গল্প: বশীকরণ
সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:১২ আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:২৪
দাড়িতে মেহেদি, চোখে সুরমা আর গায়ে সুতার কাজ করা সাদা পাঞ্জাবি চাপিয়ে বাসরঘরে ঢুকলেন হালিম শেখ। দরজায় খিল লাগাতে লাগাতে অনুচ্চ স্বরে গলা খাঁকারি দিলেন। তারপর আড়চোখে তাকালেন খাটে বসে থাকা নতুন বউয়ের দিকে। খাটের ওপর পরিষ্কার চাদরের বিছানা পাতা, তার ওপর দু’হাঁটুতে মাথা গুঁজে নিশ্চুপ বসে আছে নতুন বউ। হালিম শেখের সদ্য বিয়ে করা তৃতীয় স্ত্রী আম্বিয়া। আজ সন্ধ্যায় চানধরা গ্রাম থেকে বিয়ে সেরে হালিম শেখ নতুন বউকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
খাটের পাশে টেবিলে একটা লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। লণ্ঠনের হলুদ আলো নতুন বউয়ের পিঠে ছড়ানো কালো চুল আর ফর্সা পায়ের ওপর একটা কোমল আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কনের চুল থেকে ছড়ানো তেলের সুবাসে ঘরের বাতাসটা মৌ মৌ করছে। মিষ্টি ঘ্রাণটা কেমন যেন নেশা জাগাানো, বুকের ভিতর শ্বাস টেনে নিতে নিতে হালিম শেখ ভাবলেন।
ঘরে তার উপস্থিতি টের পেলেও নতুন বউ একবারের জন্যও মাথা তুলে তাকালো না। বিছানার এক পাশে বসতে বসতে হালিম শেখ ভাবলেন, মেয়েটি হয়তো খুবই লাজুক স্বভাবের, আর ভেবে খুশি হলেন যে লাজুক স্বভারের মেয়েরা লক্ষ্মী হয়।
-ছোট বউ, একটু ঝুঁকে আস্তে করে ডাকলেন হালিম শেখ। কোন সাড়া দিল না কিশোরী মেয়েটি।
-ছোট বউ, তোমার কী খুব পেরেশান লাগতেছে? হালিম শেখ নতুন বউয়ের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলেন।
-শইলে হাত দেবেন না। আচমকা কাঁধ ঝাঁকিয়ে তার হাত সরিয়ে দিল নতুন বউ। হালিম শেখ বেশ অপ্রস্তুত হলেন।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন- এত দূরের পথ এসেছো, তোমার বিশ্রাম দরকার। মনে হচ্ছে তোমার ঘুম ধরেছে। তুমি ঘুমায়ে পড়, আমি আলো নিভায়ে দিচ্ছি।
-আলো নিভাবেন না। দু’হাঁটুতে মাথা গুঁজে ক্ষুব্ধ স্বরে বলে উঠল নতুন বউ। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আবারো কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন হালিম শেখ। মেয়েটির হাবভাব বুঝতে চেষ্টা করলেন, তারপর গলা খাটো করে সোহাগ মাখা স্বরে বললেন, ঠিক আছে আলো নিভাবো না, তুমি ঘুমাও।
-আপনার ঘুমানোর কাম আপনি ঘুমান। আমারে ত্যাক্ত করবেন না, তেমনি ঝাঁঝালো স্বরে মেয়েটি বলল, আবারো শইলে হাত দিলে আমি কিন্তু চিৎকার দিয়া বাড়ি মাথায় তুলবো। আঁচলটা কাঁধের ওপর টেনে টুনে খাটের একপাশে সরে বসল সে।
নতুন বউয়ের আচরণে এবার বেশ বিব্রত হলেন হালিম শেখ। মেয়েটি খুব মেজাজি স্বভাবের ভেবে নিজেকে সংযত করলেন তিনি। এতক্ষণ যে নেশার ভাবটা তার মাথার ভেতর জ্বীব বের করে লক্ লক্ করছিল, সেটা সহসাই মিলিয়ে গিয়ে এক ধরণের আড়ষ্টতা তার শরীর মনকে নিস্তেজ করে দিতে থাকল। দিনভর ব্যস্ততা এবং হাঁটাহাঁটিতে তারও বেশ ক্লান্তি লাগছে। তিনি কথা না বলে বিছানার একপাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়লেন। ঘরের বেড়ার ওপাশ থেকে বড় এবং মেঝ বউয়ের ফিসফিস কথা ও খিক্ খিক্ হাসির শব্দ শুনতে পেলেন হালিম শেখ। তার এ রকম ধরাশায়ী অবস্থা দেখে দুই সতিন নিশ্চয় খুব উপভোগ করছে, সেটা ভেবে মনে মনে বেশ অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন! চোখ বুজে ঘুমের ভান করলেন, তবে ঘুম এলো না হালিম শেখের চোখে।
রাত বাড়ার সাথে সাথেলণ্ঠনের চিমনিতে কালির আস্তর আরো গাঢ় হলো। বাড়ির পেছনে ধানক্ষেতে পালা করে শেয়ালগুলো ডাকলো, উঠোনের আমগাছে ক’টা পেঁচা ত্বারস্বরে চিৎকার করলো আর নতুন বউ তার চুল আর দেহের সুবাসে সারাক্ষণ ঘরের বাতাস ভারি করে রাখল। হালিম শেখ আধো ঘুম আধো জাগরণে রাত পার করলেন। ফজরের নামাজের আজান হলে তিনি যখন বাসরঘর থেকে বের হলেন, তখনও নতুন বউ খাটের ওপর হাঁটুতে মাথা গুঁজে ঠায় বসে রয়েছে।
হালিম শেখ দুপুরের খাবার খেতে বসেছেন। এমন সময় বড় বউ কথাটা তার কানে তুলল। পাতে ভাত আর মাছের ছালন বেড়ে দিতে দিতে শেখের কানের কাছে মুখ নিয়ে বড় বউ বলল,
-নতুন বউয়ের ভাব সাব দেখে তো ভয় হচ্ছে মনে।
হালিম শেখ ভাতের লোকমা মুখে দিতে গিয়ে থামলেন। বড় বউয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা আঁচ করার চেষ্টা করলেন।
-মনে হচ্ছে, বড় বউ ফিস ফিস করে বলল, নতুন বউয়ের ওপর জ্বিনের আছর হয়েছে!
-কি করে বুঝলে?
-কেমন বেতমিজের মতো কথাবার্তা বলছে, বড় বউ ফিস ফিস করে বলল, একা একা বিড়বিড় করে কী সব বলছে, কখনও মুচকি হাসছে আবার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ফেলছে। হালিম শেখ কিছু বললেন না। তবে তাকে বেশ চিন্তিত দেখাল। চুপচাপ খাওয়া শেষ করলেন তিনি।
আছর নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম শাহাদত মুন্সীর কাছে নতুন বউয়ের আচরণ সম্পর্কে খুলে বললেন হালিম শেখ। শাহাদত মুন্সী বহুদিন থেকে গ্রামের মসজিদে ইমামতি করে আসছেন। টুকটাক ঝাড়-ফুঁকের চিকিৎসায় তার বেশ নাম-ডাক আছে এলাকায়। ইমাম সাহেব মনোযোগ দিয়ে হালিম শেখের কথা শুনলেন তারপর দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
-হালিম শেখ, তোমার বড় বউ ঠিক কথাই বলেছে। এসব জ্বিনে ধরার লক্ষণ। অল্প বয়েসি সুন্দরী মেয়েদের দিকে জ্বিনের নজর বেশি পড়ে। মনে হচ্ছে গ্রাম থেকেই জ্বিনটা নতুন বউয়ে সওয়ার হয়ে তোমার বাড়িতে ঢুকেছে।
-এ তো সর্বনাশের কথা! বাড়িতে জ্বিন ঢুকেছে আমি এখন কি করবো হুজুর? বেশ বিচলিত এবং অসহায়ভাবে হালিম শেখ ইমাম সাহেবের দিকে তাকালেন। চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করলেন মুন্সী, তারপর বললেন,
-তুমি দুশ্চিন্তা করিও না শেখ, আজ মাগরিবের নামাজের পর আমি তোমার বাড়িতে যাবো, জ্বিনটাকে গ্রামছাড়া করবো।
শীতের হালকা আমেজ নিয়ে হেমন্তের সন্ধ্যা নামল। অন্ধকার একটু গাঢ় হয়ে উঠতেই শেখের বাড়িতে জ্বিন তাড়ানোর আয়োজন শুরু হলো। মেজ এবং বড় বউ মিলে নতুন বউয়ের দুহাত একত্রে বেঁধে বিছানায় শুইয়ে দিল। প্রথমে প্রতিবাদ জানালেও দুই মহিলার শক্তির কাছে পরাস্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে বিরক্ত এবং অসহায় দৃষ্টি মেলে সবকিছু দেখতে থাকল কিশোরী মেয়েটি। ঘরের দরজা জানালাগুলো ভেতর থেকে এঁটে দেওয়া হয়েছে। খাটের পাশে একটা মাটির শানকিতে ধূপ জ্বলছে। তা থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উঠছে। ধূপের গন্ধে ঘরের বাতাস ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে।
বাইরে গলা খাঁকারির শব্দ হলে বড় বউ ঘোমটা টেনে দরজা খুলে দিল। সাদা পাঞ্জাবি, আর মাথায় টুপি চাপিয়ে শাহাদত মুন্সী ঘরে ঢুকলেন, সাথে হালিম শেখ। লোক দুটিকে দেখে বিরক্তি ভাব নিয়ে চোখ বুজে থাকল নতুন বউ। মুন্সী খাটের পাশে দাঁড়িয়ে অনুচ্চ স্বরে দোয়া দরুদ পড়তে থাকলেন। তারপর হাতে ধরা বাটির পানিতে ফুঁ দিতে দিতে নতুন বউয়ের শরীরে ছিটিয়ে দিতে লাগলেন। জলের ছিটায় তার চোখ, মুখ, চুল এবং পরনের শাড়ি ভিজে উঠল। একসময় অসহিষ্ণুভাবে নড়েচড়ে উঠল নতুন বউ। ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে চরম বিরক্তিতে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-জ্বিন তো আমারে ধরে নাই, আপনাদের ধরেছে। শাহাদত মুন্সী শেখের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস্ ফিস্ করে বললেন,
-শুনেছো, নতুন বউয়ের মুখ দিয়ে জ্বিনটা কথা বলছে!
মুন্সী আরো জোরে জোরে দোয়া কালাম পড়তে থাকলেন। তার ইশারায় বড় বউ শানকির কয়লার আঁচে দুটো শুকনো লঙ্কা পুড়িয়ে নতুন বউয়ের নাকে চেপে ধরল। পোড়া লঙ্কার ঝাঁঝালো গন্ধে তার দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড় হলো। আতঙ্কিত, বিস্ফারিত লাল দুচোখ বেয়ে টপ টপ করে জল পড়তে থাকল। যন্ত্রণায় সে হাত পা ছুড়তে ছুড়তে ডুকরে কেঁদে উঠল,
-আমারে ছাইরা দেও, আমি বাড়ি চলে যাবো। মেয়েটি নিস্তেজ, নিশ্চুপ হয়ে বিছানায় নেতিয়ে পড়লে বড় বউ তার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল, বউয়ের দাঁত কপাটি লেগেছে।
শাহাদত মুন্সী কাঁধের উড়ানি দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন, -খোদার অশেষ রহমত, মুসিবত বিদায় হয়েছে। ঘরের বাইরে এসে পাঞ্জাবির পকেট থেকে কালো সুতোয় বাঁধা একটা মাদুলি বের করে শেখের হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন,
-এটা নতুন বউয়ের হাতে বেঁধে দেবে। নতুন বউয়ের মনে তোমার জন্য আশনাই হবে, বউ বশে থাকবে।
হালিম শেখ ভক্তি ভরে তাবিজটা নিয়ে পকেটে রাখলেন।
সেই রাতে নতুন বউয়ের শরীর পুড়িয়ে জ্বর এলো। মূর্ছা গেল বারবার। জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকতে থাকল। পরবর্তী তিনদিন জ্বর ছাড়ার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। মেয়েটির অসুস্থতা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ির লোকদের উদ্বেগ বাড়ল, বাচ্চারা ভয়ে ভয়ে ঘরের দরজায় উঁকি ঝুঁকি মেরে জ্বিনে আছর হওয়া নতুন বউকে দেখতে থাকলো।
মেয়ের অসুস্থতার খরব পেয়ে গ্রাম থেকে ছুটে এলো নতুন বউয়ের মা ফরিদা বেগম। মেয়েকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল সে। আম্বিয়ার মুখে হাত বুলিয়ে বলল,
-মা রে, দু’দিনে এ কী চেহারা হয়েছে তোর?
আম্বিয়া কিছু বলল না, কেবল গভীর স্বস্তি আর নির্ভরতায় মায়ের কোলে মাথা গুঁজে চুপচাপ বসে থাকল। মা তার একমাত্র আদরের মেয়েটির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছলো বারবার।
-আচ্ছা মা, একসময় আস্তে করে আম্বিয়া তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমাকে এমন তাড়াহুড়ো করে বিয়া দিলা কেন? তার গলায় অভিমান ও হতাশার সুর।
-মা রে, আবারো আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে ফরিদা বেগম বলল, আমার বয়স হয়েছে। চোখে ছানি পড়েছে। কবে কখন তোর বাপের মতো দম ফুরিয়ে মরে যাবো- কে বলতে পারে? মরে গেলে তোকে দেখবে কে? একটু থেমে সে বলল, গ্রামের জোয়ান ছেলেপুলে দিন দিন যে রকম বখাটেপনা করছে তা দেখে আমার মনে ভয় ধরে গেছে। তাই মন্টু ঘটকের কাছে শেখবাড়ির প্রস্তাবটা পেয়ে আমার মনে হলো শেখদের বাড়িতে তুই ভালোই থাকবি। হালিম শেখ ভালো মানুষ। বনেদী গেরস্ত পরিবারের লোক। জমি জেরাত অনেক। গ্রামের লোকজন তাকে সম্মান করে।
-কিন্তু মা লোকটার যে অনেক বয়স। বিষণ্ণ গলায় আম্বিয়া বলল।
-তা ঠিক, ফরিদা বেগম মেয়েকে উদ্দেশ করে বলল, তবে সবাই বলেছে তার মনটা ভালো।
-লোকটার যে দুইটা বউ ঘরে, আম্বিয়ার গলায় অনুযোগ।
-শুনেছি সে বউদের সাথে ভালো ব্যবহার করে। ফরিদা বেগম বলল।
কোলে মুখ গুঁজে চুপচাপ তার কথা শুনল আম্বিয়া। মায়ের শরীর থেকে উঠে আসা পরিচিত ঘামের গন্ধটা বুকের ভেতর টেনে নিতে নিতে সে গভীর স্বস্তিতে চোখ বুজে থাকল। তারপর এক সময় আস্তে করে মা কে জিজ্ঞাসা করল,
-মা, মাহফুজ ভাই কেমন আছে?
-ভালোই আছে। একটু চুপ থেকে জানালো ফরিদা বেগম।
-সে কি এখনও মোড়লদের মুদি দোকানে কাজ করতেছে?
-শুনেছি গতকাল সে তার গ্রামের বাড়িতে গেছে। মায়ের কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আম্বিয়া। এ রকমটি যে ঘটতে পারে এই বিশ্বাস তার মনে অনেকদিন থেকে দানা বেধেছিল। সেই বিশ্বাসের আবেগ আর অনুতাপের মিশ্র অনুভূতিতে আম্বিয়ার গলা ধরে এলো। অনুচ্চ স্বরে সে বিড়বিড় করে বলল,
-মাহফুজ ভাই আমাকে বলেছিল আমার বিয়ে হয়ে গেলে সে গ্রাম ছেড়ে চইলা যাবে।
মেয়ের কথায় একটু চুপ করে থাকল ফরিদা বেগম তারপর কিছুটা রাগত স্বরে বলল,
-মোড়লের ব্যাটা বলেছে, মাহফুজ নাকি বিয়ে করতে বাড়িতে গেছে।
ফরিদা বেগমের কথা শুনে এবার ঝট করে মুখ তুলল আম্বিয়া। হতচকিত, বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে বলল,
-বিয়া করতে বাড়ি গেছে? সত্যি বলতেছ মা? ফরিদা বেগম মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
-কিন্তু সে তো আমাকে বলেছিল আমাকে না পেলে সে কোন দিন বিয়া করবো না।
ফরিদা বেগম দেখল আম্বিয়ার দু’চোখে গভীর বেদনার ছায়া, দু’চোখে জল টলমল করছে।
-মা রে, মেয়েদের মন জয় করার জন্য পুরুষ মানুষ কতো কথাই তো বলে, তাদের সব কথা কি বিশ্বাস করতে হয়? মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফরিদা বেগম বললো।
বুকের কষ্টটাকে চেপে মাথা নিচু করে নিশ্চুপ বসে থাকল আম্বিয়া। কিশোরী মেয়েটি সরল বিশ্বাসে তার পছন্দের লোকটির জন্য যে গভীর ভালোবাসার বরফ এতদিন তার হৃদয়ে জমিয়ে রেখেছিল তা যেন আজ ব্যথার অশ্রু হয়ে গলতে গলতে তার দুচোখ বেয়ে টপটপ করে ঝরে পড়তে লাগলো। মায়ের কোলে মুখ গুঁজে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকল আম্বিয়া। মেয়ের কষ্ট অনুভব করে ফরিদা বেগমের বুকটাও ব্যথায় ভরে উঠল। দুচোখ জলে ভরে এলো। মেয়েকে কোলের ভেতর টেনে নিতে নিতে ধরা গলায় সে বলল,
-মাহফুজের চিন্তাটা মন থেকে দূর করে দে মা। তোর মনে শান্তি আসবে।
মায়ের কথায় এতক্ষণ বুকে চেপে রাখা নিঃশ্বাসটা ফেলল আম্বিয়া। মনে হলো বুকের ভিতর জমানো ব্যথাটুকুু সে নিঃশ্বাসের সাথে বের করে দিয়ে বুকটাকে হাল্কা করার চেষ্টা করল।
ক’দিন পর হালিম শেখের মুখে গালভরা হাসি দেখে কিছু একটা আঁচ করতে পারলেন শাহাদত মুন্সী।
-নতুন বউয়ের খবর ভালো তো শেখ? উৎসুক হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। শেখের মুখের হাসি আরো বিস্তৃত হলো। গলা খাটো করে বলল,
-হুজুর, নতুন বউয়ের মন ভালো হয়েছে- ক’দিন থেকে কথাবার্তাও বলছে ভালো, মনে হচ্ছে আপনার দেওয়া তাবিজটা খুব কাজ করছে।
শাহাদত মুন্সী প্রীত হাসলেন। দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে আকাশের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে বললেন, সবই উপরওয়ালার ইচ্ছা!