৌকার বৈঠা থেকে কালাচাঁন কালাচাঁন বলে চিৎকার করতে লাগল।

জিপসিদের ঘুম ভেঙে গেল। কালচাঁনের খোঁজে চাঁদনী নৌকা বাড়াতে বাড়াতে নদীর পেটে চলে গেল। কচুরিপানার চাপ বেশি হঠাৎ দেখে কচুরি কুন্ডলির মধ্যে কী খচখচ করে উঠল। চাঁদনী ধীরে ধীরে নৌকা নিতে লাগল। দেখতে দেখতে কচুরির ভেতরে জায়গা খালি হয়ে গেল। সেখানে একটা মাথা দেখতে পেল এবং চারপাশে লাল জল। চাঁদনী কোমরে ওড়না বেঁধে দাড়াল এবং কালচাঁন কালাচাঁন বলে নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ল...

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত